Advertisement
০৫ মে ২০২৪

গম্ভীরদের জোড়া শতরান, তবু আশায় বাংলা শিবির

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের বিয়াল্লিশতম শতরানই করলেন না কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক, একই সঙ্গে বাংলার ফাইনালে যাওয়ার পথেও ছুড়ে দিলেন বড়সড় চ্যালেঞ্জ।

ফর্মে: ধৈর্যশীল ১২৭ রান গৌতম গম্ভীরের। ফাইল চিত্র

ফর্মে: ধৈর্যশীল ১২৭ রান গৌতম গম্ভীরের। ফাইল চিত্র

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
পুণে শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৩
Share: Save:

দিল্লি দলের মধ্যে ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করেন তিনি। দলের সঙ্গে সহসা যাতায়াত করেন না। শোনা যায়, প্রয়োজন ছাড়া বিশেষ কথা বলেন না। গোটা দল যখন আউটের জন্য আবেদন করে, তখন তিনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন। মনে হয়, কোনও ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দাকে দিল্লি দলের সঙ্গে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সেই গৌতম গম্ভীর-ই সোমবার বাংলার বিরুদ্ধে রঞ্জি সেমিফাইনালে করলেন ধৈর্যশীল ১২৭ রান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের বিয়াল্লিশতম শতরানই করলেন না কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক, একই সঙ্গে বাংলার ফাইনালে যাওয়ার পথেও ছুড়ে দিলেন বড়সড় চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে গম্ভীর দেখিয়ে দিয়ে গেলেন পিচে কোনও জুজু নেই। শান্ত মাথায় খেলে গেলে রান করা কোনও কঠিন কাজ নয়। প্রথম দিন যে ভুল করে এখন খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে বাংলা দল।

গম্ভীরের সঙ্গেই এ দিন শতরান করলেন দিল্লির আর এক ওপেনার কুণাল চান্দেলা (১১৩)। এই জোড়া শতরানের দৌলতেই প্রথম ইনিংসে করা বাংলার ২৮৬ রানের জবাবে দ্বিতীয় দিনের শেষে দিল্লির রান ২৭১-৩। বাংলার থেকে দিল্লি এখন পিছিয়ে ১৫ রানে। দিনের শেষ বলে গম্ভীরকে ফিরিয়ে দিয়ে মহম্মদ শামি সামান্য স্বস্তি দিয়েছেন বাংলাকে।

আরও পড়ুন: সিরিজ জিতে নতুন সিরিজ জয়ের বৈঠক

রবিবার প্রথম ইনিংসে বাংলার ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর এ দিন একের পর এক নাটক পুণের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে। সকাল সকালই মাঠে চলে এসেছিলেন স্বাধীনতার পর বাংলার প্রথম রঞ্জি জয়ী দলের অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম দিনের ২৬৯-৭ পুঁজি নিয়ে বাংলা তখন খেলতে নেমেছে সবে। কিন্তু শ্রীবৎস গোস্বামী (২৯)-দের রান বাড়ানোর সেই মরিয়া প্রয়াস শেষ এক ঘণ্টার মধ্যেই। আর তার পরেই শামি, অশোক ডিন্ডা-দের ভুলভ্রান্তির সুযোগ নিয়ে বাংলা বোলিংয়েরওপর দিয়ে স্টিম রোলার চালিয়ে দেওয়া শুরু গম্ভীর, কুণাল-দের। যা দেখে চা পানের বিরতির কিছু পরেই সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বেরিয়ে গেলেন মাঠ ছেড়ে। যাওয়ার আগে বলে গেলেন, ‘‘ভেবেছিলাম তৃতীয় দিন খেলাটা দেখে কলকাতা ফিরব। কিন্তু বাংলার পরিস্থিতি ভাল লাগছে না। তাই আজ রাতেই ফিরে যাচ্ছি।’’

সেমিফাইনাল শুরুর আগে বলা হচ্ছিল, ম্যাচটা নাকি বাংলার বোলারদের সঙ্গে দিল্লির ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু সেই পরীক্ষার প্রথম পত্রে সোমবার প্রায় ব্যর্থই বলা যায় বাংলার বোলিং। লাঞ্চের সময়ই দিল্লির দুই ওপেনার মিলে প্রথম দেড় ঘণ্টায় তুলে দিলেন ৮৮ রান। গম্ভীর তখন ৪৯ এবং কুণাল ৩৯।

আসলে এ দিন প্রথম ও দ্বিতীয় সেশনে বাংলার তিন জোরে বোলার ডিন্ডা, শামি এবং বি. অমিত (১-৪৭) কেউই ছন্দে ছিলেন না। একে রোদের তেজ বাড়ার সঙ্গে সহজ হয়ে আসা পিচ। তার ওপর শামি-র সেই আগুনে গতিও দেখা যায়নি। সঙ্গে বি অমিতের নেতিবাচক বোলিং। বাংলার বোলাররা প্রতি ওভারেই একটা করে হাফ ভলি বা স্কোয়ার কাট মারার বল দিচ্ছিলেন দিল্লির দুই ওপেনারকে। আর তার চূড়ান্ত সুযোগ নিচ্ছিল দিল্লি। প্রশ্ন উঠছে, লাঞ্চের চার-পাঁচ ওভার আগে কেন স্পিনার আনা হল না। প্রথম দেড় ঘণ্টায় এ দিন এক ওভারও করতে দেখা গেল না আমির গনিকে।

লাঞ্চের সময় যখন সিএবি প্রেসিডেন্ট কলকাতা থেকে পুণের মাঠে এসে পৌঁছলেন তখন বাংলার ক্রিকেটারদের কাঁধ প্রায় ঝুলে পড়ার মতো অবস্থা। যা দেখে চা পানের বিরতিতে নিজেই বাংলার ড্রেসিংরুমে ছুটে গেলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সেখানে নাকি শামিদের এই পরিস্থিতিতে কী করা দরকার, তা বুঝিয়ে বলে আসেন। কী বলেছেন, জানতে চাইলে সৌরভের উত্তর, ‘‘ওদের কাছে ক্রিকেটের কথা বলতে গিয়েছিলাম। এর বেশি কিছু বলব না।’’ এর পরেই বাংলার বোলারদের কিছুটা নড়েচড়ে বসা। আর তাতেই তৃতীয় সেশনে গম্ভীর-সহ তিন উইকেট। কিন্তু তার আগেই বিনা উইকেটে দিল্লির রান ২০০ ছাড়িয়েছে। শতরান করে ফেলেছেন দিল্লির দুই ওপেনার।

গম্ভীর হোটেলে ফেরার সময় কারও সঙ্গে কথা বলেননি। কিন্তু ভিজি ট্রফির সেমিফাইনাল ও ফাইনালে জোড়া ত্রিশত রানকারী কুণাল চান্দেলা বলে গেলেন, ‘‘গম্ভীর ভাই বার বার বলছিল, নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলতে। বাংলার বোলারদের নাম না মনে রেখে বল দেখতে বলছিল বার বার। তাতেই শতরান আসে।’’

বাংলা শিবির অবশ্য এখনও মনে করছেন ম্যাচের রাশ হাতেই রয়েছে। কোচ সাইরাজ বাহুতুলে বলছেন, ‘‘মঙ্গলবার সকালে পিচের সজীবতা কাজে লাগিয়ে দিল্লিকে কম রানে আটকে রাখতে হবে। খেলা এখনও প্রচুর বাকি রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE