Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দু’গোলের খোঁচা খেয়ে স্পেনকে পাঁচ গোলে ওড়াল ইংল্যান্ড

কে বলবে এখানে ডেভিড ডে গিয়া, জোর্দি আলবা, বুসকেটসরা খেলছিলেন না। এই স্পেনের খেলা দেখে কিন্তু তা বোঝার উপায় নেই। নিশ্চয়ই সিনিয়র দলের বড় বড় নামেরা এই অনূর্ধ্ব-১৭ দলের খেলা দেখে আশ্বস্ত হবেন।

উচ্ছ্বাস: ম্যাচ শেষে যুব বিশ্বকাপের নয়া চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ছবি ফিফার সৌজন্যে।

উচ্ছ্বাস: ম্যাচ শেষে যুব বিশ্বকাপের নয়া চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ছবি ফিফার সৌজন্যে।

সুচরিতা সেন চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ২২:০৪
Share: Save:

ইংল্যান্ড ৫ (ব্রিউস্টার, মর্গ্যান, ফোডেন-২, গুয়েহি)
স্পেন ২ (গোমেজ-২)

শেষ বাঁশি বাজতেই রিজার্ভ বেঞ্চ ছেড়ে দে ছুট। সোজা মাঠে সতীর্থদের গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। আর তখনই যুবভারতীতে জ্বলে উঠল হাজার হাজার আলো। যুব বিশ্বকাপের নবমী নিশিতে দাঁড়িয়ে নয়া চ্যাম্পিয়নকে স্বাগত জানাল কলকাতা।

২-০তে পিছিয়ে পড়া। সেখান থেকে ৫-২এ বিশ্বকাপ জয়! প্রথম থেকেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বার্তা দিয়ে রেখেছিল ইংল্যান্ড। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ পেল নতুন চ্যাম্পিয়ন। অল-উইন চ্যাম্পিয়ন। পুরো টুর্নামেন্টে একটিও ম্যাচ হারেনি ইংল্যান্ড। দ্বিতীয়ার্ধে ইংল্যান্ড সমতায় ফিরতেই হারিয়ে গেল স্পেন। এর পর কলকাতার বুকে শুধুই চলল ব্রিটিশ রাজ।

আরও পড়ুন
খেলল মালি, জিতল ব্রাজিল

কে বলবে এখানে ডেভিড ডে গিয়া, জোর্দি আলবা, বুসকেটসরা খেলছিলেন না। এই স্পেনের খেলা দেখে কিন্তু তা বোঝার উপায় নেই। নিশ্চয়ই সিনিয়র দলের বড় বড় নামেরা এই অনূর্ধ্ব-১৭ দলের খেলা দেখে আশ্বস্ত হবেন। এসে গিয়েছে পরবর্তী প্রজন্ম। দেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎরা তৈরি।

গোল করার পর ফোডেন। ছবি ফিফার সৌজন্যে।

উল্টো দিকে তখন ইংল্যান্ড শিবিরে জো হার্ট, গ্যারি কাহিল, স্টুরিজ, রহিম স্টার্লিংদের ঝলক। বিশ্বকাপের প্রকৃত ফাইনাল হয়তো একেই বলে। সমানে সমানে। তাও প্রথমার্ধের শেষে ২-১ গোলে এগিয়ে থাকল স্পেন। ইংল্যান্ডকে ভুগতে হল রক্ষণের দুর্বলতার জন্য। সঙ্গে ফিনিশিংয়ের অভাব। যা প্রথমার্ধের শেষে একটু হলেও মেটাল ব্রিউস্টার তার দুরন্ত হেডে। দ্বিতীয়ার্ধে ইংল্যান্ডকে সমতায় ফেরাল মর্গ্যান। ২-০ গোলে পিছিয়ে পরে সমতায় ফিরে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেল ব্রিটিশরা। যার ফল ৭০ মিনিটে ৩-২এ এগিয়ে যাওয়া।

আরও পড়ুন
এ ভাবেও গোল খাওয়া যায়! তা-ও বিশ্বকাপে

স্পেনের আক্রমণটা শুরু হয়েছিল মাঝমাঠ থেকেই। অধিনায়ক আবেল রুইজের লম্বা পাস বক্সের বাঁ দিকে পেয়ে গিয়েছিল জুয়ান মিরান্ডা। ইংল্যান্ড গোলকিপারের কড়া নজরে তখন জুয়ান। সেই সুযোগটিই নিল সে। একটা ছোট্ট টোকায় বক্সের মধ্যেই বল পাঠিয়ে দিল সিজার গেলাবার্তের কাছে। গোলেই শট নিয়েছিল সিজার। গোলকিপার তখনও ঝুঁকে বাঁ দিকে। সিজারের শটে গোল নিশ্চিত করে গেল সার্খিও গোমেজ। তখন রেফারির ঘড়িতে সবে ন’মিনিট। স্পেনও জানত, ‘আর্লি গোল’ ধরে রাখা কঠিন। তাই প্রথম গোলের পরে যেন আক্রমণে আরও ঝাঁঝ বাড়াল স্পেন। যার ফল ৩০ মিনিটে আবারও সেই জুটির চমক। এ বার ডান দিক থেকে। সেই অধিনায়ক আবেল রুইজ থেকে সিজার হয়ে গোমেজের বাঁ পায়ের দুরন্ত শট। কিছুই করার ছিল না ইংল্যান্ড গোলকিপারের।

ইংল্যান্ড-স্পেন ম্যাচের একটি মুহূর্ত। ছবি: রয়টার্স।

ছোটদের বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখাল গতির খেলা। ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিট যেন শেষ হয়ে গেল কয়েক সেকেন্ডে, চোখের নিমেষে। স্পেনের তিকিতাকা আর ইংল্যান্ডের আক্রমণে দুরন্ত গতির খেলায় যেন দম নেওয়ার সময় পাওয়া গেল না। ৯ মিনিটেই খেলা ঘুরিয়ে দিল স্পেন। তার আগেই ম্যাচ শুরুর প্রথম মিনিটেই ইংল্যান্ডের হয়ে নিশ্চিত গোল করেই ফেলেছিল মর্গ্যান। মাথার উপর দিয়ে লাফিয়ে সেই বল বাইরে পাঠাল আলভারো। এর পর গোল আবার গোলের সুযোগ আর গোল। স্পেন যেন ছিনিয়ে নিচ্ছিল সবটা।

তখনই ইংল্যান্ডের পাল্টা আক্রমণ। বাঁ দিক থেকে কালামের মাপা শট। কিন্তু কালাম আর গোলের মধ্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়াল পোস্ট। তখন ম্যাচের বয়স ৪২। প্রথমার্ধে ব্যবধান না কমিয়ে রাখলে দ্বিতীয়ার্ধে দু’গোল শোধ করাটা কঠিন হয়ে যেত ইংল্যান্ডের জন্য। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ৪৪ মিনিটে হ্যাটট্রিক ম্যান ব্রিউস্টারের দুরন্ত হেড। ডান দিক থেকে স্টিভেনের মাপা ক্রসটা গোলে পাঠাতে ভুল করেনি বিশ্বকাপে জোড়া হ্যাটট্রিকের অধিকারী। অতিরিক্ত সময়ে বক্সের বাইরের ডি থেকে সেই ব্রিউস্টারের ফ্রি কিকটাই মাথার উপর দিয়ে বাঁচিয়ে দিল স্পেন গোলকিপার আলভারো।

ম্যাচ শেষে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা। ছবি ফিফার সৌজন্যে।

দ্বিতীয়ার্ধে যেন দু’দলকেই অনেকটা সংযত দেখাল। কিছুটা রক্ষণাত্মক স্পেন। অপেক্ষা করে থাকল কাউন্টার অ্যাটাকের। তার মধ্যেই সমতায় ফিরল ইংল্যান্ড দারুণ দক্ষতায়। ফোডেন থেকে স্টিভেন হয়ে আসা চলতি বলেই মর্গ্যানের জোড়াল শট সরাসরি চলে গেল স্পেন গোলে। ম্যাচের প্রথম মিনিটে যে চেষ্টা কাজে লাগেনি তা গোল হয়ে এল ৫৮ মিনিটে মর্গ্যানের নামে। হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাসকে সম্বল করেই আবারও আক্রমণে ফিরল ইংল্যান্ড। যেন ইউরোর বদলা নিতে নেমেছে দল। সেই ম্যাচ্ ২-২ থেকে টাইব্রেকারে হারতে হয়েছিল ইংল্যান্ডকে। ৭০ মিনিটে কালামের ক্রস থেকে ফোডেনের অসাধারণ ফিনিশ।

এর পরই গোল পেতে মরিয়া স্পেনের সুযোগ গোল লাইন সেভ করল স্টিভেন। ৮৪ মিনিটে ইংল্যান্ডকে জয়ের স্বাদ প্রায় পাইয়ে দিয়েছিল মার্ক গুয়েহি। স্পেনের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দিল সেই ফোডেন। তার সোলো অ্যাটাকে ছিটকে গেল স্পেন রক্ষণ। গোলকিপার তখন শুধুই দর্শক। ইউরোর হার ভুলে নতুন ইতিহাস লিখল ইংল্যান্ড। তার মধ্যেই হাল্কা ঝামেলায় জড়াল ফুটবলাররা। যদিও রেফারি সামলে নিলেন ভাল মতোই। নবমী নিশিতে ব্রাজিলের যুবভারতী রাতারাতি হয়ে গেল ইংল্যান্ডের।

ইংল্যান্ড: অ্যান্ডারসন, জর্জ (কোনর), গুয়েহি, জোয়েল, স্টিভেন, জোনাথন, ফোডেন, তাশান (অ্যাঞ্জেল), কালাম, মর্গ্যান (কিরবি), ব্রিউস্টার।
স্পেন: আলভারো, মাতেউ, জুয়ান, হুগো, ভিক্টর, আন্তোনিও (কার্লোস), মৌখলিস, টোরেস, রুইজ, গোমেজ, গেলাবার্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE