ঝোড়ো: কালীঘাট মাঠে বিধ্বংসী ঋদ্ধিমান সাহা। ২০ বলে ১০২ করার পথে প্রায় প্রত্যেক বল এ ভাবেই উড়ে যেতে থাকল বাউন্ডারির বাইরে। ছবি: সুমন বল্লভ।
জে সি মুখোপাধ্যায় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ঝড় তুললেন এমন এক জন, যাঁকে মূলত টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবেই ভাবা হয়েছে এত কাল। যাঁর অসাধারণ সব ক্যাচ দেখেই মুগ্ধ হয়েছেন ক্রিকেট প্রেমীরা, তিনি এ বার ব্যাট হাতে চমকে দিলেন সকলকে। তিনি— ঋদ্ধিমান সাহা।
শনিবার কালীঘাট মাঠে মোহনবাগানের হয়ে ওপেন করতে নেমে মাত্র ২০ বলে ১০২ অপরাজিত করেন ঋদ্ধিমান। মেরেছেন ১৪টি ওভারবাউন্ডারি ও চারটি বাউন্ডারি। এক ওভারে ছয় ছক্কার অনন্য নজিরও গড়েন তিনি। স্থানীয় ক্রিকেট বলে গ্যারি সোবার্স, রবি শাস্ত্রী বা যুবরাজ সিংহের ছয় বলে ছ’টি ছয় মারার কৃতিত্বের সঙ্গে এক আসনে বসানো যাচ্ছে না তাঁকে। যে-হেতু সিএবি স্থানীয় ক্রিকেট প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটের আওতায় পড়ে না। কিন্তু ঋদ্ধির এই ব্যাটের তাণ্ডবের কথা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। কালীঘাট মাঠেও ভিড় জমে গিয়েছিল।
বিএনআর-এর বিরুদ্ধে এই ম্যাচেই হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট সারিয়ে প্রথম নামলেন ঋদ্ধিমান। ভারতীয় ক্রিকেটে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির পরিবর্ত হিসেবেও কখনও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তাঁকে ভাবা হয়নি। সুযোগ পেয়েছেন দীনেশ কার্তিক, ঋষভ পন্থ-রা। শনিবার কালীঘাট মাঠে ঋদ্ধি যেন হয়ে উঠেছিলেন ক্রিস গেল। দেখে মনে হবে যেন হাইলাইট্স চলছে। কে বলবে আসল ম্যাচ হচ্ছে! সব বলই উড়ে যাচ্ছে বাউন্ডারিতে। ময়দানের মাঠের আয়তন ইডেন বা আন্তর্জাতিক মাঠের চেয়ে অনেক ছোট হলেও বেশ বড় বড় ছক্কাই মেরে যাচ্ছিলেন ঋদ্ধি।
টি-টোয়েন্টিতে আইপিএল বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঝোড়ো সেঞ্চুরির কয়েকটি নমুনা এ রকম: ক্রিস গেল (৩০ বলে), ঋষভ পন্থ (৩২ বলে), অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস (৩৪ বলে), ডেভিড মিলার (৩৫ বলে)। ঋদ্ধির ২০ বলে ১০২ স্থানীয় ক্রিকেটে ঘটেছে বলে গেল-দের সমতুল্য হবে না। কিন্তু তিনি সীমিত ওভারের জন্য যোগ্য নন, এই তত্ত্বও কি আর মেনে নেওয়া উচিত এর পরে? পরপর ন’টি বলে ন’টি ছয় মারার কৃতিত্ব স্থানীয় ক্রিকেটেও তো নজিরবিহীন।
সামনের মাসেই শুরু আইপিএল। সেখানে কলকাতা নাইট রাইডার্স নয়, ঋদ্ধি খেলবেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জার্সিতে। শাহরুখ খানের কলকাতা তাঁর জন্য পুরোপুরি ঝাঁপায়নি আইপিএলের নিলামে। কেকেআর অনেক বেশি অর্থ খরচ করে নিয়েছে কার্তিক-কে। নিজের শহরের দলের সেই অবহেলারও যেন জবাব দিল ঋদ্ধির ব্যাট। ম্যাচ শেষে ঋদ্ধি বলেন, ‘‘আইপিএলের আগে এই ইনিংসটা গুরুত্বপূর্ণ। চোট থেকে ফেরার পরে এই সেঞ্চুরি আমার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।’’ কী পরিকল্পনা ছিল? ঋদ্ধির জবাব, ‘‘প্রথম বলই ব্যাটের মাঝখান দিয়ে খেলেছিলাম। ১২ বলে পঞ্চাশ করার পরেও সেঞ্চুরির কথা মাথায় আসেনি।’’ শেষ ৮ বলে ৫০ রান করেন তিনি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি!
সেঞ্চুরি করতে ন্যূনতম লাগে ১৭ বল (১৬টি ছক্কায় ৯৬ এবং একটি চার যোগ হয়ে একশো)। ঋদ্ধি করলে ২০ বলে। বলছেন, ‘‘টি-টোয়েন্টিতে ওপেন করলে পাওয়ার প্লে-তে রান করার সুযোগ পাওয়া যায়। সেটাই পছন্দ করি। হায়দরাবাদের হয়ে যে কোনও জায়গায় ব্যাট করতে প্রস্তুত। কিন্তু আমাকে জিজ্ঞাসা করলে ওপেনই করতে চাইব।’’ এই ইনিংসের পরে কে না শুনতে চাইবে সে কথা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy