Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Sports News

‘এই মোহনবাগানকেও যদি হারাতে না পারে...’

ভারতীয় ফুটবলে রহিম নবি নামে এক তারকার উত্থান হয়েছিল। ভাল-মন্দের অনেক স্মৃতি নিয়েই তো তার শেষ হয়ে যাওয়া। ডার্বি নিয়ে ভাবতে গেলে আজও নবির গলায় তাই কখনও ক্ষোভ, কখনও হতাশা। রবিবারের ডার্বির আগে পুরনো ইস্ট-মোহন খেলোয়াড় সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে।

প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ফুটবলার রহিম নবি। —ফাইল চিত্র।

প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ফুটবলার রহিম নবি। —ফাইল চিত্র।

সুচরিতা সেন চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ১৬:১২
Share: Save:

তিনি এখন তৃণমূলের নেতা। আবার ফুটবলারও। কলকাতা লিগে খেলেছেন পিয়ারলেসের হয়ে। কিন্তু, আই লিগ বা আইএসএল-এ খেলছেন না। ইদানীং সব সময় চোখও রাখেন না ভারতীয় ফুটবলে। তবু, ডার্বির কথা উঠলে মন চলে যায় সেই চেনা যুবভারতীতে। ভারতীয় ফুটবলে রহিম নবি নামে এক তারকার উত্থান হয়েছিল। ভাল-মন্দের অনেক স্মৃতি নিয়েই তো তার শেষ হয়ে যাওয়া। ডার্বি নিয়ে ভাবতে গেলে আজও নবির গলায় তাই কখনও ক্ষোভ, কখনও হতাশা। কখনও বা ঘুরে-ফিরে আসা ভাল লাগার নানা স্মৃতি। সঙ্গে সেই রক্তাক্ত ইতিহাস। রবিবারের ডার্বির আগে পুরনো ইস্ট-মোহন খেলোয়াড় সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে।

প্রশ্ন: কাল তো আবার একটা ডার্বি। কিন্তু, আপনি নেই...

নবি: আমি তো অনেক দিনই নেই। তাতে তো ডার্বি বন্ধ হয়ে যাবে না। আমার মতো কত ফুটবলার এসেছে, চলে গিয়েছে। এটাই তো নিয়ম।

প্রশ্ন: ডার্বির উত্তেজনাটা মিস করেন?

নবি: কোথায় উত্তেজনা বলুন তো? আজকাল ডার্বি নিয়ে কোনও উন্মাদনাই খুঁজে পাই না। সবটাই ম্যাড়মেড়ে।

আরও পড়ুন
ডার্বিতে সনি-ইউটাকে মিস করব: কিংগসলে ওবুমনেমে

প্রশ্ন: আপনার কী মনে হয়, কেন এই পরিস্থিতি?

নবি: ডার্বি নিয়ে কেন উন্মাদনা থাকবে! ক’টা বাঙালি খেলছে দু’দলে? দুটো দল মিলিয়ে চার থেকে পাঁচ জন। কীসের টানে মানুষ যাবে এই খেলা দেখতে? তবু আমার বিশ্বাস হাজার পঞ্চাশেক সমর্থক আসবেন। সেটা শুধুই ওই নাম দুটোর জন্য এখনও থেকে যাওয়া আবেগ থেকে।

প্রশ্ন: কারা দায়ী?

নবি: অবশ্যই ক্লাব। তবে তার থেকেও বেশি দায়ী আইএফএ, এআইএফএফ। ফুটবলটাকে নিয়ে ছেলেখেলা করছে। অদ্ভুত ফর্ম্যাটে কলকাতা লিগ খেলা হচ্ছে। আই লিগের খেলাগুলো কেন রাত আটটায় দেওয়া হচ্ছে জানেন?

প্রশ্ন: কেন?

নবি: যাতে আইএসএল-এর কমে যাওয়া দর্শক সংখ্যাকে ছাপিয়ে না যায় আই লিগ। ওরা কি জানে না, আই লিগ যারা দেখতে আসে বা ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের সমর্থকরা কোথা থেকে আসে? যাদের অত টাকা নেই। জেলাগুলো থেকে তো সবাই আসে। অত রাতে খেলা দিলে ফিরবে কী করে বাড়ি? আইএসএল-এর দর্শকরা গাড়ি হাঁকিয়ে খেলা দেখতে আসে। তাই যত রাতই হোক না কেন ওদের অসুবিধে নেই। আইএসএল-কে তুলতে যা ইচ্ছে করছে।

প্রশ্ন: অনেক খারাপ লাগা রয়েছে দেখছি?

নবি: থাকবে না! এই কলকাতার ফুটবলই তো রহিম নবিকে তারকা করেছে। সেটা ডুবে যেতে দেখলে খারাপ তো লাগেই। না বলেও পারি না। বাকিদের মতো মুখ বুজে থাকতে পারব না।

প্রশ্ন: ডার্বি যখন খেলেছেন, তখন তো বেশ কিছু খারাপ স্মৃতি রয়েছে?

নবি: আমার কাছে যেটা সবচেয়ে খারাপ স্মৃতি, সেটা মনে হয় কলকাতা ময়দানের কাছেও। সারাজীবন মনে থাকবে। মরে যেতাম সে দিন। ওডাফা লাল কার্ড দেখার আগে থেকেই গ্যালারি উত্তপ্ত হচ্ছিল। আমি তখন মোহনবাগানে। হঠাৎ কিছু একটা সপাটে এসে লাগল গালে। যন্ত্রণায় মাটিতেই লুটিয়ে পড়েছিলাম। তার পর জ্ঞান ফিরল হাসপাতালে। অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলাম। খেলাটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সে দিন। ২০১২-র ৯ ডিসেম্বরটা ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে সত্যিই খারাপ দিন।

প্রশ্ন: আর ভাল মুহূর্তও তো অনেক রয়েছে?

নবি: ডার্বি জেতার সব মুহূর্তই অসাধারণ। যারা খেলেছে, খেলে জিতেছে— সেই অনুভূতি ব্যাখ্যা করা যায় না।

প্রশ্ন: তবুও সেরা যদি বাছতে বলা হয়?

নবি: যে ম্যাচটা ৩-০তে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে জিতেছিলাম, সেটা আমার জীবনের সেরা ডার্বি। আমি দুটো গোল করেছিলাম রেনেডি সিংহর ফ্রি-কিক থেকে। সেই ম্যাচে অধিনায়ক ছিলাম। অধিনায়ক হিসেবে জোড়া গোল করে ম্যাচ জেতানোর ভাল লাগাটা আলাদা। সেটা ২০০৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি।

প্রশ্ন: তবুও ডার্বি খেলার এত দিনের অভিজ্ঞতা থেকে কী মনে হচ্ছে, এই ম্যাচটা কাদের হতে চলেছে?

নবি: আমি এ বার একদমই খেলা দেখিনি। তবুও যতটুকু দেখেছি তাতে খেলার মান অত্যন্ত খারাপ। (হেসে) তবে আইএসএল-এর থেকে ভাল। কিন্তু মোহনবাগানের যা অবস্থা তাতে এই ম্যাচ যদি ইস্টবেঙ্গল জিততে না পারে তা হলে ওদের আর খেলতে হবে না।

প্রশ্ন: কেন?

নবি: মোহনবাগানে অনেকে নেই। কোচ চলে গিয়েছেন। একটা ডামাডোলের বাজার। সেটাকে কাজে লাগাতে পারা উচিৎ। কিন্তু এই বয়সের ডুডুকে নিয়ে আসার মানেটা কী বুঝতে পারলাম না।

প্রশ্ন: কাল কি মাঠে দেখা যাবে রহিম নবিকে?

নবি: এখনও জানি না। পার্টির কাজ মিটিয়ে যদি সময় পাই যাওয়ার চেষ্টা করব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE