পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের অধিকাংশের প্রধান পেশা দিনমজুরি।
শহর-গ্রাম মিলিয়ে এক শতাংশেরও কম সরকারি কাজ করেন।
মোটের উপর ৬৫ শতাংশ মুসলিম পরিবার এমন কোনও কাজে নিযুক্ত, যা থেকে রোজগার সামান্য, কাজের নিশ্চয়তাও নেই।
আড়াই বছর ধরে এ রাজ্যের জেলাগুলিতে মুসলিম পরিবারগুলির মধ্যে একটি সমীক্ষা চালিয়ে এই ছবি ফুটে উঠেছে। শহর, গ্রাম মিলিয়ে ৯৭ হাজার মুসলিম পরিবার থেকে শিক্ষা, পেশা, এলাকার সুযোগ-সুবিধে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ‘স্ন্যাপ’ এবং ‘গাইডেন্স গিল্ড’, এই দুই সামাজিক সংগঠনের তরফে করা এই সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশিত হবে আজ, শনিবার। রিপোর্টের উদ্বোধন করবেন শঙ্খ ঘোষ।
আট বছর আগে সাচার কমিটি রিপোর্ট পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের অনুন্নয়নের যে চিত্র তুলে ধরেছিল, তাতে রীতিমতো সমালোচনার মুখে পড়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রোজগার নিরাপত্তা, উন্নয়নের নানা বিষয়ে পিছিয়ে এ রাজ্যের মুসলিমরা, এই ছবি রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল বামেদের বিরুদ্ধে। তবে সাচার রিপোর্টের সীমাবদ্ধতাগুলি নিয়েও নানা কথা হয়েছে। বিশেষত, এই রিপোর্ট জনগণনা, জাতীয় নমুনা সমীক্ষা, প্রভৃতির পরিসংখ্যান থেকে তৈরি। সরাসরি মানুষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি নয়। তাই তৃণমূল স্তরে ছবিটা কেমন, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছিল।
এই সমীক্ষা সেই ফাঁকটা অনেকটাই ভরাতে পারবে, মনে করছেন এই গবেষণার উদ্যোক্তারা। ৯৭ হাজার পরিবার থেকে পরিসংখ্যান সংগ্রহ ছাড়াও, তাদের মধ্যে আট হাজার পরিবারে গিয়ে বিশদে প্রশ্ন করে নানা তথ্য জোগাড় করেছেন সমীক্ষকরা। সমীক্ষার পরিকল্পনায় সহায়তা করেছেন বহু বিশিষ্ট গবেষক। আজ রিপোর্টের উদ্বোধনে তাঁদের অনেকে থাকবেন। সমীক্ষায় নিযুক্ত এক গবেষক বলেন, “আমরা আশা করছি, এই রিপোর্টের আলোচনায় সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নটি প্রাধান্য পাবে।”
সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নটি বিশেষ ভাবে উঠছে মুসলিম-প্রধান এলাকাগুলির পরিকাঠামোর প্রসঙ্গে। এই সমীক্ষায় রয়েছে ৩২৫টি গ্রাম এবং শহর এলাকার ৭৫টি ওয়ার্ড। এ রাজ্যের ঐতিহ্য, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ নানা পাড়ায় থাকেন (বামুনপাড়া, ডোমপাড়া, মুসলমানপাড়া প্রভৃতি)। তাই সমীক্ষায় পাড়াগুলিকে উচ্চবর্ণ হিন্দু, দলিত, আদিবাসী, মুসলিম এবং মিশ্র, এই পাঁচ ভাগে রাখা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, জল জমার ফলে চলাচলের অযোগ্য রাস্তা বর্ণহিন্দু পাড়াগুলিতে যত রয়েছে, তার অন্তত দেড়গুণ বেশি রয়েছে মুসলিম পাড়ায়। আবার, বর্ণহিন্দুদের পাড়ায় কংক্রিটের রাস্তা মুসলিম পাড়ার চাইতে অনেকটাই বেশি। বিদ্যুৎ সংযোগ, পানীয় জল, সর্বত্রই এই বৈষম্য প্রবল। তবে এর সবটাই হয়তো ভিন্ন সম্প্রদায়ের কারণে নয় - দলিত, আদিবাসীদের পাড়ার দশাও তথৈবচ। পরিকাঠামোর দুর্দশার একটা বড় নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়াচ্ছে দারিদ্র, আর মুসলিমদের মধ্যে দারিদ্র দলিত-আদিবাসীদের চাইতে কম নয়, এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে এই সমীক্ষা।
শিক্ষাবিদ মিরাতুন নাহার অবশ্য ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন করে উন্নয়নকে দেখার পক্ষপাতী নন। তবু তাঁর বক্তব্য, “মুসলিমরা সমাজে একেবারে পিছিয়ে পড়ে থাকা মানুষ। তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ। শিক্ষা, শিল্প, কর্মসংস্থান, সর্বত্র মুসলিমরা পিছিয়ে থাকলে তার দায় সমগ্র রাজ্যের উপর পড়ে, কারণ তা গোটা রাজ্যের উন্নয়নের জন্য জরুরি। তাই এই রিপোর্টটা আমার কাছেও জরুরি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy