Advertisement
০৪ মে ২০২৪
ভুবনেশ্বরে সোনা দেবশ্রীর

প্রমাণ করব, জেদ মেয়ের

গত অলিম্পিকে চারশো মিটার রিলেতে জাতীয় দলে থাকলেও শেষ পর্যন্ত মাঠে নামা হয়নি দেবশ্রী মজুমদারের। আর তাতেই যেন আরও রোখ চেপে গিয়েছিল তার। রবিবার ভুবনেশ্বরে এশীয় অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতে যেন তার যোগ্য জবাব দিল সে।

পদক হাতে দেবশ্রী। নিজস্ব চিত্র

পদক হাতে দেবশ্রী। নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার
নাকাশিপাড়া শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৭ ০১:৪৬
Share: Save:

ভোরে দিদির পিছনে ছোটা শুরু করে ছিল ছোট মেয়েটা। নাকাশিপাড়ার তৈবিচারা গাঁ থেকে ছুটতে-ছুটতে সে এখন পৌঁছে গিয়েছে আন্তর্জাতিক ট্র্যাকে।

গত অলিম্পিকে চারশো মিটার রিলেতে জাতীয় দলে থাকলেও শেষ পর্যন্ত মাঠে নামা হয়নি দেবশ্রী মজুমদারের। আর তাতেই যেন আরও রোখ চেপে গিয়েছিল তার। রবিবার ভুবনেশ্বরে এশীয় অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতে যেন তার যোগ্য জবাব দিল সে।

চার মেয়ের মধ্যে ছোট দেবশ্রীকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন তার ডিপ টিউবওয়েল অপারেটর বাবা মন্মথরঞ্জন মজুমদার। তাঁর বড় মেয়ে তনুশ্রীও খেলাধুলোয় ভাল ছিল। কিন্তু নানা কারণে বেশি দিন ধরে রাখতে পারেনি। ভোরে বড়দির পিছু-পিছুই গাঁয়ের রাস্তায় ছোটা শুরু করেছিল দেবশ্রী। দিদির দৌড় থেমে গেলেও সে থামেনি। বরং গাঁয়ের রাস্তা টপকে সে গিয়ে হাজির হয় বেথুয়াডহরি সুপার মার্কেটের মাঠে। জেলা স্তরে সাফল্য দেখে তাকে কৃষ্ণনগরে ডেকে নেন পোড় খাওয়া কোচ শ্যামল সেন। তাঁর কথায়, ‘‘শরীরটা তৈরি না হলেও দেবশ্রীর গতি ছিল মারাত্মক। আর ছিল অসম্ভব পরিশ্রম করার ক্ষমতা।’’

আরও পড়ুন: শাস্ত্রীই কোচ, রাহুলদের নিয়ে নাটক

কৃষ্ণনগরে অনুশীলন করার সময়ে দেবশ্রী নজরে পড়ে সাই কর্তাদের। ২০০৫ সালে সে ভর্তি হয় সাই-তে। সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে আচমকা মৃত্যু হয় মন্মথবাবুর। পরিবারের মাথার উপর থেকে ছাতা সরে যায়। কিন্তু তাতেও হার মানেনি দেবশ্রী। বরং জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক স্তরে একের পর এক পদক জিতেছে। ২০১৪ সালে এশিয়াডে চারশো মিটার রিলে-তে সোনা, এ বছরে এশিয়ান ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে রুপো। বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স মিটে জাতীয় দলের প্রতিনিধি হয়ে উড়ে গিয়েছে বেজিং।

এর মধ্যে চলেছে পড়াশোনাও। সাই-য়ে প্রশিক্ষণ নিতে নিতে ২০০৩ সালে তৈবিচারা অক্ষয় হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে দেবশ্রী। পরে বেথুয়াডহরি জেসিএম হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক। মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশও করে ফেলেছে সে। তার ছোড়দি শতাব্দী বলেন, “বোনের এক লক্ষ্য, বাবার স্বপ্ন সফল করা।”

চাঁচের বেড়ার একচিলতে ঘরে একা থাকেন দেবশ্রীর মা মেনকা। যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছেন মেয়ের সমস্ত মেডেল। বললেন, “মানুষটা ছোট্টবেলাতেই চিনেছিল মেয়েকে। বলত, ‘দেখো, এ মেয়ে দৌড়ে অনেক দূর যাবে’।” ভুবনেশ্বরে ট্র্যাকে নামার আগে দিদিকে ফোন করে দেবশ্রী বলেছিল, “অলিম্পিকে মাঠেই নামতে পারিনি। এ বার প্রমাণ করেই ছাড়ব।”

প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE