Advertisement
E-Paper

শুধু হার্ট-ফুসফুসই নয়, মস্তিষ্কেও থাবা বসাচ্ছে দূষণের বিষকণা!

হার্টে, ফুসফুসে এর আগে মিলেছে। কিন্তু বায়ুদূষণের অসম্ভব বিষাক্ত ধূলিকণা যে একেবারে সরাসরি সিঁড়ি বেয়ে তরতরিয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছে যেতে পারে, তা এই প্রথম জানা গেল।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৪:২৯
মস্তিষ্কে দূষণের কণা (গোলাপি রং)।

মস্তিষ্কে দূষণের কণা (গোলাপি রং)।

হার্টে, ফুসফুসে এর আগে মিলেছে। কিন্তু বায়ুদূষণের অসম্ভব বিষাক্ত ধূলিকণা যে একেবারে সরাসরি সিঁড়ি বেয়ে তরতরিয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছে যেতে পারে, তা এই প্রথম জানা গেল। জানা গেল, আমাদের শরীরের সদর দফতর মস্তিষ্কে ওই বিষাক্ত ধূলিকণা পৌঁছে যাওয়ার বড় খেসারত দিতে হতে পারে অ্যালঝাইমার্স ডিজিজের মতো দুরারোগ্য কয়েকটি রোগে আক্রান্ত হয়ে।

মস্তিষ্কে যে অজৈব যৌগ পদার্থটির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার হদিশ মিলেছে, তার নাম আয়রন অক্সাইড। ‘ম্যাগনেটাইট’ও বলা হয়। লালচে-গোলাপি রঙের ওই আয়রন অক্সাইড যৌগটি অত্যন্ত বিষাক্ত ও ক্ষতিকর। তা মস্তিষ্কে স্নায়ুতন্ত্রের ইউনিট নিউরনের স্বাভাবিক কাজকর্মগুলিকে পদে পদে বাধা দেয়। আর সেই ভাবেই ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের নিউরনগুলিকে চির দিনের মতো অকেজো, পঙ্গু করে দেয়। ফলে, এক সময় হাত অবশ হয়ে পড়ে, পা অসাড় হয়ে পড়ে। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে যায়। বাকশক্তি হারিয়ে যেতে শুরু করে, শ্রবণশক্তিও। নিউরনগুলি ধীরে ধীরে অকেজো, পঙ্গু হয়ে যাওয়ার ফলে অ্যালঝাইমার্স, পারকিনসন্স ডিজিজের মতো দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে যথেষ্টই।


মস্তিষ্কে পাওয়া আয়রন অক্সাইড কণা। মাইক্রোস্কোপের নীচে।

ব্রিটেনের ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো-সায়েন্টিস্টদের সাম্প্রতিক গবেষণায় এই অভূতপূর্ব ঘটনাটি জানা গিয়েছে। গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে বিজ্ঞান-জার্নাল ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এ।

ঘটনা হল, আয়রন অক্সাইড অল্প পরিমাণে হলেও থাকে মস্তিষ্কে। ওই সামান্য পরিমাণ আয়রন অক্সাইড মস্তিষ্কের কাজকর্মকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু এ বার ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যে আয়রন অক্সাইডের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা পেয়েছেন মস্তিষ্কে, তা যে বায়ু দূষণের ধূলিকণা থেকেই এসেছে, সে ব্যাপারে কী ভাবে নিশ্চিত হলেন তাঁরা?


মস্তিষ্কে পাওয়া আয়রন অক্সাইড কণা। মাইক্রোস্কোপের নীচে।

মূল গবেষক অধ্যাপক বারবারা মেহের তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ল্যাঙ্কাস্টার শহরেই রয়েছে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। তারই আশপাশের রাস্তা থেকে বায়ুমণ্ডলে মিশে থাকা ধূলিকণার মধ্যে তিনি প্রচুর পরিমাণে পেয়েছিলেন ওই আয়রন অক্সাইডের কণা। তাঁর সন্দেহ হয়েছিল, ওই কণার হদিশ মিলতে পারে মস্তিষ্কেও। যা ভেবেছিলেন, তাই হয়েছিল। তাঁরা প্রচুর পরিমাণে আয়রন অক্সাইড কণার হদিশ পেয়েছেন কাছাকাছি এলাকার মানুষজনের মস্তিষ্কে। মস্তিষ্কের যে কোষগুলিতে তাঁরা ওই ম্যাগনেটাইটের হদিশ পেয়েছিলেন, সেগুলিকে তাঁরা রেখেছিলেন একটি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে। কারণ, চৌম্বক ক্ষেত্রের টানে আকৃষ্ট হয় ওই


মস্তিষ্কে পাওয়া আয়রন অক্সাইড কণা। মাইক্রোস্কোপের নীচে।

ম্যাগনেটাইট কণাগুলি। তাঁরা দেখতে চেয়েছিলেন, কত কণা জমে রয়েছে মস্তিষ্কের ওই কোষগুলিতে। তাতে তাঁরা দেখতে পান, মস্তিষ্কের এক গ্রাম ওজনের কোষ-কলায় অন্তত দশ লক্ষ ম্যাগনেটাইট কণা ঘোরাফেরা করছে। আর ওই সব কণাগুলির আকার-আকৃতিও একটু অন্য রকমের। সেগুলি এবড়োখেবড়ো নয়। প্রায় গোলাকার। কিন্তু মস্তিষ্কে স্বাভাবিক ভাবে যে সামান্য পরিমাণে আয়রন অক্সাইড কণা থাকে, তাদের চেহারা অতটা গোলগাল নয়। তাদের পিঠও এবড়োখেবড়ো। ফলে, ওই আয়রন অক্সাইডের কণা যে মস্তিষ্কে থাকা স্বাভাবিক ম্যাগনেটাইট কণা নয়, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যান গবেষকরা। মস্তিষ্কে হদিশ মেলা ম্যাগনেটাইট কণারা যে বায়ু দূষণের ধূলিকণা থেকেই এসেছে, সে ব্যাপারে গবেষকরা আরও বেশি নিশ্চিত হন ওই কণাগুলির আকার-আকৃতি দেখে। কারণ, ওই ম্যাগনেটাইট কণাগুলি অনেক বেশি গোলগাল আর মসৃণ হয়েছে বেশি তাপ আর বেশি চাপে। যা একমাত্র গাড়ির ইঞ্জিন বা ব্রেকিং সিস্টেম থেকেই তৈরি হতে পারে। গবেষকরা জানিয়েছেন, ওই ম্যাগনেটাইট কণার সঙ্গে মস্তিষ্কে জমে থাকা প্ল্যাটিনামেরও হদিশ পেয়েছেন তাঁরা। ওই প্ল্যাটিনাম কণা গাড়ির ইঞ্জিনের ক্যাটালিটিক ইনভার্টার থেকেই এসেছে বলে গবেষকদের জোরালো বিশ্বাস।

কণাগুলি খুব ছোট ছোট বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। কতটা? আমাদের চুলের ব্যাস ৫০ হাজার ন্যানোমিটার। চার চেয়েও অনেক অনেক গুণ বেশি পাতলা ওই ম্যাগনেটাইট কণাগুলি। ব্যাস মাত্র ২০০ ন্যানোমিটার।

এর আগের একটি গবেষণা জানিয়েছিল, ব্রিটেনে ফি-বছর গড়ে ৫০ হাজার মানুষ বায়ুদূষণ জনিত কারণে মারা যান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, ফি-বছর বিশ্বে গড়ে ৩০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় বায়ুদূষণ জনিত কারণে।

আরও পড়ুন- শেষে হেরেই গেলেন উসেইন বোল্ট?

Brain Pollution Particle UK Pollution particles 'get into brain'
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy