এই পিচ নিয়েই যত বিতর্ক।
প্রথম দিন থেকেই সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে আলোচনার কেন্দ্রে বাইশ গজ। মঙ্গলবার পিচ নিয়ে চর্চা যেন আরও বেড়ে গেল।
মাইকেল হোল্ডিং শুরু থেকে তীব্র সমালোচনা করছিলেন এ রকম উইকেটের। এ দিন আনন্দবাজার-কে কিংবদন্তি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলার বললেন, ‘‘বাজে উইকেট। আমি দেখতে চাই, আইসিসি এই উইকেটটা নিয়ে কী রেটিং দেয়।’’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পিচ নিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে আইসিসি-র নিজস্ব রিপোর্ট কার্ড আছে। ভাল, খুব ভাল থেকে শুরু করে খারাপ, খেলার অযোগ্য— নানা রকম রেটিং থাকে। নাগপুরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ঘূর্ণি পিচে কোহালিরা হারানোর পরে আইসিসি সেই পিচকে ‘পুওর’ আখ্যা দিয়েছিল। হোল্ডিংয়ের কথা অনুযায়ী, সেঞ্চুরিয়নের পিচেরও সে রকমই তকমা পাওয়া উচিত। ‘‘আমি জানি না কেন, এ রকম পিচ বানানো হয়েছে। সত্যিই জানি না,’’ বলে চলেন হোল্ডিং, ‘‘সেঞ্চুরিয়নে আমি কখনও এ রকম পিচ দেখিনি। পিচ মন্থর। এখানে দ্রুতগতির, বাউন্সি উইকেট হয়। সেটা না হয় তা-ও মানা গেল। কিন্তু এত অসমান বাউন্স কেন থাকবে? কোনও বল লাফাচ্ছে, কোনওটা নীচু হয়ে যাচ্ছে।’’
টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করে জেতার ক্ষেত্রে সর্বকালের সেরা উদাহরণ হয়ে আছে একটাই ম্যাচ। ১৯৭৬-এর পোর্ট অব স্পেন এবং চতুর্থ ইনিংসে ৪০৩ রান তাড়া করে ভারতের সেই ঐতিহাসিক জয়। এর চেয়ে বেশি রান চতুর্থ ইনিংসে তাড়া করে আর মাত্র দু’টি দলই টেস্ট জিতেছে। ১৯৪৮ সালে লিডসে ৪০৪ রান তাড়া করে ইংল্যান্ডকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। ২০০২-’০৩ মরসুমে সেন্ট জন্স অ্যান্টিগায় ৪১৮ রান তুলে অস্ট্রেলিয়াকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রিকেটের ইতিহাস বলছে, পোর্ট অব স্পেনে ভারতের সেই ছয় উইকেটে জয় এখনও সর্বকালের তালিকায় তিন নম্বরে। পুরনো সেই সব সাফল্য, ব্যর্থতার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল সেঞ্চুরিয়নে।
পোর্ট অব স্পেনে ৪০৩ রান তাড়া করে ঐতিহাসিক জয়ে শেষ ইনিংসে সুনীল গাওস্করের অবদান ছিল ১০২। গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ করেছিলেন ১১২। মোহিন্দর অমরনাথ করেন ৮৫। বেঙ্গালুরুতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলার অযোগ্য উইকেটে তাঁর ৯৬— সেই মহাকাব্যিক ইনিংসের কথাও শোনা গেল কারও কারও মুখে। সে রকম ইনিংস খেলার লোক কোথায়? যদি বিরাট পারেন। একাকী লড়েও সে দিন গাওস্কর জেতাতে পারেননি। কোহালিও কি পারবেন?
চা-পানের বিরতির পরে পাওয়া গেল তাঁকে। সেঞ্চুরিয়নে কী হতে পারে? কত রানের টার্গেট তাড়া করা সম্ভব? গাওস্কর বলে দিলেন, ‘‘একদমই যেন ২৮০-২৯০ রানের বেশি না হয়। তাতেও কঠিন হবে।’’ কে জানত, ২৮৭ রান তাড়া করতে হওয়াটাও এভারেস্ট অভিযান বলে মনে হবে দিনের শেষে। গাওস্কর তখনই বলছিলেন, ‘‘শুরুটা ভাল হওয়া দরকার। না হলে কিন্তু চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করা কঠিন হবে।’’ পিচের চেয়েও গাওস্কর অবশ্য বেশি করে ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে বলছেন। ‘‘বিদেশ সফর সবে শুরু হল। এর পর ইংল্যান্ড রয়েছে, অস্ট্রেলিয়া রয়েছে। ময়নাতদন্ত করা দরকার, কেন এমন হল।’’
এই ক’দিনে সব চেয়ে বেশি করে গাওস্করের মুখে শোনা গিয়েছে বড় সিরিজে প্রস্তুতির কথা। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পেস ব্যাটারিকে খেলার আগে তিনি ক্যারিবিয়ান দ্বীপপূঞ্জে গিয়ে সেখানকার পেসারদের খেলে তৈরি হতেন। আরও গভীরে গিয়ে ভারতীয় দলের ভাবা উচিত বলে তিনি মনে করছেন।
পিচ নিয়ে যদি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা তোপ দেগেই চলেছেন। গ্রেম স্মিথ প্রথম দিনেই টুইট করেছিলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকান কোনও পিচে স্পিনার তিরিশ ওভার বল করছে, কখনও দেখিনি। কিউরেটরকে অনেক প্রশ্নের মুখে ফেলা উচিত’। এ দিনও কমেন্ট্রিতে স্মিথ বলেছেন, ‘‘সেঞ্চুরিয়নে সব চেয়ে বেশি ওভার বল করছে স্পিনার। ইনিংস শুরু করা হচ্ছে স্পিনারের হাত বল তুলে দিয়ে। কী হচ্ছে, জানি না।’’ এর পরেও ভারতই দিনের শেষে চাপে। স্মিথদের হাত থেকে যাতে নিষ্কৃতি পান কিউরেটররা, তার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরাই।
ভারতে যখন এ বি ডিভিলিয়ার্স-রা এসেছিলেন, ঘূর্ণি বানিয়ে চার টেস্টের সিরিজে ৩-০ হারিয়েছিলেন কোহালি-রা। এ বার দক্ষিণ আফ্রিকার শোধ তোলার পালা। ১-০ এগিয়ে থাকা তারা সেঞ্চুরিয়নে জেতার রাস্তা তৈরি করে ফেলেছেন। এর পর জোহানেসবার্গে হোয়াইটওয়াশের অপেক্ষায় থাকবেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার ডিন এলগার তাঁর অধিনায়ক ফ্যাফ ডুপ্লেসি-র সুরেই বলে গেলেন, ‘‘ভারতের ওই সিরিজ রক্তাক্ত করে দিয়েছিল। নিজেদের দেশে এ বার আমাদের শোধ তোলার পালা।’’
ভারতের সেই সিরিজ ছিল দিওয়ালির সময়। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ঘূর্ণিতে শুইয়ে দিয়ে হ্যাপি দিওয়ালি সেরেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। দক্ষিণ আফ্রিকা এ বার বলতে চায় ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’। সেঞ্চুরিয়নে কাজ প্রায় সেরেই ফেলেছেন এলগার-রা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy