এ ভাবেই ব্রিটিশবাহিনীর কাছে আটকে গেল লিঙ্কনরা।
ইংল্যান্ডের হ্যাটট্রিক-নায়ক রিয়ান ব্রিউস্টারকে দেখে আমার মাইকেল আওয়েনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। আওয়েনের মতো সফল স্ট্রাইকারের সঙ্গে এখনই কোনও অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবলারের তুলনা করাটা হয়তো ঠিক হবে না। আমি তুলনায় যাচ্ছিও না। শূন্যে আওয়েনের মতো ক্ষিপ্রতা খুব কম স্ট্রাইকারেরই হবে।
কিন্তু ব্রিউস্টারের মধ্যে সেই আওয়েন-সুলভ ছটফটানি আর শিকারের অপেক্ষায় ওঁত পেতে থাকা বাঘের বুদ্ধিমত্তার ঝলক দেখলাম। আওয়েনের মতো দ্রুত শট নেওয়ার প্রবণতা। দ্রুত ‘ফ্লিক’ করতে পারে। আওয়েনের মতোই লিভারপুলের অ্যাকাডেমিতে বড় হচ্ছে ব্রিউস্টার। হ্যাটট্রিকের মধ্যে বিশেষ করে দ্বিতীয় গোলটা দেখে আমার মনে আওয়েনের ছবি ভেসে উঠেছে। ফিল ফডেনের ক্রসটা অসাধারণ ছিল। কিন্তু আরও অতুলনীয় লাগল ব্রিউস্টার যে ভাবে জায়গা নিল, সেটা। বলটা যেন ওখানেই আসবে ও জানত। আওয়েনের মধ্যে সঠিক জায়গায় থাকার এই গুণ ছিল। তবে আবারও বলছি, এখনই আওয়েনের সঙ্গে তুলনায় যাচ্ছি না। শুধু বলতে চাইছি, ছেলেটাকে দেখে আমার আওয়েনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল।
ব্রাজিলের গতিহীন ফুটবল দেখতে দেখতে তেমনই আবার মনে হচ্ছিল, পাওলিনহো বা লিঙ্কনকে নিয়ে খুব মাতামাতি কেন হচ্ছে? স্বর্ণযুগের ব্রাজিলের কারও ঝলকই তো এদের মধ্যে নেই। ব্রাজিলের তারকা ফুটবলার মানে আমরা এতকাল ধরে শুনে এসেছি পেলে, গ্যারিঞ্চা, ডিডি, টোস্টাও, ভাভা, রোনাল্ডো, রোনাল্ডিনহোদের নাম। শেষ শুনেছি নেমারের কথা। এদের কারও ধারেকাছেই এখনও রাখতে পারছি না পাওলিনহোদের। আর এই ইংল্যান্ড দলটা বেশ হোমওয়ার্ক করেই এসেছিল। ডাবল কভারিংয়ে রেখে পাওলানিহোকে ভোঁতা করে দিল।
আরও পড়ুন: গতিতেই শেষ করেছি, বলে দিচ্ছেন ব্রিটিশ কোচ
আমি সব চেয়ে অবাক হয়েছি ব্রাজিলের খেলায় গতির অভাব দেখে। বল পজেশনের ওপর জোর দিচ্ছে ওরা। নিজেদের মধ্যে পাস বেশি খেলতে চাইছে। তাতে পরিসংখ্যানের খাতায় হয়তো দেখাবে বল পজেশনে এগিয়ে ব্রাজিল। লাভের লাভ কী হবে? ব্রাজিলের ফুটবল থেকে তো গতিটাই হারিয়ে গিয়েছে। এ দিন যুবভারতীর সেমিফাইনালে সেই কারণেই ইংল্যান্ডের সামনে উড়ে গেল ওরা। ইংল্যান্ড বল নিয়ে উঠছে ঝড়ের গতিতে। আর ব্রাজিল বল পেয়েই খেলাটাকে মন্থর করে দিচ্ছে। আমি নিজে যখন ফুটবল খেলেছি বা কোচিং করিয়েছি, ফুটবলের সহজ পাঠ সব সময় মাথায় রেখেছি। কী সেই সহজ পাঠ? ফুটবলে বলটা পেয়ে আমি কত তাড়াতাড়ি প্রতিপক্ষ বক্সে পৌঁছে যেতে পারছি, সেটার উপরেই নির্ভর করবে খেলার ভাগ্য। কিন্তু এই ব্রাজিল দলকে দেখছি নিজেদের মধ্যে পাস খেলেই যাচ্ছে লক্ষ্যহীন ভাবে। তিকি তাকা ফুটবল এটা নয়। স্পেন বা বার্সেলোনা পাসিং ফুটবল খেলে। কিন্তু পাস খেলে ওরা প্রতিপক্ষের বক্সের দিকে এগোতে থাকে। ব্রাজিল যেটা করছে— নীচের দিকে নামছে, আড়াআড়ি পাস খেলছে, সামনের দিকে গিয়ে আটকে যাচ্ছে। পেনাল্টি বক্সের মধ্যে যে ক্ষিপ্রতা আগের দিন জার্মানির সঙ্গে ম্যাচে সেই ৬ মিনিটের ঝড়ে ওরা তুলতে পেরেছিল, সেটা এ দিন দেখতে পেলাম না। আর তার প্রধান কারণ, ইংল্যান্ডের হোমওয়ার্ক। পাওলিনহো, লিঙ্কন আর অ্যালান ব্রাজিলের তিন সেরা অস্ত্র। সেই ত্রয়ীর মধ্যে যোগাযোগের সূত্রটাই এ দিন কেটে দিয়েছিল ইংল্যান্ড। এর জন্য কৃতিত্ব দিতেই হবে ইংল্যান্ডের কোচ স্টিভ কুপার-কে।
আসলে দু’টো দেশের ফুটবলের মধ্যেও তো অনেক তফাত হয়ে গিয়েছে। ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবলে আগের সেই রমরমা নেই। আবার ইংল্যান্ডে ফুটবলের লিগ খুবই শক্তিশালী। সেখানে সব দেশের ভাল ফুটবলাররা খেলতে আসে। আর ইপিএলের সমস্ত ক্লাবের অ্যাকাডেমি বা যুব দল রয়েছে। সেখান থেকে অনেক নতুন ফুটবলার উঠে আসছে। ইংল্যান্ডের এই অনূর্ধ্ব-১৭ দলটার প্রত্যেকে কোনও না কোনও ইপিএলে ক্লাবের অ্যাকাডেমি বা যুব দলে সাফল্যের সঙ্গে খেলছে। ব্রিউস্টারকে লিভারপুলের হয়ে হয়তো কয়েক দিনের মধ্যেই অভিষেক ঘটাতে দেখা যাবে। জেডন স্যাঞ্চো-কে তো বিশ্বকাপ চলার মাঝেই তুলে নিয়ে চলে গেল বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। আরও এক জনের কথা বলতে চাই। ফিল ফডেন। এ দিন যুবভারতীতে ইংল্যান্ডের ইঞ্জিন ছিল কিন্তু ও-ই। ব্রিউস্টার হ্যাটট্রিক করল কিন্তু অন্তত দু’টি গোল ফডেনের তৈরি করে দেওয়া। এক বার ওর ‘টার্ন’ নেওয়া দেখে য়োহান ক্রুয়েফের সেই মোহময়ী ফুটবল মনে পড়ে গেল।
তাই ব্রাজিলের যেমন স্কিল ছিল, দক্ষতা ছিল, ইংল্যান্ডেরও ছিল। কিন্তু যেটা ইংল্যান্ডের ছিল, সেটা ব্রাজিলের খেলায় পাওয়া যায়নি— গতি। আর ফুটবলে গতি নেই মানে তো সেই দলের হিমোগ্লোবিনই কমে গেল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy