Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঘরে-বাইরে ভাবনাটাই ভুলে যেতে চান বিরাট

বরাবর খেলাধুলোর পৃথিবীতে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে বিষয়টি প্রাধান্য পেয়ে এসেছে। সব সময় মনে করা হয়েছে, নিজের ঘরের বাইরে জেতাটা বেশি কৃতিত্বের। ফুটবলের মতো কিছু খেলায় অ্যাওয়ে ম্যাচের পারফরম্যান্স স্কোরলাইনেও আলাদা গুরুত্ব পায়। ক্রিকেটে এখন আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে বিদেশে জয় মানে বেশি পয়েন্ট।

জয়ী: শ্রীলঙ্কার মাটিতে সিরিজ জেতার পরে টিম কোহালি। ছবি: এএফপি।

জয়ী: শ্রীলঙ্কার মাটিতে সিরিজ জেতার পরে টিম কোহালি। ছবি: এএফপি।

সুমিত ঘোষ
কলম্বো শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৫৮
Share: Save:

বিরাট কোহালি জমানায় নানা নতুন সংস্কার ভারতীয় দলের সঙ্গে যোগ করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু সব চেয়ে চমকপ্রদ সংযোজনের কথা ঘোষণা করে দিয়ে গেলেন স্বয়ং অধিনায়ক। ররিবার সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের মাঠে সিরিজ নিশ্চিত করার পর সাংবাদিক সম্মেলনে এসে কোহালি বলে দিলেন, দেশ-বিদেশ ভাবনাটাই তাঁরা তুলে দিতে চাইছেন।

কী রকম? কোহালির ব্যাখ্যা, ‘‘আমরা দেশে খেলছি না বিদেশে, এই ব্যাপারটাকে আর মাথাতেই রাখতে চাইছি না। বরং টিমের মধ্যে এমন একটা মনোভাব গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে যাতে একটা টেস্ট ম্যাচকে শুধু টেস্ট ম্যাচ হিসেবেই দেখা হবে। ম্যাচটা আমরা কোথায় খেলছি, সেটা মাথায় রাখব না।’’

বরাবর খেলাধুলোর পৃথিবীতে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে বিষয়টি প্রাধান্য পেয়ে এসেছে। সব সময় মনে করা হয়েছে, নিজের ঘরের বাইরে জেতাটা বেশি কৃতিত্বের। ফুটবলের মতো কিছু খেলায় অ্যাওয়ে ম্যাচের পারফরম্যান্স স্কোরলাইনেও আলাদা গুরুত্ব পায়। ক্রিকেটে এখন আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে বিদেশে জয় মানে বেশি পয়েন্ট। কিন্তু কোহালি নতুন তর্কই তুলে দিয়ে গেলেন। তাঁকে সাংবাদিক সম্মেলনে আনন্দবাজার প্রশ্ন করে, বিদেশে হোয়াইটওয়াশের সামনে দাঁড়িয়ে দল। পাল্লেকেলে জিতলে ৩-০ হবে। আপনি কতটা উত্তেজিত? আপনার দলের উপরই বা এই জয়ের কী প্রভাব পড়তে পারে?

আরও পড়ুন: শাস্ত্রীর মতে, টেস্টে দেখা সেরা কিপিং ঋদ্ধির

কোহালি দীর্ঘ জবাব দিতে গিয়ে বললেন, ‘‘সিরিজ জিততে পারাটা নিশ্চয়ই সুখকর একটা অনুভূতি। ইয়েস, হোয়াইটওয়াশেরও একটা সম্ভাবনা আছে। কিন্তু আমরা এখন আর টেস্ট ম্যাচ ক্রিকেটকে হোম বা অ্যাওয়ে দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে চাইছি না। আমরা টেস্ট ম্যাচকে শুধুই টেস্ট ম্যাচ হিসেবে দেখছি। কোথায় খেলছি, সেটা নিয়ে ভাবব না। যেখানেই খেলি, জেতাটাই আমাদের লক্ষ্য। যদি নিজেদের দক্ষতার উপর যথেষ্ট বিশ্বাস আমাদের থাকে, তা হলে কোথায় খেলছি সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে না।’’

ভারতের কোনও অধিনায়কের মুখে কখনও এমন দর্শনের কথা শোনা যায়নি। সকলে বিদেশে জয়কে বেশি কৃতিত্বের বলে সব সময় মনে করেছেন। কোহালির ভাবনা যদি বাস্তবায়িত করা যায়, নতুন অভিনবত্ব যোগ করবে ক্রিকেটে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শ্রীলঙ্কা সফরের শুরুতেই এ নিয়ে টিম মিটিংয়ে কথা হয়েছে। সেখানে অধিনায়ক কোহালি এবং কোচ রবি শাস্ত্রী এই ভাবনার কথা টিমকে বলেন যে, বিদেশে এসেও নিজের দেশের মতো আপন করে নিতে হবে। দেশ-বিদেশ বলে আলাদা করে কিছু রাখা যাবে না। তবেই আমরা নিজেদের ক্রিকেটকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে পারব।

আগামী এক বছরে কোহালির ভারত বেশির ভাগ ক্রিকেট খেলবে বিদেশে। কঠিন সব সফর রয়েছে তাঁদের। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেতে হবে বছরের শেষের দিকে। তার পর আগামী বছরের মাঝামাঝি ইংল্যান্ডে দীর্ঘ সফর। নানা চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি হওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছেন কোচ শাস্ত্রী এবং অধিনায়ক কোহালি জুটি। ঘরে-বাইরে প্রথা মন থেকে মুথে ফেলাটা তারই অঙ্গ। এর মনস্তাত্ত্বিক সুবিধে হচ্ছে, বিদেশে গিয়ে প্রতিকূল পরিবেশ দেখে বুক কাঁপবে না যে, কী করে এই কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেব। এমনও শোনা গেল যে, বিদেশে গিয়ে আরও বেশি করে বাইরে একসঙ্গে বেরনোর অভ্যেস গড়ে তোলা হবে। আরও বেশি করে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করা হবে। যাতে বাইরে এসে যেন কখনও মনে না হয় যে, বিদেশ বিভুঁইয়ে এসে পড়েছি। প্রবাসে দৈবের বশে জীবতারা যদি খসে— এই ঝুঁকিটাই ছেঁটে ফেলার চেষ্টা হবে।

কোহালির বিশ্বাস, তিনি এবং তাঁর টিম এই নতুন নীতি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন। ‘‘টিমের মধ্যে আমি সেই এনার্জিটা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের শুধু টেস্ট ম্যাচ জেতার উপর মনঃসংযোগ করতে হবে। সেটা যে পিচেই হোক, যে কোনও পরিবেশেই হোক। আমরা জেতার অভ্যেস গড়ে তুলতে চাইছি। ড্রেসিংরুমে একে অন্যের সাফল্যে আমরা সত্যিই খুব আনন্দিত হই, গর্বিত হই। সেটাই আমাদের ধারাবাহিক সাফল্য এনে দিচ্ছে।’’

রেকর্ড এবং পরিসংখ্যান শুধু কোহালির টিমের হয়ে কথা বলছে না। তাঁদের হয়ে দৌড়চ্ছে। মাত্র আট দিনের ক্রিকেটে তাঁরা সিরিজ জিতে নিলেন শ্রীলঙ্কায়। কুশল মেন্ডিস এবং দিমুখ করুণারত্নের জোড়া সেঞ্চুরি বাদ দিলে তেমন কোনও প্রতিরোধের মুখেও তাঁদের পড়তে হল না। তবে এ দিন ভারতীয় বোলাররা লাইন-লেংথে পরিবর্তন করে নেমেছিলেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানদের সুইপ আর রিভার্স সুইপ আটকানোর জন্য। প্রায় প্রত্যেক শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান এর পরেও দুঃসাহসিক শট খেলার প্রবণতা চালিয়ে গেলেন।

যা সত্যিই অবাক করার মতো। এমনকী, নাইটওয়াচম্যান পুষ্পকুমার রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে বোল্ড হলেন। কমেন্ট্রি বক্সে বসে যা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করলেন সুনীল গাওস্কর। দশ নম্বর ব্যাটসম্যানও রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে বোল্ড হল দেখে সানি মন্তব্য করেন, ‘‘ওকে হিন্দিতে একটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে আমার। অপনা অওকত নহী ভুলনা। বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানেরাও এই পরিস্থিতিতে রিভার্স সুইপ মারার সাহস দেখাবে না। পুষ্পকুমার ভুলে গিয়েছিল যে, ও আসলে দশ নম্বর ব্যাটসম্যান।’’

কোহালি যদিও শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে গেলেন। তার পরেও বললেন, ‘‘আমরা গত কাল মাতর দু’টো উইকেট ফেলতে পেরেছিলাম। কিন্তু টিমের মধ্যে এটাই কথা হয়েছিল যে, ওদের এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাটিং বেশিক্ষণ টানা সম্ভব হবে না। আমরা তরতাজা অবস্থায় আজ নামলাম। ওদের আরও দু’টো সেশন খেলতে হতো অন্তত। সেটা মোটেও সহজ ছিল না।’’

আরও একটা টেস্ট জয়। আর একটা সিরিজ জিতে স্মারক স্টাম্প নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরা। বিরাট রাজার রথ কিন্তু অশ্বমেধের ঘোড়ার মতোই অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE