Advertisement
E-Paper

রোবট এবার পেন দিয়ে লিখবে, তুলির টানে ছবি আঁকবে নিজের মর্জিতে!

একটা শিশু যেমন তার পরিবেশ-পরিপার্শ্ব থেকে কথা বলা শেখে, আচার-আচরণ, আদব-কায়দা শেখে, এই রোবট-হাতের পাঁচটি আঙুলও তেমন নিজেরাই নিজেদের চালাতে পারে। কখন, কোথায়, কতটা আঙুলগুলোকে বাঁকানো, হেলানো, এগনো, পিছনো, গোটানো, ফোলানো দরকার, তা সে নিজেই বুঝতে পারে। পাঁচ-পাঁচটা আঙুল নিয়ে এই রোবট-হাত নিজেকে আমাদের হাতের মতোই মুড়তে পারে।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৬ ১১:০০

কে বলল, রোবট শুধুই ‘আমরা যেমন বলি, তেমন বলে’- যান্ত্রিক?

রোবট শুধুই শেখানো বুলি আউরে যাওয়া ‘তোতা’?

কে বলল, রোবটের নিজের ‘বুদ্ধিশুদ্ধি’ নেই? মগজ নেই?

মানুষ তাকে যেমন চালায়, শুধু কি তেমনই চলে রোবট?

গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে রাঁচির ছেলে বিকাশ কুমার দেখিয়ে দিলেন, রোবট নিজের মতো ভাবতে পারে! নিজের ‘চালে’ চলতে পারে! দেখে-ঠেকে শিখতে পারে! বুঝতে পারে, উপলব্ধিও করতে পারে, কখন, কোথায় তার কী রকম চাল ও চলন দরকার!

রাঁচির ছেলে বিকাশ কুমার একেবারেই হালে বানিয়ে ফেলেছেন একটি ‘রোবটিক হ্যান্ড’। রোবট-হাত। একেবারে আমাদের হাতের মতোই। তারও পাঁচটি আঙুল। কিন্তু সেই রোবটের পেটে কাগজের পর কাগজ ঠেসে (পড়ুন- প্রোগ্রামিং) তাকে মানুষের ‘তোতা’ বানাতে হয়নি!

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং-এর গবেষক বিকাশ কুমারের গবেষণাপত্রটির নাম- ‘দিস ফাইভ-ফিঙ্গার্ড রোবট হ্যান্ড লার্নস টু গেট আ গ্রিপ অন ইট্‌স ওন’। আগামী সপ্তাহে সেই গবেষণাপত্রটি পেশ করা হবে ‘রোবোটিক্স ও অটোমেশান’ সংক্রান্ত আইইইই ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে।


আঁকড়ে ধরার জন্য নিজেই আঙুল ভাঁজ করছে রোবট-হাত!

একটা শিশু যেমন তার পরিবেশ-পরিপার্শ্ব থেকে কথা বলা শেখে, আচার-আচরণ, আদব-কায়দা শেখে, এই রোবট-হাতের পাঁচটি আঙুলও তেমন নিজেরাই নিজেদের চালাতে পারে। কখন, কোথায়, কতটা আঙুলগুলোকে বাঁকানো, হেলানো, এগনো, পিছনো, গোটানো, ফোলানো দরকার, তা সে নিজেই বুঝতে পারে। পাঁচ-পাঁচটা আঙুল নিয়ে এই রোবট-হাত নিজেকে আমাদের হাতের মতোই মুড়তে পারে।

এত দিন অনেক কিছুই পারত রোবট। মহাকাশ অভিযানে গিয়ে নানা রকমের জটিল কাজ সেরে ফেলতে পারত। পারত ‘রুবিক কিউবে’র ঝটপট সমাধান করে ফেলতে। এমনকী, বানাতে পারত প্যানকেকও। কিন্তু লিখতে-আঁকতে গেলে আমাদের যে দু’-তিন আঙুলে পেন, পেন্সিল, তুলি ধরতে হয়, এত দিন রোবট তা ধরতে পারতো না। ধরতে জানত না। পেন, পেন্সিল, তুলিকে মুঠোয় শক্ত করে ধরেও রাখতে পারত না রোবট।

এ বার লিখবে, ছবি আঁকবে রোবট-হাত?

কিন্তু রাঁচির বিকাশ এমন একটা রোবট-হাত বানিয়ে ফেলেছেন, যা খুব শক্ত করে পেন, পেন্সিল, তুলি ধরতে পারে। আমাদের হাত যেমন বাঁকানো-চোরানো, মোচড়ানো যায়, সেই রোবট-হাতও তা অবিকল করতে পারে (হ্যান্ড ম্যানিপুলেশান)। শুধু তাই নয়, আমাদের হাত অনায়াসে আর যা যা করতে পারে, বিকাশের বানানো রোবট- হাত করতে পারে তার সব কিছুই। আর সে সব তাকে বাইরে থেকে কোনও ‘কমান্ড’ পাঠিয়ে করাতে হয় না। কখন, কী করতে হবে, সেটা সে নিজেই বুঝে করে উঠতে পারে। চলতে পারে তার নিজের মর্জিমাফিক। আমাদের ওপর তাকে নির্ভর করতে হয় না বিন্দুমাত্র। আমরা যেমন একটা টেস্ট টিউব হাতে নিয়ে তাকে নাড়াতে-দোলাতে পারি, তেমনই ওই রোবট-হাতও তার খেয়ালখুশি মতো টেস্ট টিউবকে নাড়াতে-ঘোরাতে পারে।

কী ভাবে নিজের মর্জিতে চলছে রোবট, দেখুন ভিডিও।

এমন রোবট-হাত কি বিশ্বে এই প্রথম? কেন?

ওয়াশিংটন থেকে বিকাশের দাবি, ‘‘হ্যাঁ, এই প্রথম। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এত দিন রোবট-হাত অনেক বানানো হয়েছে। তা দিয়ে মহাকাশ অভিযানে নানা জটিল কাজ করা যাচ্ছে। ‘রুবিক কিউব’-এর সমাধান করা যাচ্ছে। তা প্যানকেকও বানাচ্ছে ঝটপট। এমনকী, সার্জারিতেও আকছার ব্যবহার হচ্ছে রোবট-হাতের। কিন্তু, আমাদের হাতের মতো একটা খুব সহজ কাজ রোবট-হাতকে দিয়ে এত দিন কিছুতেই করানো যেত না। রোবট-হাত নিজের মতো করে তার পাঁচটা আঙুলগুলোকে মুড়তে পারত না।


রাঁচির ছেলে বিকাশ কুমার ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে।

কব্জি থেকে আমরা যেমন হাতটাকে ঘোরাতে, মোচড়াতে পারি, কনুই থেকে তা আরও বেশি করে পারি আর কাঁধ থেকে তা আরও আরও বেশি করে পারি, বাইরে থেকে ‘কমান্ড’ পাঠিয়েও রোবট-হাতকে দিয়ে তা আমরা এত দিন ঠিকঠাক করাতে পারিনি। রোবট-হাতের প্রতিটি নড়াচড়ার জন্য এত দিন আমাদের আলাদা আলাদা ভাবে ‘প্রোগ্রামিং’ করতে হয়েছে। কোনও ‘সিঙ্গল কমান্ড’ বানানো যায়নি সেই হাতের প্রতিটি ‘মুভমেন্ট’কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। এর আগেও চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু রোবট-হাতের মধ্যমাটি (মিড্‌ল ফিঙ্গার) এত বেশি নড়াচড়া করত যে, সেই হাতে পেন, পেন্সিল, তুলি ধরিয়ে দিলে তা পড়ে যেত। কিন্তু সুস্থ মানুযের হাত থেকে পেন, পেন্সিল, তুলি পড়ে যায় না বলেই সে ঠিক ভাবে লিখতে, আঁকতে পারে। আমরা রোবট-হাতকে দিয়ে সেটাই করাতে চেয়েছিলাম। আর সেটা করাতে চেয়েছিলাম বাইরে থেকে আলাদা আলাদা ভাবে কোনও ‘কমান্ড’ না পাঠিয়ে। সেটা করতে পেরেছি এই প্রথম। রোবট-হাতকে আর এখন বলে দিতে (বাইরের ‘কমান্ড’) হচ্ছে না, পেন, পেন্সিল, তুলিটা ঠিক ভাবে ধরতে গেলে আর সেটাকে অনেক ক্ষণ ধরে ঠিক ভাবে ধরে রাখতে হলে তাকে কী কী করতে হবে, কী ভাবে চলতে হবে। রোবট-হাত এখন নিজেই সেটা জেনে-বুঝে করতে পারছে, তার মর্জিমাফিক। আমার, আপনার বানানো প্রোগ্রামিং আর তার দরকার হচ্ছে না।’’

কী ভাবে রোবট-হাত চলছে নিজের মর্জিতে, দেখুন ভিডিও।

আরও পড়ুন- ‘ফ্লু’ ভাইরাসের ছলচাতুরি ধরে ফেলে বিশ্বে বন্দিত বাঙালি, দেখুন ভিডিও!

কে ঘুম পাড়ায়? দেখায় স্বপ্ন? জাগিয়ে রাখে ঘুমেও?

একেবারে মোক্ষম কথাটা বলেছেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং ল্যাবরেটরি-ডিরেক্টর এমো তোদোরভ। তাঁর কথায়, ‘‘ধরে নিন, এই রোবট-হাতটা একটা অ্যানিমেটেড ফিল্ম। যেটা দেখার সময় মনে হচ্ছে, কী ভীষণ বাস্তব! অথচ সেটা বানানোর জন্য বেশ কয়েক জন অ্যানিমেটারকে লেগেছে। তাঁরা না থাকলে ওই অ্যানিমেটেড ফিল্ম বানানো যেত না। কিন্তু ফিল্মটা বানানো হয়ে যাওয়ার পর সেটা চলার সময় আর অ্যানিমেটারদের লাগে না। ফিল্মটা নিজের মতো করেই চলে। এই রোবট-হাতটাও তেমনই।’’

কী ভাবে তার আঙুলগুলোকে চালাতে শিখেছে ওই রোবট-হাত?

বিকাশ জানাচ্ছেন, ‘‘যে ভাবে এক জন অ্যাথলিট জ্যাভলিন থ্রো করার কায়দা-কসরৎ শেখে অনেক দিন ধরে প্র্যাকটিস করে, এই রোবট-হাতকেও আমরা সেই একই অভ্যাসের ‘দাস’ বানিয়েছি। সেও দেখে আর ঠেকে শিখেছে।’’

আগামী দিনে কী কী সুবিধা হতে পারে?

বিকাশ বলছেন, ‘‘অনেক কিছুই করানো যেতে পারে ওই রোবট-হাতকে দিয়ে। তা কাজে লাগতে পারে সামুদ্রিক গবেষণায়। আমাদের কোনও হাত পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেলে, এই রোবট-হাত দিয়েই বানানো যেতে পারে ‘প্রোস্থেটিক আর্ম’। আগামী দিনে কাপ-প্লেট-খাবার ডিশ সাফ করা, ভ্যাকিউম ক্লিনারের কাজও করানো যাবে এই রোবট-হাতের মাধ্যমে।’’

ছবি ও ভিডিও সৌজন্য: ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়।

Robot Hand Will Now Write With Pen, Draw Pictures!
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy