Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Sports News

অনেক হতাশা পেরিয়ে চেনা ছন্দে কলকাতার ডার্বি

আবার একটা ডার্বি। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। কে জিতবে, কেই বা হার মানবে। এই হিসেবেই মেতেছেন সমর্থকেরা। আর মাত্র কয়েকটা মিনিট। তার পরই শুরু হয়ে যাবে সেই চেনা লড়াই।

স্টেডিয়ামের পথে দুই ক্লাবের সমর্থকরা। —নিজস্ব চিত্র।

স্টেডিয়ামের পথে দুই ক্লাবের সমর্থকরা। —নিজস্ব চিত্র।

সুচরিতা সেন চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৮ ১৩:২৭
Share: Save:

ভিআইপি গেট আর সাইয়ের মাঝের একটা জায়গায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল ছেলেটি। গায়ের জ্যাকেটটি দেখলে দূর থেকেই বোঝা যায় কোনও ফুটবল ক্লাবের। চোখে মুখে জুড়ে যেন অনেকগুলো চিন্তা ছড়িয়ে। তবে, তাঁকে পেরিয়েই চলে গিয়েছিলাম।কাজের তাড়া আছে যে।

একটু এগিয়েছি। পিছন থেকে ডাকটা ভেসে এল, ‘‘দু’নম্বর গেটটা কোথা দিয়ে যাব একটু বলবেন?’’ দাঁড়াতেই হল। ফিরে দেখি সেই ছেলেটি। রাজীব বিশ্বাস। এসেছেন ডুয়ার্সের মালবাজার থেকে। বাংলাটাও বেশ ভাঙা ভাঙা। জানতে পারলাম, গত বছরও খেলেছেন কেনকেরে এফসিতে। লিগ শেষে বাড়ি ফিরে স্থানীয় ফুটবলে খেলতে গিয়েই লিগামেন্টে চোট। তাই ছুটে এসেছেন কলকাতায় ডাক্তার দেখাতে।

ইস্টবেঙ্গলের অন্ধ ভক্ত। ডার্বি দেখার সুযোগ তাই ছাড়তে চাননি। কিন্তু সঙ্গে ব্যাগ, তাতে জামা-কাপড়। নিয়ে ঢুকতে দেবে কি না সেটাই চিন্তা রাজীবের। বলছিলেন, ‘‘আমি তো আজ সকালে এসেছি, রাতের ট্রেন ধরব। তাই ব্যাগ নিয়েই ঘুরছি। যদি না ঢুকতে দেয় তা হলে কি খেলাটাই দেখা হবে না? এই সুযোগ তো রোজ আসে না।’’

এটাই আসলে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের আবেগ। যা প্রতি ডার্বির আগের সকালে ঘুরে ফিরে লিখতে হয়। চর্বিত চর্বণ হলেও উপায় নেই। আসলে আবেগটা তো বদলায় না।

আরও পড়ুন
রবিবারের ডার্বিতে ঝুলছে দুই কোচের ভাগ্য

সনি নর্দের মুখোশে মোহনবাগানের সমর্থকরা।

এক নম্বর গেটের সামনে খেলা শুরুর চার ঘণ্টা আগে থেকেই দীর্ঘ লাইন। হাতে টিকিট। গায়ে লাল-হলুদ জার্সি। ঘন ঘন ভেসে আসছে স্লোগান। কোনওটা খুব চেনা কোনওটা আবার নতুন। প্রতি ডার্বি যে ভাবে তুলে আনে নতুন মুখ, সে ভাবেই বাঁধা হয় নতুন গান, নয়া স্লোগান। এক-দু’নম্বর গেট পেরিয়ে চার নম্বরেই দেখা হয়ে গেল শ’য়ে শ’য়ে সনি নর্দের সঙ্গে। পরিকল্পনা ছিলই। এ ভাবেই সনির মুখোশ পরে খেলা দেখবেন মোহনবাগান সমর্থকরা। ঠিক যেমনটা কোচ সঞ্জয় সেন নির্বাসনে থাকার সময় করেছিলেন তাঁরা। এ বার বিদায়ী সনির জন্য। চার-পাঁচ নম্বর গেট জুড়েই সনির ছড়াছড়ি। এটাই আবেগ। এটাই বাংলার ফুটবল।

স্টেডিয়ামের বাইরে বিকিকিনি।

দুই গেট পেরিয়ে স্টেডিয়ামের ভিতরে ঢুকলে চোখে পরে নিরাপত্তা বলয়। তবে সেটা খুব স্বাভাবিক। সবই যেন খুব চেনা ছন্দে। গ্যালারির নীল-সাদা ঢেকেছে দুই ক্লাবের রঙে। মোহনবাগান গ্যালারির চেয়ার ঢাকা রয়েছে সবুজ-মেরুন টুকরো টুকরো কাপড়ে।

অন্য দিকে, ইস্টবেঙ্গল গ্যালারির চেয়ারে লাল-হলুদ পতাকা। প্রথম এগারোয় ডুডু রয়েছেন খবর ছড়িয়ে পড়তেই যেন উচ্ছ্বাসের বিস্ফোরণ হল গ্যালারিতে। অন্য দিকে, সনিহীন মোহনবাগানে হতাশা থাকলেও জয়ের স্বপ্ন। আগের ডার্বির অ্যাকশন রি প্লেই দেখতে চান তাঁরা। ইস্টবেঙ্গল অবশ্যই চাইবে জয়ে ফিরতে। আর সেই আবেগ, উচ্ছ্বাসের মধ্যেই বুক ধুকপুক দুই কোচের। এটাই না শেষ ম্যাচ হয়ে যায় তাঁদের জন্য।

প্রেসবক্সে ঢুকে বাঁ দিকের গ্যালারিতে চোখ রাখলাম। হাজার হাজার ইস্টবেঙ্গল সমর্থক, তার মধ্যে রাজীবের সন্ধান পাওয়াটা খড়ের কাদায় সূঁচ খোঁজার মতো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE