Advertisement
E-Paper

সৌরমণ্ডলের বুক কাঁপিয়ে তীব্র গতিতে ধেয়ে আসছে দানব তারা

ধ্বংসের দিন কি কড়া নাড়ছে? কোনও ভয়ঙ্কর দুর্যোগের দিন কি আমাদের দোড়গোড়ায় এসে গিয়েছে? যে দিন বিশাল কোনও মহাজাগতিক বস্তুর আচমকা ধাক্কায় টালমাটাল হয়ে যাবে আমাদের সৌরমণ্ডল? ছিটকে এই গ্যালাক্সি থেকে বের করে দিতে পারে অন্যান্য তারা বা মহাজাগতিক বস্তুকে। দেখুন, নাসার ভিডিও।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ ১৪:৩১
যে ইনফ্রারেড তরঙ্গের জন্ম দিয়েছে জিটা ওফিউচি। ছাবি- নাসা।

যে ইনফ্রারেড তরঙ্গের জন্ম দিয়েছে জিটা ওফিউচি। ছাবি- নাসা।

ধ্বংসের দিন কি কড়া নাড়ছে?

কোনও ভয়ঙ্কর দুর্যোগের দিন কি আমাদের দোড়গোড়ায় এসে গিয়েছে?

যে দিন বিশাল কোনও মহাজাগতিক বস্তুর আচমকা ধাক্কায় টালমাটাল হয়ে যাবে আমাদের সৌরমণ্ডল? ছিটকে এই গ্যালাক্সি থেকে বের করে দিতে পারে অন্যান্য তারা বা মহাজাগতিক বস্তুকে।

থরথরিয়ে কেঁপে উঠবে আমাদের এই সৌর পরিবার?

যে ইনফ্রারেড তরঙ্গের জন্ম দিচ্ছে জিটা ওফিউচি। ছাবি- নাসা।

সে দিন নিমেষে উধাও হয়ে যাবে আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহের বায়ুমণ্ডল। আর শ্বাস-বায়ু থাকবে না বলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব বজায় রাখাটা রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়বে। বদলে যাবে এই সৌর পরিবারের সবক’টি গ্রহের কক্ষপথ। বদলে যাবে দিন-রাত আর বছরের হিসেব। বদলে যাবে তাদের ঋতু আর বায়ুমণ্ডল। গোটা সৌরমণ্ডলে শুরু হয়ে যাবে অসম্ভব উথালপাতাল।

দেখুন নাসার ভিডিও--

একেবারেই হালে নাসার স্পিৎজার স্পেস টেলিস্কোপ (এসএসটি) ও ওয়াইড-ফিল্ড ইনফ্রা-রেড সার্ভে এক্সপ্লোরার (ওয়াইজ) যে তথ্য ও ছবি পাঠিয়েছে, তাতে সেই আশঙ্কা রীতিমতো জোরদার হয়ে উঠেছে। নাসা জানাচ্ছে, ব্রহ্মাণ্ডে আমাদের ঠিকানা- ‘মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি’তে যে কোনও সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমাদের এই গ্যালাক্সিতেই অসম্ভব ঝোড়ো গতিতে ছুটে আসছে একটি দানবের চেহারার মতো তারা। যার নাম- ‘জিটা ওফিউচি’ বা ‘জিটা ওফ’। যাকে বলে ‘সুপারসোনিক গতি’। আমাদের গ্যালাক্সিতে এর আগে এত জোরে কোনও তারাকে ছুটতে দেখা যায়নি। কত জোরে, জানেন? ঘণ্টায় ৫৪ হাজার মাইল বা সেকেন্ডে ২৪ হাজার কিলোমিটার। অত জোরে ছুটতে গিয়ে সে যাকে বলে, লাথি মেরে হটিয়ে দিচ্ছে সামনে পড়ে থাকা অন্যান্য তারা, মহাজাগতিক বস্তু, গ্যাস বা ধুলোবালিকে। তার ছোটার পথের সামনে যাকে পাচ্ছে, তাকেই ফুৎকারে উ়ড়িয়ে দিচ্ছে আমাদের সূর্যের চেয়ে অনেক গুণ ভারী ওই তারা ‘জিটা ওফিউচি’। সমুদ্রে ঝোড়ো গতিতে ছোটার সময়ে যে ভাবে জলকে তুড়ি মেরেই সরিয়ে দেয় সর্বাধুনিক জাহাজ। গত সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি পেশ করা হয়েছে ফ্লোরিডার কিসিমিতে, আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির মাসিক সম্মেলনে। গবেষকদলের নেতৃত্বে রয়েছেন মার্কিন মুলুকের উইয়োমিং বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম চিক।

আরও পড়ুন-- মহাপ্রলয়ে ছিন্নভিন্ন গ্যালাক্সি, বেরোচ্ছে গরম গ্যাস, ছিটকে পড়ছে তারা

খোঁজ মিলল মিল্কি ওয়ের তৃতীয় বৃহত্তম ব্ল্যাক হোলের

দেখুন গ্যালারি- মহাকাশে আনাজ, সব্জি, ফুলের ক্ষেতে

কোনও যুদ্ধবিমান খুব নীচু দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় যেমন আমাদের বাড়ি-ঘরদোরের জানলা-দরজার কাচের শার্সি ঝনঝন করে ওঠে, তাতে চিড় ধরে আর পরে তা চুরচুর করে ভেঙে যায়, ঠিক তেমনি ভাবেই আমাদের গ্যালাক্সিতে ওই অসম্ভব ভারী তারার ‘সুপারসোনিক গতি’-র জন্য গোটা সৌরমণ্ডলের থরথরিয়ে কেঁপে ওঠার জোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই ঘটনাকে বলে, ‘বাও শক’। একটা অসম্ভব জোরালো তরঙ্গের অসম্ভব রকমের জোরালো ধাক্কা। যার চেহারাটা দেখতে অনেকটা ধনুকের মতো হয় বলে ওই ধাক্কার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাও শক’।

যে ইনফ্রারেড তরঙ্গের জন্ম দিচ্ছে জিটা ওফিউচি। ছাবি- নাসা।

একেবারেই হালে নাসার নজরে পড়া ওই অভিনব ঘটনা সম্পর্কে কী বলছেন বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা?

কলকাতার সত্যেন্দ্রনাথ বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেসের সিনিয়র প্রফেসর, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, ‘‘আমাদের গ্যালাক্সিতে এর আগে কোনও তারাকে এত জোরে ছুটতে দেখা যায়নি। আমাদের সূর্যও ছুটছে। কিন্তু তার গতি ‘জিটা ওফিউচি’-র কাছে একেবারেই নস্যি। ওই অসম্ভব জোরে ছোটার জন্য সে প্রচণ্ড শক্তিশালী তরঙ্গের জন্ম দিচ্ছে এই গ্যালাক্সিতে। যা অবলোহিত রশ্মির চেহারায় ধরা পড়ছে। সেই তরঙ্গ সামনে থাকা কণার স্রোত, গ্যাস তারা, ধুলোবালি আর অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তুকে সজোরে ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে। সরিয়ে দিতে গিয়ে সেগুলোকে অসম্ভব গরম করে দিচ্ছে। যে ভাবে কোনও রাস্তার ক্রসিংয়ে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ থাকলেও হঠাৎ কোনও গাড়ি ব্রেক চাপলে, তার পিছনের গাড়িগুলো এসে তার পিছনে একের পর এক ধাক্কা মারে, ঠিক তেমনি ভাবেই ওই তরঙ্গ এসে ধাক্কা মারতে পারে আমাদের সৌরমণ্ডলকে। অসম্ভব জোরালো সেই ধাক্কাটা। ধাক্কার জোরের ওপরেই নির্ভর করছে, তা কতটা টালমাটাল করে দেবে আমাদের সৌরমণ্ডল। তবে এত জোরালো তরঙ্গের একটা প্রভাব তো আমাদের গ্যালাক্সির সর্বত্রই পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে এই সৌরমণ্ডলের অনেক কিছুই বদলে যেতে পারে। বদলে যেতে পারে এই সৌর পরিবারের সবক’টি গ্রহের কক্ষপথ। বদলাতে পারে তাদের দিন-রাত আর বছরের হিসেব। বদলে যেতে পারে তাদের ঋতু আর বায়ুমণ্ডল। গোটা সৌরমণ্ডলে শুরু হয়ে যেতে পারে অসম্ভব উথালপাতাল। তবে সেই তরঙ্গের রেশ ফুরিয়ে গেলে আবার সব কিছু ফিরে আসতে পারে স্বাভাবিক অবস্থায়।’’

বেঙ্গালুরুর রামন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আরআরআই) প্রফেসর, ভারতে গ্যালাক্সি-গবেষণার অন্যতম জ্যোতির্বিজ্ঞানী বিমান নাথ জানাচ্ছেন, ‘‘একটা ঘটনা আমাদের খুবই ভাবিয়ে তুলেছে। তা হল, কেন এত হন্তদন্ত হয়ে, এত জোরে ছুটছে আমাদের গ্যালাক্সির অন্য তারাগুলো? কেন সুপারসোনিক গতিতে ছুটছে ‘জিটা ওফিউচি’? তা কি গ্যালাক্সি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে? গেলে, কোথায় তাদের গন্তব্য, এমন অনেক প্রশ্নেরই সদুত্তর মেলেনি এখনও।’’

star sun solar space speed
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy