শোকপালন: ইউনাইটেড ফুটবলারদের নীরবতা পালন। ছবি: গেটি ইমেজেস
ফুটবলের শহর আজ বদলে গিয়েছে আতঙ্ক-নগরীতে। যেখানে সের্জিও আগুয়েরো-ভিনসেন্ট কোম্পানিরা দাপিয়ে বেড়াতেন, সেই ম্যাঞ্চেস্টার সিটির এতিহাদ স্টেডিয়ামে বসেছে মেডিক্যাল ইউনিট।
যে ‘রেড ডেভিলস’ টিম বুধবার রাতে ইউরোপা লিগ জয়ের লড়াইয়ে নামছে স্টকহলমের ফ্রেন্ডস এরিনায়, তাদের মধ্যে উৎসাহের চেয়ে আজ আতঙ্কই বেশি। ফুটবল? সেটা যেন চলে গিয়েছে পিছনে।
বুধবার রাতে স্টকহলমের ফ্রেন্ডস এরিনায় আয়াখ্স আমস্টারডামের বিরুদ্ধে ইউরোপা লিগের ফাইনালে নামছে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। কিন্তু ফাইনালের আগের সেই পরিচিত ছবি হারিয়ে গিয়েছে। প্র্যাকটিস শুরুর আগে নীরবতা পালন হয়। প্রথাগত সাংবাদিক বৈঠক বাতিল করে দেয় ম্যান ইউ। কোচ জোসে মোরিনহো এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘আমাদের খেলতে যেতে হবে ঠিকই, কারণ সেটাই আমাদের কাজ। কিন্তু আমাদের মন থেকে এই ঘটনার ভয়াবহ স্মৃতি কিছুতেই মুছে ফেলতে পারছি না। আমরা যে উৎসাহ, আনন্দ নিয়ে একটা ম্যাচ খেলতে যাই, তা কিন্তু পুরোপুরি হারিয়ে গিয়েছে।’’
মঙ্গলবার গভীর রাতে আরিয়ানা গ্র্যান্দের মিউজিক কনসার্টে ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণের ধাক্কাটা আরও বেশি তীব্র হয়ে ধরা পড়ে ভোরের আলো ফুটতে। ঘটনা ঘটার সময় ম্যাঞ্চেস্টার সিটি-র আগুয়েরো ছিলেন আর্জেন্তিনাগামী বিমানে। বুয়েনস আইরসে পা দেওয়ার পরেই এই মর্মান্তিক খবরটা পান সিটির ফুটবলার। এবং তার পরে টুইটারে আগুয়েরোর প্রতিক্রিয়া, ‘এই মাত্র নামলাম। আর বিমানবন্দরে নেমেই ম্যাঞ্চেস্টারের মর্মান্তিক ঘটনার খবরটা পেলাম। প্রার্থনা করছি সবার জন্য।’
আরও পড়ুন: বিরাটদের জন্য কড়া নিরাপত্তা
দু’টো ক্লাবের পক্ষ থেকেই শোকবার্তা জানানো হয়েছে। অঙ্গীকার করা হয়েছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর। ম্যাঞ্চেস্টার সিটি তাদের স্টেডিয়ামের গেট খুলে দিয়েছে আহতদের জন্য। জানিয়ে দিয়েছে, যে কোনও রকম সাহায্যের জন্য তারা প্রস্তুত। তারা তৈরি।
ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের সামনে চ্যালেঞ্জটা আরও কঠিন। এই স্মৃতি দূরে সরিয়ে তাদের নামতে হবে ট্রফি জেতার লক্ষ্যে। ইতিমধ্যেই ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের তরফে উয়েফাকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, কালো আর্মব্যান্ড পরে খেলতে দেওয়ার জন্য। দলের ফুটবলাররা এখনও শোকস্তব্ধ। অনেকেই এই ভয়াবহ ঘটনার রেশ কাটিয়ে উঠতে না পেরে টুইট করেছেন। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির মতোই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইউনাইটেডও। ক্লাবের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আপনি যদি কোনও ভাবে সন্ত্রাসের শিকার হয়ে থাকেন, তা হলে আমাদের জানান। আমরা আপনাদের সাহায্য করতে সব রকম ভাবে তৈরি আছি।’’
তৈরি আছে উয়েফাও। ইউরোপা লিগ ফাইনাল করার জন্য। তারা জানিয়েছে, ফাইনাল বাতিল করা হবে না। এক বিবৃতিতে উয়েফা বলেছে, ‘‘যখন ফাইনালের জায়গা ঠিক হয়, তখন থেকেই আমরা নিরাপত্তার ব্যাপারটা মাথায় রেখেছি। আমাদের কাছে এমন কোনও খবর নেই যে ইউরোপা লিগ ফাইনালের ওপর সন্ত্রাসবাদীদের নজর আছে।’’
সন্ত্রাসবাদীদের নজর থাকুক বা না থাকুক, ফুটবলার এবং ফাইনাল ঘিরে চূড়ান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে প্র্যাকটিসে যাওয়ার সময় ওয়েন রুনিদের গাড়ি তল্লাশি করা হয়। সুইডেনে পা দেওয়ার পর থেকেই ম্যান ইউ ফুটবলারদের ঘিরে ফেলা হবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপে। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে সন্ত্রাসবাদী দমন অফিসাররা সারাক্ষণ থাকবেন ফুটবলারদের সঙ্গে। স্টেডিয়াম ঘিরে ফেলা হবে স্টিলের ফেন্সিংয়ে। লক্ষ্য একটাই। আতঙ্ক নগরীর ছায়া যেন কোনও ভাবেই ফুটবল মাঠে না পড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy