সাংসদের দেহরক্ষীর দাবি, তাঁর কাজে কেউ বাধা দেয়নি। জবরদস্তি আটকে রেখে মারধরও করেনি কেউ। অথচ রবীন্দ্র সরোবর-কাণ্ডে সাংসদের দেহরক্ষীর ‘কাজে বাধাদানের’ অভিযোগে জামিন-অযোগ্য ধারায় ৩০ জন প্রাতর্ভ্রমণকারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে লেক থানার পুলিশ! সব অভিযুক্তকেই ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ হিসেবে দেখানো হয়েছে পুলিশের খাতায়। কেউ এখনও গ্রেফতারও হয়নি।
বুধবার সকালে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রবীন্দ্র সরোবরে কিছু বয়স্ক প্রাতর্ভ্রমণকারীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। প্রাতর্ভ্রমণকারীদের একাংশ জানান, ভাবী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছিলেন জনা পাঁচেক প্রবীণ। মুখ্য বিষয় ছিল পশ্চিমবঙ্গের ভোটে ‘মোদী হাওয়া।’ অভিযোগ, তৃণমূল সাংসদ তা শুনে উত্তেজিত হয়ে অশ্লীল গালিগালাজ করেন। পরে লেকে প্রাতভ্রর্মণকারীদের একটি বড় অংশ কল্যাণবাবুকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশি নিরাপত্তায় তিনি বাড়ি ফেরেন। তাঁর দাবি, ওই বয়স্কেরা এক বিশেষ সম্প্রদায় সম্পর্কে আপত্তিকর কথা বলছিলেন, যার প্রতিবাদ করেন তিনি। এর পরেও বৃহস্পতি ও শুক্রবার কল্যাণবাবু পুলিশি ঘেরাটোপে রবীন্দ্র সরোবরে প্রাতর্ভ্রমণে গিয়েছেন। তবে কোনও বিতর্কে জড়াননি। কিন্তু পুলিশ যে ভাবে বুধবারের ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৩ ধারা মোতাবেক সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ (জামিন-অযোগ্য) দায়ের করেছে, তাতে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের অধিকাংশই ক্ষুব্ধ। উপরন্তু জোর করে আটকে রাখা, ভয় দেখানোর অভিযোগেও মামলা হয়েছে ৩৪১ ও ৫০৬ ধারায়। পুলিশের দাবি, কল্যাণবাবুর দেহরক্ষী শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর হয়েছে। যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র এ দিন বলেন, “দেহরক্ষী যেমন অভিযোগ করেছেন, তেমন মামলা হয়েছে।”
কিন্তু শুভেন্দুবাবু নিজে এ দিন জবরদস্তি বা নিগ্রহের কথা জানাননি। বরং বলেন, “কেউ মারেনি। ভয়ও দেখায়নি। কাজে কেউ বাধা দেয়নি। এমপি’কেও কেউ নিগ্রহ করেনি। আমি পুলিশ ডেকে ওঁকে নিরাপদে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করেছি।” তা হলে তিনি লেক থানায় নিগ্রহ, কাজে বাধাদান, ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদি অভিযোগ করতে গেলেন কেন?
হুগলি পুলিশের ডিআইবি-তে কর্মরত শুভেন্দুবাবুর দাবি, “আমি পুলিশকে সে কথা বলিনি। এক দল প্রাতর্ভ্রমণকারী বিশেষ এক সম্প্রদায়কে কলকাতা থেকে উচ্ছেদের কথা বলেন। কল্যাণবাবু প্রতিবাদ করেন। তার জেরে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের একাংশ ওঁকে হেনস্থার চেষ্টা করেন। পুলিশকে তাই জানিয়েছি।” পুলিশ তা হলে কী ভাবে তাঁর তরফে এমন অভিযোগ লিখল? শুভেন্দুবাবুর জবাব, “সে লেক থানাই বলতে পারবে।” কিন্তু সাংসদ কল্যাণবাবু তো আইনজীবী! লেক পুলিশের এই পদক্ষেপ সম্পর্কে তাঁর মত কী? কল্যাণবাবু বলেন, “এর জবাব পুলিশই দিতে পারবে।” তবে তিনি এ-ও মনে করেন, যে ভাবে এক সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে সে দিন উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলা হয়েছে, তাতে জামিন-অযোগ্য ধারা প্রয়োগ করাই যায়। প্রাতর্ভ্রমণকারীদের একাংশের মতে, একই অভিযোগে সাংসদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা উচিত। ওই ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। তবে রবীন্দ্র সরোবরে রোজ প্রাতর্ভ্রমণে যান, এমন কয়েক জনকে জেরা করেছে লেক থানা। বুধবারের পর থেকে যে ভাবে কল্যাণবাবুর সঙ্গে সাদা পোশাকের পুলিশের পল্টন বেরোচ্ছে, এবং ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে, তাতে প্রাতর্ভ্রমণকারীরা ক্ষুব্ধ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy