Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Debabrata Roy

কলকাতা ছাড়াই টার্নিং পয়েন্ট ছিল: একান্ত সাক্ষাৎকারে দেবব্রত

আমি কখনই পেশাদারী মানসিকতা নিয়ে ফুটবল খেলিনি। আবেগই আমার কাছে প্রধান ছিল। আবেগ ছাড়া ফুটবল হয় না।

দেবব্রত রায়। ছবি: সংগৃহীত।

দেবব্রত রায়। ছবি: সংগৃহীত।

কৌশিক চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৭ ১২:০০
Share: Save:

ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম তারকা বাংলার দেবব্রত রায়। কিন্তু বাংলার ছেলে হলেও তাঁর কেরিয়ারের বেশির ভাগ সময়টাই কেটেছে ভিন রাজ্যের মাটিতে। মাঝে দুই মরসুম ইস্টবেঙ্গলের জার্সি গায়ে খেললেও পরে ফিরে যান গোয়াতেই। সেই দেবব্রতই এই বার ফিরলেন কলকাতায় মোহনবাগানের হয়ে সই করে। কলকাতায় ফিরে আমাদের প্রতিনিধি কৌশিক চক্রবর্তীর মুখোমুখি তিনি।

প্রশ্ন: প্রায় সাত বছর পর কলকাতায় ফিরলেন। এত দিন পর নিজের শহরে ফিরে কেমন লাগছে?

উত্তর: এক কথায় প্রচুর আনন্দ করছি। গোয়ায় যখন খেলতাম তখন একটা লোকও মাঠে আসত না প্র্যাক্টিস দেখতে, এখানে সকাল থেকেই মাঠে সমর্থকরা ভিড় জমায়। কলকাতার মত প্রচার দেশের অন্য কোথাও পায় না ফুটবলাররা। কেরিয়ারের শুরুর দিকে যখন কলকাতায় খেলে গিয়েছিলাম, সেই আনন্দই আবার ফিরে পাচ্ছি।

প্রশ্ন:কলকাতার ছেলে হয়েও ফুটবল কেরিয়ারের প্রায় পুরোটাই কাটিয়েছেন বাইরে। কলকাতা ফুটবলে কী কখনও ফেরার ইচ্ছে হয়নি?

উত্তর: বেশির ভাগ সময়ই বাইরের ক্লাব গুলির সঙ্গে আমার দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তি থাকত। ফলে কলকাতায় খেলার ইচ্ছে হলেও সেটা সম্ভব হয়নি। তবে, এরই মধ্যে এক বার ইস্টবেঙ্গলের হয়ে আমি খেলে গিয়েছি। তবে, কলকাতা ছেড়ে মাহিন্দ্রাতে সই করার পর আর কখনও কলকাতায় খেলা হয়নি।

প্রশ্ন:এখনকার ফুটবলে পেশাদারিত্বই মূল কথা। আবেগের গুরুত্ববিশেষ নেইবাঙালি ফুটবলার হয়ে হিসেবে কোনটা আপনার কাছে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে?

উত্তর: আমি কখনই পেশাদারী মানসিকতা নিয়ে ফুটবল খেলিনি। আবেগই আমার কাছে প্রধান ছিল। ফলে চিরাগ ইউনাইটেডের ভাল অফার থাকলেও আমি আমার প্রথম ক্লাব মাহিন্দ্রাতেই থেকে যাই। আবেগ ছাড়া ফুটবল হয় না।

প্রশ্ন:আপনার ফুটবল কেরিয়ারে গোয়ার অবদান কতটা?

উত্তর: আমার ফুটবলের অধিকাংশ সময়টাই কেটেছে গোয়ায়। ডেম্পোতে দারুন সময় কাটিয়েছি। ডেম্পো আমার দ্বিতীয় পরিবার। খুব কম সময়ের মধ্যে ওরা আমাকে আপন করে নিয়েছিল। সেই দিনগুলো ভোলার নয়। সব সময় ডেম্পোকে মিস করব। আর্মান্দো স্যার(আর্মান্দো কোলাস) এবং ডেরেক স্যার (ডেরেক পেরেরা) আমাকে অনেক গাইড করেছেন।

অনুশীলনের ফাঁকে দেবব্রত। -নিজস্ব চিত্র।

প্রশ্ন: আপনার কেরিয়ারের টানিং পয়েন্ট কোনটা?

উত্তর: ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে মাহিন্দ্রা ইউনাইটেডে যাওয়াটাই আমার কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। যদি সেই সময় কলকাতায় থেকে যেতাম তাহলে হয়তো আমার ফুটবল কেরিয়ার এতটা দীর্ঘ হত না।

প্রশ্ন: কলকাতা লিগে তিনটি ম্যাচ হয়ে গেল এখন আপনাকে সবুজ-মেরুন জার্সিতে মাঠে দেখা গেল না। মাঠে নামার জন্য কি এখনও সম্পূর্ণ ফিট নন?

উত্তর: ফিট তো বটেই। কিন্তু ফিটনেসের থেকেও বড় কথা আমি দলের সঙ্গে পরে যোগ দিয়েছি। লিগ শুরুর দশ-বারো দিন আগে টিমের হয়ে সই করি। যার জন্য কোচ একটা ফর্মেশনে টিমটাকে খেলাচ্ছিল। এবং সেই ফর্মেশান যে ঠিক তা প্রত্যেক ম্যাচে প্রমাণিত হচ্ছে। তাই এই মূহূর্তে কোনও কোচই উইনিং কম্বিনেশন ভাঙতে চাইবে না। এটাই স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন: ড্র করেও চ্যাম্পিয়ন রবিনদের ভারত

আরও পড়ুন: জাতীয় সঙ্গীত বিতর্ক: পক্ষে মিলখা, বিপক্ষে চুনী

প্রশ্ন: তা হলে প্রথম দলে ঢোকার লড়াইটা বেশ কঠিন তাই তো?

উত্তর: লড়াই তো বটেই। তবে সেটা সুস্থ লড়াই। ফুটবল তো শুধু এগারো জনের খেলা নয়। একটা দলের ভাল পারফরম্যান্সের পিছনে থাকে বহু মানুষের অবদান। কর্মকর্তা থেকে সাপোর্ট স্টাফ সকলেই দলের জয় চায় । আমিও মাঠে নামার সুযোগ পেলে নিজের ১০০ শতাংশই দেব দলের জন্য।

প্রশ্ন: কলকাতায় সমর্থকদের প্রত্যাশার চাপ কেমন উপভোগ করছেন?

উত্তর: কলকাতায় ফুটবল খেললে চাপ তো নিতেই হবে। অনুশীলন ম্যাচ থেকে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ সব ম্যাচেই সমর্থকরা জয় চায়,তাই চাপ তো থাকেই। ভাল খেললে ঠিক আছে, কোনও রকম খারাপ ফল হলেই অফিস থেকে পাড়া প্রতিবেশী কেউই সমালোচনা করতে ছাড়ে না।

চেন্নাই সিটি এফ সি-এর জার্সিতে দেবব্রত রায়।-নিজস্ব চিত্র।

প্রশ্ন: ইস্টবেঙ্গলের জার্সি গায়ে আগে ডার্বি খেলেছেন। এ বার খেলবেন মোহনবাগানের হয়ে। বাঙালির আবেগের এই ম্যাচকে ঘিরে কী পরিকল্পনা?

উত্তর: ডার্বি খেলার অভিজ্ঞতা আছে। শুধু জার্সির রংটারই পরিবর্তন হবে। সমর্থকদের প্রত্যাশার চাপ তো থাকবেই। সব নিয়েই ডার্বিতে নামব। দলকে জেতাতে নিজের ১০০ শতাংশ মাঠে উজাড় করে দেব।

প্রশ্ন: আই লিগ, ফেডারেশন কাপ পেলেও বিগত সাত বছর কলকাতা লিগ অধরাই রয়ে গেছে বাগান সমর্থকদের কাছে। আপনি কতটা আশাবাদী এই বছর কলকাতা লিগ জেতার বিষয়?

উত্তর: গোয়ান লিগ, মুম্বই লিগ, চেন্নাই লিগ সবই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি আমি। কিন্তু কখন কলকাতা লিগ পাইনি। এ বছর মোহনবাগান আমায় অধরা কলকাতা লিগ জেতার সুযোগ দিয়েছে। যে ভাবে দল খেলছে, সেই ভাবে খেলতে থাকলে নিশ্চই আমরা এই বছর কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ান হব।

প্রশ্ন: সত্তর-আশির দশকের মত আবার ময়দানে প্রিয়দলের খেলা দেখতে ঢল নামছে মানুষের। মাঝের কয়েক বছর এই দৃশ্য না দেখা গেলেও আবার দেখা যাচ্ছে জনজোয়ার। কী ভাবে দেখছেন এটা?

উত্তর: আমার মনে হয় এটা সোশ্যাল মিডিয়া এফেক্ট। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে নিয়ে এত প্রচারের ফলেই আবার তরুণ প্রজন্ম মাঠমুখী হচ্ছে। এটা কলকাতা ফুটবলের জন্য ভাল বিজ্ঞাপন।

প্রশ্ন: কলকাতা লিগে খেলা মোহনবাগানের তিন বিদেশিকে কেমন লাগছে?

উত্তর: প্রত্যেকেই এরা কঠোর পরিশ্রমী, স্কিলফুল এবং এদের ব্যবহারও ভাল। এক কথায় প্রকৃত টিমম্যান বলা যায়। শুধু ভাল প্লেয়ার হলেই হয় না, ভাল মানুষও হতে হয়। যেমন এই তিন বিদেশি।

প্রশ্ন: কত বছর খেলা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আছে?

উত্তর: যত দিন ফুটবলকে উপভোগ করব, যত দিন সমর্থরা চাইবেন তত দিনই খেলা চালিয়ে যাব। মাথা উঁচু করেই মাঠ ছাড়তে চাই। সম্মানের সঙ্গে খেলাটাকে বিদায় জানাতে চাই।

প্রশ্ন: কোচিংয়ের বিষয় কোনও পরিকল্পনা আছে?

উত্তর: কোচিংয়ে আসার কোনও ইচ্ছে নেই। খেলেই আনন্দ পাই। প্লেয়ার হিসেবেই খেলতে চাই। পেশাদার কোচিংয়ে আমি কখনওই নিজেকে জড়াব না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE