উপহার: ৩০০ তম ওয়ান ডে ম্যাচ খেলতে নামার আগে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির হাতে ভারতীয় টিমের পক্ষ থেকে বিশেষ স্মারক তুলে দিচ্ছেন অধিনায়ক বিরাট কোহালি। বৃহস্পতিবার কলম্বোর প্রেমদাসা স্টেডিয়ামে। ছবি :টুইটার।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনির তিনশোতম ওয়ান ডে উপলক্ষে তাঁকে বিশেষ স্মারক উপহার দিল ভারতীয় দল। বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা রুপোর ব্যাট তাঁর হাতে তুলে দিলেন বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহালি।
ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে অধিনায়ক কোহালি যে ধোনির হাতে বিশেষ স্মারক তুলে দেবেন, সেই খবর বৃহস্পতিবারের আনন্দবাজারেই প্রকাশিত হয়েছিল। কোহালি স্মারক তুলে দিয়ে তাঁর পূর্বসূরিকে নিয়ে যেটা বললেন, সেটা আরও অভিনব। খুবই আবেগপ্রবণ ভাবে বললেন, ‘‘জানি না কী বলব। এই টিমের নব্বই শতাংশ ক্রিকেটার তোমার অধীনে খেলা শুরু করেছে। শুধু এটাই বলতে চাই যে, তুমি সারা জীবনই আমাদের ক্যাপ্টেন থাকবে।’’
আশেপাশে দাঁড়ানো সতীর্থরা তখন প্রিয় ‘এম এস’-এর নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছেন। কোহালির সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ হতেই সকলে হাততালি দিয়ে উঠলেন। কোহালি গিয়ে ‘হাই ফাইভ’ করলেন ধোনির সঙ্গে। বর্তমান অধিনায়কের অসম্ভব শ্রদ্ধা রয়েছে পূর্বসূরির জন্য। সেটা বিভিন্ন সময়ে বেরিয়ে এসেছে। ধোনি অধিনায়ক থাকাকালীন বরাবর সমর্থন করে গিয়েছেন কোহালিকে। তেমনই এখন কোহালি অধিনায়ক হয়ে নানা প্রশ্নের মুখেও ছত্রিশ বছরের ধোনির পাশে দাঁড়াচ্ছেন। দু’জনের মৈত্রীর আর এক দারুণ ছবি তোলা থাকল কলম্বোর মাঠে ধোনির ট্রিপল সেঞ্চুরির ‘মাহিন্দ্রক্ষণ’-এ।
আগ্রাসী: শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে মারমুখী ধোনি। ছবি: পিটিআই ।
ভারতীয়দের মধ্যে ধোনি ষষ্ঠ ক্রিকেটার যিনি তিনশো ওয়ান ডে খেললেন। তাঁর আগে খেলেছেন সচিন তেন্ডুলকর (৪৬৩ ম্যাচ), রাহুল দ্রাবিড় (৩৪০), মহম্মদ আজহারউদ্দিন (৩৩৪), সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (৩০৮) এবং যুবরাজ সিংহ (৩০১)। তিনশোতম ম্যাচে নতুন বিশ্বরেকর্ডও করলেন ধোনি। শন পোলক এবং চামিন্ডা ব্যাস-কে টপকে এক দিনের ক্রিকেটে সব চেয়ে বেশি বার নট আউট থাকার নজির গড়লেন তিনি। পোলক এবং ব্যাস ৭২বার নট আউট ছিলেন। ধোনির নামের পাশে এ দিনের পর ৭৩ নট আউট। যদিও এক রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরি পেলেন না তিনি। ৪২ বলে ৪৯ রান করে অপরাজিত থাকলেন তিনি। ধোনির তিনশোতম ম্যাচে রাজ করলেন এমন দুই ভারতীয় ব্যাটসম্যান, অধিনায়ক হিসেবে যাঁদের প্রবল সমর্থন করেছেন তিনি। বিরাট কোহালি এবং রোহিত শর্মা। একটা সময় নির্বাচকদের মধ্যেও কোহালির যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ ছিল। তাঁকে দলে রাখা নিয়ে নির্বাচকেরা প্রশ্ন তুলেছিলেন। ধোনি যাবতীয় প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, কোহালি ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। তেমনই রোহিতের ধারাবাহিকতা এবং মানসিকতা নিয়ে অনেক কথা উঠেছে। অধিনায়ক থাকার সময় ধোনি তবু প্রবল ভাবে সমর্থন করে গিয়েছেন মুম্বইয়ের ব্যাটসম্যানকে। তিনশোতম ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে কোহালিরা হয়তো প্রিয় প্রাক্তন অধিনায়কের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য পেশ করলেন।
আরও পড়ুন: ‘মনে হচ্ছিল, বিশ্বরেকর্ডই করে ফেলবে’
রেকর্ডের নাম ধোনি
১
আইসিসি ওয়ান ডে বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী একমাত্র অধিনায়ক।
৩৩১
তিন ফর্ম্যাট মিলিয়ে ৩৩১ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করার নজির। ক্রিকেট ইতিহাসে যা আর কারও নেই।
১০১.৮৪
একমাত্র ব্যাটসম্যান, যাঁর রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার ক্ষেত্রে গড় ১০১.৮৪।
২০০
একমাত্র ভারতীয় ব্যাটসম্যান যাঁর দখলে ওয়ান ডে-তে ২০০ ছক্কা হাঁকানোর নজির।
৯
ছক্কা হাঁকিয়ে ওয়ান ডে ম্যাচ জিতিয়েছেন রেকর্ড ৯ বার।
৭৩
বৃহস্পতিবার সব মিলিয়ে ৭৩ বার অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়লেন। টপকে গেলেন শন পোলক ও চামিন্ডা ব্যাসকে।
১৮৩
উইকেটকিপার হিসেবে ওয়ান ডে-তে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড (২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৮৩ নট আউট)।
৫১.৯৩
একমাত্র ব্যাটসম্যান যাঁর তিনশো ওয়ান ডে খেলার পরও গড় পঞ্চাশের বেশি (৫১.৯৩)।
৭৩৭
সব ফর্ম্যাট মিলিয়ে ভারতীয় উইকেটকিপারদের মধ্যে সর্বোচ্চ শিকার (৭৩৭)।
কলম্বোর ম্যাচের আগে আরও একটি ছোটখাটো অনুষ্ঠান হল। অভিষেক ঘটানো শার্দূল ঠাকুরের হাতে ইন্ডিয়া ক্যাপ তুলে দিলেন রবি শাস্ত্রী। সেখানেও পুরো দল সকলে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে শুভেচ্ছা জানাল মুম্বইয়ের মিডিয়াম পেসারকে। হেড কোচ শাস্ত্রী টিমকে বললেন, সিরিজ জেতা হয়ে গিয়েছে। এ বার বাকি কাজটুকুও তোমরা সেরে ফেলো একই রকম নির্দয় থেকে। তবে শার্দূল দশ নম্বর জার্সি পরে খেলায় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন ক্রিকেট ভক্তরা। কারণ, দশ নম্বর জার্সির মালিক যে ছিলেন সচিন তেন্ডুলকর।
এ দিকে আবার ধোনির তিনশোতম ওয়ান ডে ম্যাচে আরও এক জন ট্রিপল সেঞ্চুরি করলেন। কোহালিকে আউট করে এক দিনের ম্যাচে লাসিথ মালিঙ্গা তাঁর তিনশোতম উইকেট পূর্ণ করলেন। আর তার পরেই টিভি স্ক্রিনে অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল। মালিঙ্গাকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানাচ্ছেন রোহিত। কে বলবে মালিঙ্গা প্রতিপক্ষ বোলার এবং তিনি ঠিক তখনই ভারত অধিনায়কের উইকেট তুললেন।
আইপিএলের যুগে এখন যে প্রতিপক্ষ, সে-ই তো আবার সতীর্থ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy