Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জ্বলে উঠতে পারে লিভারপুল’

রবিবার সেই দুই বিখ্যাত ম্যানেজার মুখোমুখি হয়েছিলেন অ্যানফিল্ড-এ। সেই অ্যানফিল্ড, যা যুর্গেন ক্লপের দল লিভারপুলের ঘরের মাঠ।

আলিঙ্গন: ফের য়ুর্গেন ক্লপের কাছে হার গুয়ার্দিওলার। ফাইল চিত্র

আলিঙ্গন: ফের য়ুর্গেন ক্লপের কাছে হার গুয়ার্দিওলার। ফাইল চিত্র

আই এম বিজয়ন
শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪৮
Share: Save:

বর্তমান ফুটবল দুনিয়ায় আমার দুই সেরা ম্যানেজার হলেন পেপ গুয়ার্দিওলা এবং যুর্গেন ক্লপ। চেলসির আন্তোনিও কন্তে এবং ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড-এর জোসে মোরিনহো-কে মাথায় রেখেও এ কথা বলছি।

রবিবার সেই দুই বিখ্যাত ম্যানেজার মুখোমুখি হয়েছিলেন অ্যানফিল্ড-এ। সেই অ্যানফিল্ড, যা যুর্গেন ক্লপের দল লিভারপুলের ঘরের মাঠ। আর বিশ্ব ফুটবলের সঙ্গে জড়িত সকলেই জানেন, সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে গুয়ার্দিওলাকে সবচেয়ে বেশি বার হারতে হয়েছে এই য়ুর্গেন ক্লপের কাছেই। ফলে রবিবার অ্যানফিল্ডে যে একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে তা বোঝাই গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বরেই গুয়ার্দিওলার টিমের ঘরের মাঠ এতিহাদ স্টেডিয়ামে ম্যান সিটির কাছে ৫-০ বিধ্বস্ত হয়েছিল লিভারপুল। রবিবার ঘরের মাঠে বলা যায় সেই হারেরই বদলা নিলেন য়ুর্গেন ক্লপ।

ম্যাচে যুর্গেন ক্লপের দলকে শুরু থেকেই দুর্দান্ত নেতৃত্ব দিয়ে খেলছিল রবের্তো ফিরমিনো। পাওয়ার আর স্কিল দিয়ে শুরু থেকেই ফিরমিনো বার বার বিপদে ফেলছিল ম্যাঞ্চেস্টার সিটির রক্ষণকে। বিরতিতে ম্যাচের ফল ছিল ১-১। দ্বিতীয়ার্ধে লিভারপুল দশ মিনিটের এমন একটা গতিময় ও প্রেসিং ফুটবল খেলতে শুরু করল যে সেখান থেকেই ওদের ৪-১ এগিয়ে যাওয়া। এই সময় য়ুর্গেন ক্লপের দলের দৌড়, পাসিং, প্রেসিং পর্যুদস্ত করে দিয়েছিল ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে। অন্য কোনও কোচ হলে এই সময় অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে এসে পিছিয়ে গিয়েই চরম রক্ষণাত্মক হয়ে পড়তেন। কিন্তু ম্যাঞ্চেস্টার সিটির কোচের নাম যেহেতু পেপ গুয়ার্দিওলা তাই পিছিয়ে গিয়েও কিন্তু আক্রমণাত্মক মেজাজেই দলকে খেলালেন। পিছিয়ে গিয়েও কুঁকড়ে না থেকে পাল্টা প্রতি-আক্রমণে যাচ্ছিল ম্যান সিটিও। ম্যান সিটির কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা বলেই ৪-১ পিছিয়ে গিয়েও ৪-৩ করতে পেরেছে সের্জিও আগুয়েরো-রা।

এই সময় লিভারপুলের হয়ে যদি ফিরমিনো-র ভূমিকা প্রশংসিত হয়, তা হলে একই সঙ্গে সমালোচিত হবে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির রহিম স্টার্লিংয়ের পারফরম্যান্স। তাই খেলা শেষ হওয়ার পঁচিশ মিনিট আগে যখন রহিম স্টার্লিংকে তুলে নেওয়া হচ্ছে তখন ওকে ম্যান সিটি সমর্থকরাই বিদ্রুপে ভরিয়ে দিয়েছে। চোট থাকায় এই ম্যাচে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি পায়নি তাদের ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার গ্যাব্রিয়েল জেসুস এবং অধিনায়ক ভিনসেন্ট কোম্পানিকে।

গুয়ার্দিওলা সব সময়েই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে অভ্যস্ত। সেখানে ক্লপ ম্যাচটা শুরু করেছিলেন ৪-৩-৩ ফর্মেশনে। যদিও তাঁর প্রিয় ছক ৪-২-৩-১। ক্লপ জানতেন, ম্যাঞ্চেস্টার সিটির ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারদের গড় বয়স বেশি। তার সুযোগ নিতে হবে উইংয়ের দিকে। আর এই ৪-৩-৩ ছকে সব সময়েই একজন হোল্ডিং মিডফিল্ডারের সঙ্গে দু’জন আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার রাখেন য়ুর্গেন ক্লপ। আর এই দুই আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারের কাজ বল নিজেদের দখলে থাকলে সামনের তিন ফরোয়ার্ডকে সাহায্য করা। ফলে ৪-৩-৩ ছকে খেলা শুরু করলেও ম্যাচ যত গড়ায় ততই লিভারপুলের খেলাটা হয়ে যায় ৪-১-৪-১ ফর্মেশন ভিত্তিক। যেখানে একজন হোল্ডিং মিডফিল্ডার এবং একজন ফরোয়ার্ডকে থাকে চার মিডফিল্ডারের সামনে ও পিছনে। রবিবার রাতে লিভারপুল এবং ম্যাঞ্চেস্টার সিটির ম্যাচটা দেখে তাই অনেক কিছু খুঁটিনাটি বিষয় যে শিখতে পারলাম, সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জয়ের দৌড়ে এই মুহূর্তে য়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল এই মুহূর্তে তিন নম্বরে। এ রকম একটা দুরন্ত ম্যাচ খেলার পরে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, এই জায়গা থেকে কত দূর যেতে পারে লিভারপুল? আমার মতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভাল পারফরম্যান্স করে দেখাতে পারে য়ুর্গেন ক্লপের দল। এটা ঠিক যে ফিলিপে কুটিনহো এই মুহূর্তে লিভারপুলে নেই, কিন্তু তা সত্ত্বেও বাকি মরসুমে জ্বলে ওঠার রসদ ভাল মতোই মজুদ রয়েছে লিভারপুলে। অন্য সব দলই এ বার কিন্তু আরও সমীহ করবে সাদিও মানে, মহম্মদ সালাহ এবং রবের্তো ফিরমিনো-র ত্রিফলাকে। কারণ নিজেদের দিনে ওরা যে কোনও দলকে হারিয়ে দিতে পারে। ক্লপের দলের একমাত্র সমস্যা রক্ষণ এবং গোলকিপারের জায়গাটা। যে কারণে, ৪-১ এগিয়ে গিয়েও ৪-৩ জিততে হয়েছে লিভারপুলকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE