Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আলিমুদ্দিনের বার্তায় দ্রুত সিবিআইয়ের কাছে রবীন

এক দিকে দলীয় নেতৃত্বের কড়া বার্তা। অন্য দিকে, সিবিআইয়ের চাপ। এই সাঁড়াশির মাঝে পড়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মত বদলালেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব। বৃহস্পতিবার সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে। আর শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুর থেকে সোজা হাজির তাদের দফতরে!

সিবিআই অফিসে সিপিএম নেতা রবীন দেব। শুক্রবার। ছবি: শৌভিক দে।

সিবিআই অফিসে সিপিএম নেতা রবীন দেব। শুক্রবার। ছবি: শৌভিক দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১৪
Share: Save:

এক দিকে দলীয় নেতৃত্বের কড়া বার্তা। অন্য দিকে, সিবিআইয়ের চাপ। এই সাঁড়াশির মাঝে পড়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মত বদলালেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব। বৃহস্পতিবার সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে। আর শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুর থেকে সোজা হাজির তাদের দফতরে!

সারদা কাণ্ডে তদন্ত শুরুর পর থেকে রবীনবাবুই প্রথম সিপিএম নেতা, যাঁকে জেরায় ডাকল সিবিআই। ফলে এত দিন শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব সিপিএম নেতৃত্ব দৃশ্যতই অস্বস্তিতে। কারণ, প্রথমত: রবীনবাবুকে জেরায় ডাকার ফলে আর শুধু তৃণমূলের কোর্টে বল রইল না এই কথা বলে পাল্টা সরব হতে পারে তৃণমূল। দ্বিতীয়ত: এত দিন ধরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুখ খোলার পরে এ বারে নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষার বিষয়টিও এসে পড়ল সিপিএমের সামনে। এই অবস্থায় রবীনবাবু সময় চেয়ে সিবিআইকে চিঠি দিলেও দলীয় নেতৃত্ব তাঁকে ‘পরামর্শ’ দেন, দ্রুত হাজিরা দিতে। যার ফল, সকালে সিবিআইকে ফোন করে সময় চেয়ে নেন রবীনবাবু। বিকেলে চলে আসেন তাদের সল্টলেকের দফতরে!

সিপিএম সূত্রের খবর, দলের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে রবীনবাবুকে দ্রুত সিবিআইয়ের সামনে হাজির করার ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দলের অন্দরে তাঁর যুক্তি, দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূলের সরকার এবং তাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি যখন কালিমালিপ্ত এবং তার সুযোগ নিতে বামেরা পথে নেমেছে পুরোদমে, তখন সিপিএমের এক জন রাজ্য নেতা সিবিআইয়ের ডাক পেয়েও দ্রুত হাজিরা না দিলে জনমানসে ভুল বার্তা যাবে। গোটা দল সম্পর্কেই সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হবে। এবং তার জেরে সারদা-কাণ্ডে তৃণমূলকে কোণঠাসা করার সুযোগও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

বুদ্ধবাবুর এই যুক্তির সঙ্গে একমত হন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। তখনই রবীনবাবুকে বলা হয়, সময় নষ্ট না-করে এ দিনই সিবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। পরে বিমান বসুও বলেন, “আমাদের মনে হয়েছে, যাওয়া দরকার। তাই তিনি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি বাতিল করে সিবিআই দফতরে গিয়েছেন।” এর আগে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের প্রাক্তন আপ্ত-সহায়ক গণেশ দের বিরুদ্ধে সারদার সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছিল। দল তখন তাঁকে বহিষ্কার করে।

দলীয় নেতৃত্বের এই কড়া বার্তার পাশাপাশি ছিল সিবিআইয়ের চাপ। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাও তাঁকে বেশি সময় দিতে চায়নি। গোয়েন্দারা তাঁকে জানান, তাঁর বক্তব্য দ্রুত জানা প্রয়োজন। এর পরেই হাজিরার সময় ঠিক হয়।

জেরার পরে সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে আসার পরে দৃশ্যতই বিব্রত লাগছিল রবীনবাবুকে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি সুদীপ্ত সেনকে চিনতেন কি না। দায়সারা ভাবে তিনি জানান, এই নিয়ে এখানে কিছু বলবেন না। কিন্তু তাঁর পুরো কথা শুনতেই পাননি হাজির অনেকে। এ ছাড়াও সাংবাদিকদের অন্য প্রশ্নও এড়িয়ে গিয়েছেন। শুধু জানিয়েছেন, “সারদা কেলেঙ্কারিতে কেউ কেউ আমার নাম করেছে। সিবিআই আমায় ডেকেছিল। আমি তাদের সব প্রশ্নের যুক্তি দিয়ে উত্তর দিয়েছি। তাতে তদন্তকারীরা সন্তুষ্ট হয়েছেন কি না, তা তাঁরাই বলতে পারবেন।”

সিবিআই সূত্রের খবর, তারা টিভি চ্যানেল সারদা গোষ্ঠীকে বিক্রির ব্যাপারে এ দিন রবীনবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও জানান, “তারা মিউজিক চ্যানেলের ব্যাপারে কথা ছিল। সিবিআই তা জানতে চেয়েছিল। কথা হয়ে গিয়েছে।”

প্রায় আড়াই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় রবীনবাবুকে। সিবিআইয়ের একটি সূত্রের খবর, তারা টিভির প্রাক্তন মালিক রতিকান্ত বসুকে জেরা করে রবীনবাবুর নাম উঠে এসেছিল। অভিযোগ, তারার চারটি চ্যানেল যখন সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনকে বিক্রি করা হয়, তখন রবীনবাবু মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেন। তদন্তকারীদের দাবি, রবীনবাবু বেশ কয়েক বার মিডল্যান্ডে সারদার অফিসে গিয়ে সুদীপ্তের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই সূত্রেই রবীনবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ। রতিকান্তবাবু অবশ্য রবীনবাবুকে চেনেন না বলেই দাবি করেছেন। রবীনবাবুরও দাবি, মধ্যস্থতা বা অন্য কোনও ভাবে তারা টিভি বিক্রি এবং সেই সংক্রান্ত লেনদেনের সঙ্গে তিনি কোনও ভাবেই জড়িত নন। তাঁর আরও বক্তব্য, সিবিআই আধিকারিকদের তিনি বলেছেন, গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র উদ্ধৃত করে কোথাও কোথাও প্রচার হয়ে গিয়েছে, মধ্যস্থতা করে তিনি নাকি আর্থিক ভাবেও লাভবান হয়েছেন! এতে তাঁর ভাবমূর্তি কলুষিত হয়েছে, রাজনীতিক হিসেবে মুখ দেখানো দায় হয়ে উঠছে! গোয়েন্দারা তাঁকে তদন্তে ভরসা রাখার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও রবীনবাবুর দাবি।

তাঁকে ফের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আপাতত আর কোনও দিনক্ষণ স্থির করেনি সিবিআই। রবীনবাবু নিজে আরও কোনও তথ্য জানাতে চাইলে অবশ্য আলাদা কথা। রবীনবাবুকে ডাকায় যে বিড়ম্বনায় পড়েছে সিপিএম, সেটা এ দিন গোপন না করেই দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “রবীন দেবকে না ডাকলেই ভাল হতো!” তবে রবীনবাবুকে অপরাধী ভাবার মতো তথ্য-প্রমাণ নেই, এ কথা জানিয়ে তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছেন বিমানবাবু। অন্য দিকে, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও এ দিন রবীন-প্রসঙ্গে বলেছেন, “আগেই বলেছি, তদন্তে সব সহযোগিতা করব।”

এ দিনই সকালে সিবিআই দফতরে হাজির হয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কয়েক জন কর্তা। পরে ক্লাবের হিসাবরক্ষক তপন দাস বলেন, “২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইউবি গ্রুপের কাছ থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছিল। তার কাগজপত্র দিতে এসেছিলাম।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE