Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

অনেক ভোট করেছিস, হুমকি শুনলেন ভোটার

ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যেই দাঁড়িয়ে তৃণমূলের ২৫-৩০ জন। সিপিএম সমর্থক ভোটার দেখলেই তাঁরা কাছে গিয়ে বলছেন, “৩৪ বছরে অনেক ভোট করেছিস। গরমের মধ্যে না থেকে বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়!” ভোটারদের মধ্যে থেকে প্রতিবাদ এল না। শাসক দলের সঙ্গে বিবাদে না গিয়ে বাড়িমুখো হলেন। পুলিশ দাঁড়িয়ে একটু দূরেই।

সৌমেন দত্ত
মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০৪:৪৯
Share: Save:

ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যেই দাঁড়িয়ে তৃণমূলের ২৫-৩০ জন। সিপিএম সমর্থক ভোটার দেখলেই তাঁরা কাছে গিয়ে বলছেন, “৩৪ বছরে অনেক ভোট করেছিস। গরমের মধ্যে না থেকে বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়!” ভোটারদের মধ্যে থেকে প্রতিবাদ এল না। শাসক দলের সঙ্গে বিবাদে না গিয়ে বাড়িমুখো হলেন। পুলিশ দাঁড়িয়ে একটু দূরেই।

ঘটনাস্থল: আউশগ্রামের ওয়ারিশপুর। আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট বর্ধমান জেলার এই তিন অঞ্চলই বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল এই তিন বিধানসভা কেন্দ্রেরই দলীয় পর্যবেক্ষক। বুধবার এই সব জায়গায় তৃণমূল এক তরফা ভোট করিয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। ঠিক যেমন করিয়েছে, বীরভূমের নানুর ও লাভপুরে। কোথাও ভোটারকে আটকে, কোথাও বুথ থেকে এজেন্টকে তাড়িয়ে, আবার কোথাও ভোটার স্লিপ কেড়ে নিয়ে এই তিন এলাকায় পরের পর বুথ দখল করার অভিযোগও উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলকোটের দেবগ্রাম, উনিয়া ও কেশবপুরে মঙ্গলবার রাত থেকেই সিপিএম সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুথ পর্যন্ত না যাওয়ার শাসানি ছিল। কেশবপুরে সিপিএম সমর্থকেরা ওই হুমকির প্রতিবাদ করায় রাতেই মারপিট হয়। অভিযোগ, সকাল থেকে পাড়ায় পাড়ায় লোক ‘নিয়োগ’ করে রেখেছিল তৃণমূল। ফলে, অনেকেই বুথ-মুখো হতে পারেননি। জেলাশাসককে ফোন করে সিপিএম নেতারা অভিযোগ করেন। তখন কেন্দ্রীয় বাহিনী গিয়ে তৃণমূলের লোকজনকে সরিয়ে দেয়। এলাকার কিছু সিপিএম কর্মীর কথায়, “সকাল থেকে বেরোতেই পারছিলাম না। ওদের সরিয়ে দেওয়ার পর বুথে যাই। কিন্তু বুথের পাশে তৃণমূলের এক জন দাঁড়িয়ে।” মঙ্গলকোট ও দেউলগ্রামেও দেখা যায়, ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ইভিএমের বোতাম টিপিয়ে দিচ্ছে তৃণমূল। সিপিএমের ভাগীরথী অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক দুর্যোধন সরের অভিযোগ, “মঙ্গলকোটে ৫৬টি বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোট দিয়েছে তৃণমূল।”

সকাল থেকেই মোবাইলে একের পর এক অভিযোগ শুনে ক্লান্ত হয়ে পড়েন বোলপুর কেন্দ্রের কমিশনের পর্যবেক্ষক (সাধারণ) রাজেশ যাদব। পৌনে ১০টা নাগাদ তাঁকে পাওয়া গেল কেতুগ্রামের কোশীগ্রাম বুথে। এমন সময় দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কন্ট্রোল রুম থেকে ফোন এল তাঁর মোবাইলে। হতাশার সুরে রাজেশ বললেন, “ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে অভিযোগ আসছে। সে জন্য আমাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।” ফোন শেষ হতেই কেতুগ্রাম থেকে গোলমালের খবর। বেরিয়ে গেলেন পর্যবেক্ষক।

মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া গ্রামে উলাঙ্গীনী বিদ্যালয়ে ভোট দিতে যাওয়ার সময় আদিবাসী ভোটারদের পথ আটকানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কেতুগ্রাম আমগোড়িয়া গ্রামের উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনটি বুথেই বিরোধীদের কোনও এজেন্ট ছিল না। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরাই ভোটারদের বুথ পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই তিন অঞ্চলেই এ দিন বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে বেশির ভাগ সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বিভিন্ন থানায় বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। গত লোকসভা বা বিধানসভা ভোটের মতো এলাকায় ‘রুট মার্চ’ করতে জওয়ানদের দেখা যায়নি। দিনের শেষে তাই সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদারের কটাক্ষ, “কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোনও ভূমিকা ছিল না। নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক যতটা গর্জালেন, ততটা বর্ষালেন না!”

অফিস ভাঙচুর

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও মুর্শিদাবাদে অথর্লগ্নি সংস্থার অফিস ও এক এজেন্টের বাড়িতে ভাঙচুর লুঠপাট চালাল জনতা। বুধবার সকালে এক খুনের অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে মগরাহাটে একটি লগ্নি সংস্থার অফিস লুটপাট ও ভাঙচুর করে বাসিন্দারা। রাস্তাও অবরোধ করা হয়। পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। অন্য দিকে, এ দিন দুপুরে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির বালিয়া গ্রামে অন্য একটি লগ্নি সংস্থার এজেন্টের বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালান ওই সংস্থারই সাব-এজেন্টরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

soumen dutta mangalkot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE