Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

এসজেডিএ-র দুর্নীতি নিয়ে <br>শিলিগুড়িতে বাম-অবস্থান

এসজেডিএ’র সামনে সিবিআই তদন্তের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ বামেদের। সোমবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।

এসজেডিএ’র সামনে সিবিআই তদন্তের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ বামেদের। সোমবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৪ ০৩:৩৩
Share: Save:

শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বহু কোটি টাকা দুর্নীতির মামলায় একাধিক ঠিকাদার সংস্থার নাম জড়িয়েছে। ওই ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে তৃণমূলের নেতাদের একাংশের যোগাযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ করল জেলা বামফ্রন্ট। সোমবার এসজেডিএ’র দফতরের সামনে দু’ঘন্টা অবস্থান বিক্ষোভ দেখান বামেরা। দার্জিলিং জেলা সিপিএমের কার্যকরী সম্পাদক জীবেশ সরকারের অভিযোগ, “এসজেডিএ কাণ্ডে অভিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থাগুলির সঙ্গে তৃণমূলের নেতাদের একাংশের যোগাযোগ গভীর। প্রায় ২০০ কোটি টাকা দুর্নীতিতে শাসক দলের নেতা, আমলার একাংশ যুক্ত। তাঁদের বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। তাই সিবিআই তদন্ত চাইছি। যতদিন তা না হয় আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”

জীবেশবাবুর দাবি, “শিলিগুড়ির মানুষ জানতে চান, তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে কারা গত কয়েক বছরের মধ্যে কত সম্পত্তির মালিক হয়েছেন? কটা বাড়ি বাড়িয়েছেন? গাড়ি, জমি কিনেছেন? চা বাগান কিনেছেন? কে গজলডোবায় পুকুর কিনেছেন? কে ব্যাঙ্কে মোটা টাকা জমিয়েছেন? কে, ক’বার কার সঙ্গে বিদেশে গিয়েছেন? এ সব হিসেব জনসমক্ষে পেশ করতে হবে। তবেই দুর্নীতির টাকা কোথায় গিয়েছে তা স্পষ্ট হবে।” সভা থেকে এসজেডিএ কান্ডে সিবিআই তদন্ত, টাকা উদ্ধার এবং অপরাধীর শাস্তির দাবি জানিয়ে প্রস্তাব নেওয়া হয়।

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “বামেরা যা খুশি বললেই হবে না। এসজেডিএ মামলায় যে সমস্ত ঠিকাদার, বাস্তুকারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে তাঁদের কেউ সিপিএম সদস্য, কেউ সিপিএম নেতার লোক। সম্প্রতি যে ঠিকাদার আত্মসমর্পণ করেন তিনি সিপিএম ঘনিষ্ঠ। বাস্তুকার মৃগাঙ্কমৌলি সরকার বামপন্থী পরিবারের সদস্য। সপ্তর্ষি পাল নামে যে বাস্তুকারকে ধরা হয়েছে তাঁর এক আত্মীয়কে অশোক ভট্টাচার্য প্রথমে শিলিগুড়ি পুরসভায় কাজ দেন। তিনি সেই কাজ ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র যান। পরে অশোকবাবু তাঁকে এসজেডিএ’তে এনেছেন। ওই বাস্তুকার তাঁর আত্মীয়কে কাজে বসিয়ে চাকরি ছেড়ে দেন। তাঁর ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর সন্দেহ, “সিপিএমই ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা পেয়েছেন। তাই তাদের চুনোপুটি বলে ছাড় দিতে সরব হন।”

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই এসজেডিএ’র ব্যাপারে পুলিশে ৮টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে সার্বিক রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পগুলির। তদন্তে নেমে প্রায় ২০ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি তদন্ত চলছে। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের আমলে লক্ষ লক্ষ মানুষ চাকরি পেয়েছেন। কে কেমন তার দায় কী আমরা নেব? যে সব সংস্থা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সেগুলি আমাদের জমানায় কাজ করেনি।”

জীবেশবাবু বলেন, “মন্ত্রী শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছেন। কে কী নিয়েছে সব জানতে আমরা সিবিআই তদন্ত চাইছি। তাতে উনি ভয় পাচ্ছেন কেন?” গৌতমবাবু কিছু ঠিকাদার এবং বাস্তুকার সিপিএমের সদস্য বা তাঁদের ঘনিষ্ঠ বলে পাল্টা যে অভিযোগ করেছেন তার উত্তরে জীবেশবাবু বলেন, “তাঁরা কেউই এখন সিপিএম-এ নেই। আগে তৃণমূলের অনেক নেতাও তো সিপিএম করতেন। এ সব না বলে সিবিআই তদন্ত হোক। তা হলেই সব পরিষ্কার হবে।” যত বড় আমলা নেতারাই যুক্ত থাকুক না কেন বামেরা ছেড়ে দেবেন না বলে জানান। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানান, সিবিআই তদন্তের দাবিতে ৪টি মামলা হয়েছে। সেই মতো ব্যবস্থা হবে। সভায় ছিলেন সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরী, আরএসপি’র নেতা বিকাশ সেন রায়, ফ ব নেতা অনিরুদ্ধ বসু, এসজেডিএ’র প্রাক্তন সদস্য শিলিগুড়ি পুরসভার বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম। উজ্জ্বল বলেন, “এসজেডিএ’র এক সদস্য বিশাল বাড়ি বানিয়ে সিসিটিভি বসিয়েছেন। এটাও শুনেছি, নেতাদের একাংশ বিদেশে যাচ্ছেন।” এমনকী, কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতাও সপার্ষদ বিদেশ ভ্রমণ করেছেন বলে খবর রয়েছে। এসজেডিএ-এর প্রাক্তন সদস্য শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “শাসক দলের কয়েকজন নেতার বাড়ি-গাড়ি-বিদেশে বেড়ানো শহরে আলোচনার বিষয়। মানুষকে জবাব দিতে হবে। বাম আমলে তিল তিল করে যে টাকা এসজেডিএ জমিয়েছিল তা লুঠপাট করে নেওয়া মানুষ মানতে পারবেন না। তাঁরা জবাব আদায় করবেনই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sjda siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE