Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

অশান্তি অব্যাহত ভোটের ফল ঘোষণার পরেও

ভোটের ফল ঘোষণার পরেও রাজনৈতিক অশান্তি অব্যাহত রইল রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়। উত্তরবঙ্গের দিনহাটা বা দক্ষিণবঙ্গের আরামবাগ, বারাসত, কাঁকসার মতো ‘অশান্ত’ জায়গাগুলিতে সিপিএমের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বেশ কিছু জায়গায় শাসকদলের নিশানায় পড়েছে বিজেপিও।

অশোকনগরে হামলার পরে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

অশোকনগরে হামলার পরে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৪ ০২:৫৬
Share: Save:

ভোটের ফল ঘোষণার পরেও রাজনৈতিক অশান্তি অব্যাহত রইল রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়। উত্তরবঙ্গের দিনহাটা বা দক্ষিণবঙ্গের আরামবাগ, বারাসত, কাঁকসার মতো ‘অশান্ত’ জায়গাগুলিতে সিপিএমের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বেশ কিছু জায়গায় শাসকদলের নিশানায় পড়েছে বিজেপিও।

শুক্রবার রাতে বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের অশোকনগর থানার ২ নম্বর পিএল ক্যাম্প এলাকায় সিপিএম সমর্থকদের বাড়ি-বাড়ি ঢুকে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত কিছু দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদারের জয়ের আনন্দে এক দুষ্কৃৃতীর নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক পিকনিকের ব্যবস্থা করেছিল এলাকায়। মদ্যপ অবস্থায় রাত ১১টা নাগাদ ওই দলটি প্রথমে সিপিএম সমর্থকদের বাড়ির সামনে বাজি ফাটাতে শুরু করে। এরপর বাড়ি-বাড়ি ঢুকে ছেলেদের মারধর করে তারা। মহিলারা ঠেকাতে গিয়ে আক্রান্ত হন। সোমা রায় নামে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলার পেটে লাথি মারা হয়। সোনিয়া হাদিন বাজপো নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘ওদের ঘুষিতে চোখে রক্ত জমে গিয়েছে।’’ আক্রান্তদের দাবি, তাঁরা সিপিএম সমর্থক বলেই এই হামলা। শনিবার সকালে অশোকনগর থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন আক্রান্ত মহিলারা। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও করেছেন তাঁরা। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “মামলা রুজু করা হয়েছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।” তবে তৃণমূল এই ঘটনার সঙ্গে তাদের যোগ আছে বলে মানতে চায়নি।

শনিবার ভোরে হুগলির গোঘাট, পুড়শুড়া, খানাকুল এবং আরামবাগের কয়েকটি গ্রামে সিপিএম সমর্থকদের মারধর এবং হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পুড়শুড়ার কুলবাতপুরে সিপিএমের একটি দলীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও, গোঘাটের পশ্চিম চাকলা গ্রামের বালিকুট এলাকার সিপিএম সমর্থকদের মারধর করে পানীয় জল নিতে না নেওয়ার জন্য স্থানীয় স্কুল চত্বরে বসানো নলকূপে তালা মেরে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের দাবি, ওই পাড়ায় নতুন নলকূপ বসানো সত্ত্বেও কয়েকজন স্কুলের কল ব্যবহার করতে গিয়ে স্কুল চত্বর নোংরা করছিলেন। সেই কারণেই তালা মারা হয়। এ দিনই আবার গোঘাটের পুইন গ্রামে প্রহৃত হন দুই তৃণমূল কর্মী। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ওই ঘটনা বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি। তাঁদের আরামবাগ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। শুক্রবার রাতে আরামবাগের নৈসরাই বাজারে তিন সিপিএম সমর্থকের দোকান ভাঙচুরের অভিযোগে এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় আবার এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার গভীর রাতে স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুজিত রায়ের বাড়ি লক্ষ করে বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। সুজিতবাবু বাড়িতে ছিলেন না। বোমার আঘাতে জখম হয়েছেন তাঁর গাড়ির চালক শেখ কুতুবউদ্দিন। সুজিতবাবু সরাসরি অভিযোগ করেন, “এই ঘটনায় আমাদের দলেরই মাইশোরা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান কুরবান শাহ জড়িত রয়েছে।” কুরবান শাহ সেই অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা দাবি করেন, “আমাদের প্রার্থীর পরিবর্তে সুজিতবাবু বামফ্রন্টের প্রার্থীর সমর্থনে গোপনে ভোটের কাজ করেছে।” শনিবার পাঁশকুড়ারই পশ্চিম ন্যাকড়া গ্রামে তৃণমূলের বিজয় মিছিলে হামলার অভিযোগ ওঠে। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ স্থানীয় তৃণমূল নেতা হানিফ মহম্মদের নেতৃত্বে বিজয় মিছিল হচ্ছিল। সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা বলে দাবি করেছেন।

গোলমাল বেধেছে হলদিয়াতেও। সেখানে সিপিএমের দু’টি শাখা কমিটির কার্যালয় দখল এবং একটি লোকাল কমিটির কার্যালয়ে চুরির অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শনিবার দুপুরে কাঁকসাতেও সিপিএমের জোনাল কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের অভিযোগ, এ দিন দুপুরে তৃণমূলের কয়েকজন সমর্থক দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে কটূক্তি করেন। প্রথমে পুলিশ আসার পর তাঁরা চলে যান। কিন্তু পরে ৫০-৬০ জন তৃণমূল সমর্থক লাঠি, রড, ইট, বোমা নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালান বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় আট জন দলীয় কর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি সিপিএমের। পরে ঘটনাস্থলে যান সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এ দিকে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেছে বিজেপিও। শুক্রবার রাতে নদিয়ার হরিণঘাটা থানার বিরোহী বাজার এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে পিকনিক করছিলেন বিজেপি কর্মীরা। সেই সময় তৃণমূলের লোকেরা সেখানে বাজি ফাটালে গণ্ডগোল বাধে। তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

কোচবিহারে বিজেপি-র অভিযোগ, ডাউয়াগুড়িতে তাদের দলীয় কার্যালয়ে, দলুয়ায় তিন সমর্থকদের বাড়িতে ঢুকে মারধর ও ভাঙচুর করেছে শাসকদলের লোকেরা। কাটামারিতে ধর্ম পাটোয়ারি নামে এক বিজেপি কর্মীর দোকানে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মোয়ামারির দোমুখা বাজার এলাকায় দলের এক সমর্থকের দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বলে বিজেপি-র দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

vote result clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE