Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্বজয়ের প্রেরণাও পেয়ে গিয়েছেন ঝুলন

শুক্রবার সন্ধ্যায় যখন ডার্বি থেকে লন্ডনে যাওয়ার পথে টিম বাসে বসে ফোনে রবিবারের ফাইনালে নামার অনুভুতির কথা বলছিলেন বাংলার মেয়ে, তখন তাঁর গলায় উত্তেজনাটা স্পষ্ট টের পাওয়া গেল।

হুঙ্কার: ফর্মে ঝুলন। —ফাইল চিত্র।

হুঙ্কার: ফর্মে ঝুলন। —ফাইল চিত্র।

রাজীব ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৭ ০৪:০৫
Share: Save:

লর্ডসে বিশ্বকাপ ফাইনাল!

যে কোনও ক্রিকেটারের কাছেই স্বপ্ন। যা পূরণ হওয়া মানে তাঁর ক্রিকেট জীবন সার্থক।

কপিল দেবের ১৯৮৩-র দলের সতীর্থরা ছাড়া এ দেশের আর কোনও ক্রিকেটারের মুকুটে এত দিন এই পালক ছিল না। রবিবার সকালে ইংরেজ অধিনায়ক হেদার নাইটের সঙ্গে লর্ডসের মাঠে টস করতে নামার পর কপিলের সেই দলের পাশে মিতালিদের জায়গা হয় কি না, তা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে সারা দেশ।

আর বাংলার ক্রিকেটে ২৩ জুলাই, ২০১৭ দিনটা হতে চলেছে ঐতিহাসিক। এই প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে কোনও বাঙালি ক্রিকেটারের পা পড়বে লর্ডসে।

না, বেহালার বীরেন রায় রোড থেকে উঠে আসা মহা তারকারও এই সুযোগ হয়নি কখনও। এই ব্যাপারে তাঁকে পিছনেই ফেলে দিলেন চাকদহের মেয়েটি। ঝুলন গোস্বামী।

শুক্রবার সন্ধ্যায় যখন ডার্বি থেকে লন্ডনে যাওয়ার পথে টিম বাসে বসে ফোনে রবিবারের ফাইনালে নামার অনুভুতির কথা বলছিলেন বাংলার মেয়ে, তখন তাঁর গলায় উত্তেজনাটা স্পষ্ট টের পাওয়া গেল। বললেন, ‘‘এর চেয়ে বড় স্বপ্ন পূরণ কোনও ক্রিকেটারের জীবনে আর হতে পারে, বলুন? রবিবার আমার ক্রিকেট জীবন সার্থক হতে চলেছে।’’ ফোনে কথাগুলো যখন বলছিলেন ঝুলন, তখন আশপাশ থেকে কোনও আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল না। জানা গেল তাঁর ক্লান্ত সতীর্থরা বেশির ভাগই সাড়ে তিন ঘণ্টার বাসযাত্রায় ঘুমোচ্ছেন। ঝুলন বলে চললেন, ‘‘এত বড় টুর্নামেন্ট, ইংল্যান্ডের এ রকম কঠিন পরিবেশে ভাল ক্রিকেট খেলে এত দূর উঠে আসাটা যে কোনও ক্রিকেটারের কাছেই বেশ পরিশ্রমসাপেক্ষ। তবে ফাইনালে ওঠার পর সবাই খুব উদ্বুদ্ধ হয়ে রয়েছে। সবাই সেরাটা দিতে প্রস্তুত।’’

আরও পড়ুন:

মেয়ের গর্বে দারুণ বার্তা পাঠালেন হরমনপ্রীতের মা

ইংল্যান্ডের পরিবেশ ও উইকেটের জন্য ফাইনালে ওঠা বেশ কঠিন ছিল বলে জানালেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৮২ উইকেট পাওয়া এই মিডিয়াম পেসার। বললেন, ‘‘মাঝে দুটো ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। সেমিফাইনালে ওঠাটা আমাদের টার্গেট ছিল ঠিকই, কিন্তু ফাইনালে ওঠা মোটেই সহজ ছিল না। অস্ট্রেলিয়া ছ’বারের চ্যাম্পিয়ন। গতবারেরও চ্যাম্পিয়ন ওরা। তার উপর ওদের কাছে কয়েক দিন আগেই হেরেছি। এই জয়টা সহজ ছিল না। এটা অসাধারণ একটা সাফল্য। ফাইনালে জেতার বড় প্রেরণা তো এই ম্যাচ থেকেই পেয়ে গেলাম।’’ বৃহস্পতিবার শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ও ক্যাপ্টেন মেগ ল্যানিংয়ের স্টাম্প ছিটকে দেন ঝুলন। পরে উইকেটকিপার অ্যালিসা হিলিকেও ফেরান তিনি। ব্ল্যাকওয়েল ছাড়াও যে দুই ব্যাটসম্যান বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারতেন, তাঁদের ফেরান তিনি। নিজের এই পারফরম্যান্স নিয়ে বলেন, ‘‘দলকে শুরুতেই একটা ব্রেক থ্রু দেওয়া আমার দায়িত্ব। দলের জন্য এটাই আমার কাজ। নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’

অধিনায়ক মিতালি রাজ তো দুর্দান্ত ফর্মে আছেনই। স্মৃতি মানধানা, পুণম রাউত, হরমনপ্রীত কউর, বেদা কৃষ্ণমূর্তি, রাজেশ্বরী গায়কোয়াড়— প্রতি ম্যাচেই দলের কেউ না কেউ নজর কেড়েছেন। এটা সঠিক প্রস্তুতিরই ফল বলে মনে করেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক ঝুলন। বললেন, ‘‘গত এক-দেড় বছর ধরে আমরা একসঙ্গে খেলে আসছি, অনেকগুলো সিরিজ, টুর্নামেন্ট আমরা একসঙ্গে খেলেছি, জিতেছি। প্রস্তুতি শিবিরও করেছি। কম্বিনেশনটা সেট হয়ে গিয়েছে। চাপ সামলানোর ক্ষমতাও আমাদের বেড়েছে। বড় ম্যাচের মানসিকতা তৈরি হয়ে গিয়েছে আমাদের মেয়েদের। দলে তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশ্রণটা খুব ভাল। ফলে পরিকল্পনাগুলো আমরা কার্যকর করতে পারছি নিখুঁত ভাবে। আশা করি ফাইনালেও আমরা এ ভাবেই জিতব।’’

এর আগে বারবার ব্যর্থ হয়ে ঘরে ফেরা মেয়ের মুখ দেখে ক্লান্ত ঝুলনের মা ঝরনাদেবী এ বার ইংল্যান্ড রওনা হওয়ার আগে মেয়েকে অনুরোধ করেছিলেন, এ বার যেন ফের সেই মন খারাপের ছবিটা তাঁকে দেখতে না হয়। ঝুলন বললেন, ‘‘এ বার মনে হয় মায়ের কথা রাখতে পারব। খেলার সময় মা আমার চেয়েও বেশি নার্ভাস থাকেন। সে দিন আশীর্বাদ করে বললেন, ‘আর তোর গোমড়া মুখ দেখতে চাই না। আশীর্বাদ করি, এ বার হাসিমুখে ফিরিস।’’ সারা দেশের মানুষের শুভেচ্ছা তো আছেই। মায়ের এই আশীর্বাদ সঙ্গে নিয়েও লর্ডসে কাল ফাইনাল খেলতে নামবেন ঝুলন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE