এনআইএ দল কথা বলছে জহিরুলের স্ত্রী খানসা বিবির সঙ্গে। শুক্রবার কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।
স্বামীর নাম জড়িয়েছে খাগড়াগড়ের জঙ্গি-যোগে। স্ত্রী-র ডায়েরির পাতায়-পাতায় লেখা ‘জেহাদ’, ‘রক্ত’-এর মতো শব্দ, ‘হাতে তুলে নাও তরোয়াল, একে ৪৭’-এর মতো বাক্য। এ সব কী? জবাব এল, “গজল।” শুক্রবার ‘জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা’র (এনআইএ) গোয়েন্দাদের মুখোমুখি বসে এমনই জবাব দিয়েছেন খানসা বিবি। খাগড়াগড়-কাণ্ডে নদিয়ার থানারপাড়ার গমাখালি গ্রামের সন্দেহভাজন জহিরুল শেখের স্ত্রী।
জহিরুল পলাতক। খানসারও খোঁজ মিলছিল না। তবে এ দিন নিজস্ব সূত্রে নদিয়ারই করিমপুর থানা এলাকায় খানসার সন্ধান পায় এনআইএ। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, মুখোমুখি টানা আড়াই ঘণ্টার কথাবার্তায় খানসা তাদের কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। কিন্তু তদন্তে এগনোর মতো বিশেষ সূত্র দেননি। এই মুহূর্তে বছর তেইশের বধূটি রয়েছেন এনআইএ-র নজরে।
এনআইএ-র দুই গোয়েন্দা এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হন করিমপুরে। তিন মাসের মেয়েকে কোলে নিয়ে উঠোনে বসা খানসার সঙ্গে শুরু হয় তাঁদের কথাবার্তা। গোয়েন্দাদের খানসা জানান, বিয়ের আগে তাঁর নাম ছিল শমিতা খাতুন। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত থানারপাড়ার একটি হাই-মাদ্রাসায় পড়েছেন। পরে বারবাকপুরের মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছেন।
বর্ধমানের মঙ্গলকোটের শিমুলিয়ায় যেখানে মহিলাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হত বলে এনআইএ-র সন্দেহ, সেখানে তিনি গেলেন কেন, কী করে? এনআইএ সূত্রের দাবি, প্রশ্নোত্তর-পর্বের এই জায়গা থেকে ‘বিভ্রান্তিকর’ তথ্য দিতে শুরু করেন জহিরুলের স্ত্রী। প্রথমে তিনি বলেন, “আরবি-শিক্ষার জন্য ওখানে গিয়েছিলাম।” কিন্তু শ্বশুরবাড়ি বা বাপের বাড়ি লাগোয়া এলাকায় আরবি ভাষা শিক্ষার জন্য একাধিক মাদ্রাসা থাকতেও তাঁকে শিমুলিয়ায় যেতে হল কেন? জবাব দেননি বধূটি।
গোয়েন্দাদের দাবি, জহিরুলের সঙ্গে তাঁর কবে বিয়ে হয়েছিল, তা নিয়েও ধন্দ তৈরির চেষ্টা করেছেন খানসা। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে গোয়েন্দারা জানতেন, বিয়ে হয়েছে ২০১০-এ। কিন্তু এ দিন তরুণী দাবি করেছেন, তাঁর বিয়ে হয় ২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল।
খানসা ঠিক কবে শিমুলিয়ায় গিয়েছিলেন গোয়েন্দাদের খটকা রয়েছে তা নিয়েও। কারণ, এ দিন এক বার তিনি জানিয়েছেন, বিয়ের দু’মাস আগে থেকে তিনি আরবি শিক্ষার জন্য শিমুলিয়ায় গিয়েছিলেন। এক বার বলেছেন, “বিয়ের পরে স্বামীর সঙ্গে গিয়ে কিছু দিন শিমুলিয়ায় ছিলাম। তখন ওই মাদ্রাসায় পড়তাম।”
কিন্তু শিমুলিয়ায় জহিরুল কেন গিয়েছিল বা সেখানে থাকার সময় সে কী কাজ করত— খানসাকে জেরা করে সে প্রশ্নের জবাব গোয়েন্দারা পাননি। মহিলা দাবি করেছেন, তিনি জানেন না। শিমুলিয়ায় অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হত কি? এ প্রশ্নের জবাবে বধূটি বলেছেন, “শরীর ঠিক রাখার জন্য প্রতিদিন সকালে ১৫-২০ মিনিট ব্যায়াম করানো হতো। এর বেশি কিছু জানি না।”
খাগড়াগড়-কাণ্ডে ধৃত আলিমা বিবি বা রাজিয়া বিবিরা কি তাঁর সহপাঠী ছিলেন? বধূটি নিরুত্তর। বিস্ফোরণে হত শাকিল আহমেদ বা আহত আবদুল হাকিমকে কে দেখেছিলেন শিমুলিয়ায়? জবাব আসেনি এ প্রশ্নেরও।
জহিরুল কোথায় আছে জানতে চেয়েও সদুত্তর পাননি বলে দাবি গোয়েন্দাদের। খানসা তাঁদের জানিয়েছেন, ঈদের সময় তিনি জহিরুলের সঙ্গে গমাখালির শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন। ঈদের পরেই (৭ অক্টোবর) জহিরুল ‘কাজে’ চলে যায়। খানসা ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে মায়ের সঙ্গে চলে আসেন বাপেরবাড়ি। তার পর থেকে জহিরুল স্ত্রী এবং ছেলেমেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে না।
এর পরে কথা শুরু হয় খানসার ডায়েরি (জহিরুলের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল) নিয়ে। ডায়েরিতে লেখা ‘জেহাদ’ বা ‘একে ৪৭’-এর প্রসঙ্গ তুলে গোয়েন্দারা জানতে চান, “জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন না কি?”
জবাব আসে, “এ সব গজলের লাইন। আমি গজল শুনতে ভালবাসি। তা থেকে পছন্দের শব্দ ডায়েরিতে লিখেছি।”
সহ প্রতিবেদন: কল্লোল প্রামাণিক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy