Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

স্যাঞ্চো জিতল, জিতল কলকাতাও

আজ থেকে মাস কয়েক পরে এই দৃশ্যটা ফুটবল গ্রহে খুব বেশি মাত্রায় দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তখন যে জ্যাডন স্যাঞ্চোর গায়ে থাকবে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের জার্সি!

নায়ক: ইংল্যান্ডের জ্যাডন স্যাঞ্চো। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নায়ক: ইংল্যান্ডের জ্যাডন স্যাঞ্চো। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

কৌশিক দাশ
শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:১০
Share: Save:

ছেলেটা ছুটছে। বাঁ দিক থেকে কাট করে ভিতরে ঢুকে এল ছ’ফুট লম্বা চেহারাটা। ছোট্ট একটা টোকা। কেটে গেল সামনের দু’জন ডিফেন্ডার। একটা মাপা পাস। বাঁ দিক দেখে উঠে আসা ফরোয়ার্ডের সামনে বলটা গোলে ঠেলে দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় ছিল না।

উত্তাল হয়ে উঠল ‘ইয়েলো ওয়াল’। গ্যালারিতে হলুদ জার্সি পরা শরীরগুলো তখন লাফাচ্ছে আর গর্জন করছে: স্যাঞ্চো, স্যাঞ্চো, স্যাঞ্চো।

আজ থেকে মাস কয়েক পরে এই দৃশ্যটা ফুটবল গ্রহে খুব বেশি মাত্রায় দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তখন যে জ্যাডন স্যাঞ্চোর গায়ে থাকবে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের জার্সি! ছুটবেন সিগনাল ইদুনা পার্কের মাঠে। আর সামনে থাকবে ডর্টমুন্ডের বিখ্যাত ‘ইয়েলো ওয়াল’।

রবিবার স্যাঞ্চোর গায়ে ডর্টমুন্ড নয়, ইংল্যান্ডের জার্সি ছিল। যুবভারতীতেও ছিল না কোনও ইয়েলো ওয়াল। কিন্তু তরুণ প্রতিভার বিচ্ছুরণ দেখতে দেখতে আবেগের বিস্ফোরণটা তো প্রায় একই রকম ঘটল।

আরও পড়ুন: ফিরছে বরিস, কলম্বিয়াকে সমীহ করেই নামছে ভারত

ম্যাচের আগে স্টেডিয়ামে ভিড় করা ৪৬ হাজার দর্শকের ক’জনই বা জ্যাডন স্যাঞ্চোর নাম জানতেন? কিন্তু ম্যাচের দু’মিনিটের মাথায় শরীরের পিছনে পড়া বলটা গোড়ালি দিয়ে সামনে টেনে আনার মুহূর্ত থেকে যুবভারতী যেন আপন করে নিল ১১ নম্বর জার্সি পরা ছেলেটাকে।

যুবভারতীতে গোল করে ইংল্যান্ডের স্যাঞ্চোর লাফ।

৯০ মিনিটের পরে স্যাঞ্চো যেন ঘরের ছেলে। ইংল্যান্ডের চার গোলের মধ্যে নিজে করেছে দু’টো, একটা করিয়েছে। আগে তুলে না নিলে হয়তো হ্যাটট্রিকও হয়ে যেত। চিলেকে ৪-০ উড়িয়ে দেওয়ার পরে গ্যালারিতে ঢুঁ মারলে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে যে সব মন্তব্যের— ‘‘এই ছেলেটা কিন্তু বিশ্বকাপ মাতিয়ে দেবে।’’ (স্যাঞ্চো অবশ্য গ্রুপ লিগের পরে চলে যাচ্ছে)। ‘‘দুর্দান্ত প্রতিভা। অসাধারণ বল কন্ট্রোল। অনেক দিন পরে একটা ছেলের খেলা এত মুগ্ধ করল।’’
‘‘মাথা যদি না ঘুরে যায়, এই ছেলেটা এক দিন দুনিয়া মাতাবে।’’

রবিবার কলকাতায় বিশ্বকাপ বোধনে কিন্তু স্যাঞ্চোর চেয়েও বড় পরীক্ষা ছিল যুবভারতীর। ভারত ছাড়া অন্য গ্রুপের খেলাকে কী চোখে দেখবে কলকাতা? ম্যাচের ঘণ্টাখানেক আগেও ছবিটা আশাপ্রদ ছিল না। কিন্তু যত মাহেন্দ্রক্ষণ এগিয়ে এসেছে, মাঠ ভরে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড-চিলে ম্যাচের সরকারি দর্শক সংখ্যাটা পাওয়া গেল: ৪৬ হাজার ১৫৪।

কিন্তু শুষ্ক পরিসংখ্যানের চেয়েও বড় সার্টিফিকেট পেল যুবভারতী। ইংল্যান্ডের চতুর্থ গোল করা অ্যাঞ্জেল গোমেস মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে বলে গেল, ‘‘অসাধারণ পরিবেশ। এত লোক হবে ভাবিনি। অনূর্ধ্ব ১৭ নয়, মনে হচ্ছিল আমরা সত্যিকারের বিশ্বকাপ খেলছি।’’ স্যাঞ্চো তো জিতলই। জিতে গেল কলকাতাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE