Advertisement
E-Paper

মহাকাশে মিলল চিনি, প্রাণের স্পষ্ট ইঙ্গিত, বলছেন বিজ্ঞানীরা

আবার খবরের শিরোনামে সুগার! এখন যেমন আমাদের ঘরে ঘরে ‘সুগার রোগী’, তেমনই মহাকাশের এখানে ওখানে হদিশ মিলতে শুরু করেছে তাল তাল চিনির। যেন চিনির পাহাড়! মধুমেহ রোগ যতই আশঙ্কার হোক না কেন, মহাকাশ বড়ই মধুময়!

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ২৩:৩০

আবার খবরের শিরোনামে সুগার!

এখন যেমন আমাদের ঘরে ঘরে ‘সুগার রোগী’, তেমনই মহাকাশের এখানে ওখানে হদিশ মিলতে শুরু করেছে তাল তাল চিনির। যেন চিনির পাহাড়!

মধুমেহ রোগ যতই আশঙ্কার হোক না কেন, মহাকাশ বড়ই মধুময়!

ভাগ্যিস, মধুময় মহাকাশ!

একেবারে হালে মহাকাশে তাল তাল চিনির হদিশ মেলায় এই ব্রহ্মাণ্ডের অন্যত্রও যে প্রাণ রয়েছে অনিবার্য ভাবে, সেই বিশ্বাসই জোরালো হয়ে উঠল। কারণ, চিনিই প্রাণের মূল উপাদান রাইবো-নিউক্লিক অ্যাসিড বা RNA তৈরির জন্য সিঁড়ির প্রথম ধাপ। চিনি যখন আছে আর প্রাথমিক তথ্য যা জানাচ্ছে, সেই নিরিখে যখন বলাই যায়, ‘হাই সুগারে’ ভুগছে মহাকাশ, তখন এই ব্রহ্মাণ্ডের অন্য কোথাও, অন্য কোনওখানে অনিবার্য ভাবেই জন্ম নিয়েছে প্রাণের অন্যতম মূল উপাদান RNA অণু। তাই প্রাণ নিশ্চয়ই রয়েছে মহাকাশের অন্য কোথাও। অন্য কোনওখানেও। এই মহাবিশ্বে আমাদের আরও আরও ‘প্রাণের বন্ধু’ রয়েছে অন্যত্রও। এমটাই বিশ্বাস জ্যোতির্রসায়নবিদদের।

সেই বিশ্বাসটাই আরও জোরালো হয়েছে এ ব্যাপারে হালে ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারস’-এ প্রচুর তথ্যপ্রমাণ সহ একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হওয়ায়। কোপেনহাগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিলস্ বোর ইনস্টিটিউটের জ্যোতির্রসায়নবিদ জার্স কে জোয়েরগেনসেন, ডেনমার্কের আরহাস বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ সিসিলি ফ্যাব্রে ও চার সহ-গবেষকের ওই প্রবন্ধে মহাকাশের কোথায় কোথায়, কী পরিমাণে প্রাণের মূল উপাদানের হদিশ মিলেছে, সে সব তথ্যপ্রমাণ সহ তুলে ধরা হয়েছে। ‘‘Detection Of Simplest Sugar. Glycoaldehyde In A Solar Type Proto Star With ALMA’’ শীর্ষক ওই প্রবন্ধে বলা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত মহাকাশের দু’টি জায়গায় প্রাণের এই অন্যতম মূল উপাদানের হদিশ মিলেছে।


মহাকাশে হদিশ মেলা গ্লাইকোঅ্যালডিহাইড অণু।

কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সে’র (আইসিএসপি) অ্যাস্ট্রোকেমিস্ট্রি ও অ্যাস্ট্রোবায়োলজি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর অঙ্কন দাসের ব্যখ্যায়, ‘‘মহাকাশে সদ্য হদিশ মেলা এই চিনির সঙ্গে দোকান থেকে কেনা চিনির কিছু গুণগত ফারাক রয়েছে। আগে জেনে নেওয়া যাক, সেই ফারাকটা কী ও কোথায়? মহাকাশে পাওয়া গিয়েছে গ্লাইকোঅ্যালডিহাইড। যার একটি অণুতে রয়েছে দু’টি কার্বন, চারটি হাইড্রোজেন ও দু’টি অক্সিজেন পরমাণু।

আরও পড়ুন- বৃহস্পতি, শনির ‘দাদাগিরি’ই বাঁচিয়ে চলেছে পৃথিবীকে

হাব্‌লের চেয়ে ১০০ গুণ বড় টেলিস্কোপ মহাকাশে পাঠাচ্ছে নাসা

আর দোকান থেকে আমরা যে চিনি কিনি, সেটা হল সুক্রোজ। যার একটি অণুতে থাকে ১২টি কার্বন, ২২টি হাইড্রোজেন ও ১১টি অক্সিজেন পরমাণু। তার মানেটা হল, দোকান থেকে আমরা যে চিনি কিনি, তা বানানোর একেবারে প্রথম ধাপটাই হল গ্লাইকোঅ্যালডিহাইড। এটাকে বলা হয়, ‘Simplest Sugar’। এই গ্লাইকোঅ্যালডিহাইডই ধাপে ধাপে বিক্রিয়া করে জন্ম দেয় ‘রাইবোজ’-এর। যার একটি অণুতে থাকে পাঁচটি কার্বন, দশটি হাইড্রোজেন আর পাঁচটি অক্সিজেন পরমাণু। এটাকে পেন্টোজ বা ‘Simple Sugar’ বলা হয়। এই রাইবোজই হল RNA গড়ে ওঠার অন্যতম মূল উপাদান। এই DNA আর RNA অণু দিয়েই একটা কোষ গড়ে ওঠে।’’

মহাকাশে প্রাণের অন্যতম মূল উপাদান গ্লাইকোঅ্যালডিহাইড পাওয়া গিয়েছে কোথায়?

অঙ্কনবাবু জানাচ্ছেন, ‘‘ওই হদিশ মিলেছে মোট তিনটি পর্যায়ে। প্রথম আবিষ্কারটা হয় ২০০০ সালে। আমাদের থেকে ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির একেবারে কেন্দ্রস্থলে স্যাজিটারিয়াস নক্ষত্রপুঞ্জে.‘Sgr B2(N)’ মেলে গ্লাইকোঅ্যালডিহাইডের হদিশ।

দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ২০০৯ সালে। মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতেই। আমাদের থেকে ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে খুব ভারী নক্ষত্রদের জন্মস্থল ‘G31.41+0.31’-এ। আর একেবারেই হালে, ২০১৩ সালে গ্লাইকোঅ্যালডিহাইডের হদিশ মিলেছে সূর্যেরই মতো আরেকটি নক্ষত্রে। যা আদতে দু’টি নক্ষত্রের একটি ‘সোরমণ্ডল’ বা বাইনারি সিস্টেম।যাদের নাম- ‘IRAS-16293-2422’। চিলির ‘আটাকামা লার্জ মিলিমিটার অ্যারে (ALMA) টেলিস্কোপের মাধ্যমে মহাকাশে ওই জৈব অণুর অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে।’’

গ্লাইকোঅ্যালডিহাইড আবিষ্কারের এই খবর কেন এতটা সাড়া ফেলেছে বিজ্ঞানী মহলে?

অঙ্কনবাবু জানাচ্ছেন, ‘‘এই নক্ষত্রটি রয়েছে আমাদের অনেক বেশি কাছে। আর এটাও সূর্যের মতোই একটি নক্ষত্র। এটাই প্রমাণ করে, আমাদের সৌরমণ্ডলের জন্মের সময় যে ভাবে গ্লাইকোঅ্যালডিহাইড তৈরি হয়েছিল আর তা থেকে ধাপে ধাপে গড়ে উঠেছিল প্রাণের অন্যতম দুই মূল উপাদান- DNA আর RNA, সে ভাবেই সূর্যের মতো ওই নক্ষত্রেও গ্লাইকোঅ্যালডিহাইড জন্মাচ্ছে।এটাই সেখানে প্রাণ সৃষ্টির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।’’

কী ভাবে চিনি জন্মাচ্ছে মহাকাশে, দেখুন- নাসার ভিডিও

মহাকাশে কী ভাবে গ্লাইকোঅ্যালডিহাইড তৈরি হল, তা নিয়ে অবশ্য নানা মুনির নানা মত। তবে একটা বিষয়ে সকলেই একমত, তা তৈরি হয়েছে অত্যন্ত, যাকে বলে হাড়-জমানো ঠাণ্ডায়। যেখানকার তাপমাত্রা দশ থেকে একশো ডিগ্রি কেলভিনের মধ্যে। মহাজাগতিক গ্যাস আর ধুলোবালির মাধ্যমে। আর, তাদেরই অকৃপণ সাহায্যে।

আর কোন কোন জৈব অণুর হদিশ মেলার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে মহাকাশে?


মহাকাশে সম্ভাব্য জৈব অণু।

একেবারে হালে ‘‘Potential Formation Of Three Pyrimidine Bases In Inter-Stellar Regions’’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে অঙ্কনবাবু ও তাঁর সহযোগী গবেষকেরা দেখিয়েছেন, হদিশ মিলতে পারে অ্যাডিনিন, গ্লাইসিন, সাইটোসিন, থায়ামিন ও ইউরাসিলের। গ্লাইসিনই অ্যামাইনো অ্যাসিড তৈরির মূল প্রাথমিক উপাদান। ইউরাসিল RNA-র, থাইমিন DNA-র আর সাইটোসিন DNA ও RNA তৈরির অন্যতম মূল প্রাথমিক উপাদান। কোষের নিউক্লিয়াস তৈরির মূল উপাদান অ্যাডিনিন প্রোটিন সংশ্লেষের জন্যেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’

ছবি সৌজন্য: নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি।

high sugar found in space
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy