Advertisement
০৭ মে ২০২৪

কাছ থেকেই গুলি বাপনকে, ইঙ্গিত ময়না-তদন্তে

ভাঙড়ে ভাইফোঁটার দিন নিহত বাপন মণ্ডলের মৃত্যু কী ভাবে হয়েছিল—তা নিয়ে প্রাথমিক ধারণা বদলাচ্ছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা মনে করেছিলেন, দূর থেকে ছোড়া গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বিঁধেছে বাপনের গায়ে। কিন্তু পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রের খবর, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অন্য ইঙ্গিত দিচ্ছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, একেবারে গায়ের সঙ্গে (পয়েন্ট-ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ) ওয়ানশটার ঠেকিয়ে গুলি করা হয় বাপনকে। গুলি চালানো হয়েছিল গলার নলি থেকে নীচের দিক তাক করে। দূর থেকে ছোড়া গুলি এসে বিঁধলে যেমন ক্ষত হওয়ার কথা, বাপনের শরীরে তেমন কিছু মেলেনি।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৩২
Share: Save:

ভাঙড়ে ভাইফোঁটার দিন নিহত বাপন মণ্ডলের মৃত্যু কী ভাবে হয়েছিল—তা নিয়ে প্রাথমিক ধারণা বদলাচ্ছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা মনে করেছিলেন, দূর থেকে ছোড়া গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বিঁধেছে বাপনের গায়ে। কিন্তু পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রের খবর, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অন্য ইঙ্গিত দিচ্ছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, একেবারে গায়ের সঙ্গে (পয়েন্ট-ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ) ওয়ানশটার ঠেকিয়ে গুলি করা হয় বাপনকে। গুলি চালানো হয়েছিল গলার নলি থেকে নীচের দিক তাক করে। দূর থেকে ছোড়া গুলি এসে বিঁধলে যেমন ক্ষত হওয়ার কথা, বাপনের শরীরে তেমন কিছু মেলেনি।

গত ২৫ অক্টোবর, ভাইফোঁটার দিন ভাঙড়ের বেঁওতা গ্রামে গুলিতে খুন হন তৃণমূল কর্মী রমেশ ঘোষাল ও বাপন মণ্ডল। রমেশকে খুনের ঘটনায় অভিযোগ ওঠে সদ্য বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের দলবলের বিরুদ্ধে। আরাবুল আবার পাল্টা দাবি করেন, বেঁওতা ১ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান সত্যজিৎ মণ্ডল ওরফে পাঁচু ও তাঁর দলবলের ছোড়া গুলিতে বাপনের মৃত্যু হয়েছিল।

পুলিশের দাবি, জেরায় পাঁচু তাদের জানান, রমেশের বাড়িতে হামলা পরে তাঁর বাড়িতেও চড়াও হয় সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা। পাঁচু তাঁর দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ির পিছনের দরজা খুলে পালান। কিন্তু তাতেও তিনি পড়েন দু’দল দুষ্কৃতীর মাঝে। দু’দিক থেকেই গুলি চলছিল। বাপন ছিলেন পাঁচুদের পিছন দিকে। উল্টো দিকে আসা গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বাপনের গায়ে লেগেছিল বলেই পুলিশকে জানিয়েছিলেন পাঁচু। আরাবুল-অনুগামী কয়েক জনকে জেরা করেও তেমনই ধারণা তদন্তকারীদের।

কিন্তু পুলিশ সূত্রের খবর সেই অনুমান বদলাচ্ছে ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বৃহস্পতিবার পুলিশের হাতে আসার পরে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, গলার নীচে ঠিক শ্বাসনালীর উপরেই গুলির দাগ রয়েছে। গুলি গলার নলি বরাবর শরীরে ঢুকে পাকস্থলী ভেদ করে অন্ত্রে আটকে ছিল। গলার নলির উপরে জমে থাকা বারুদের অবশেষ এবং পোড়ার ধরন দেখে ময়না-তদন্তকারীদের অনুমান, বাপনকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়।

ময়না-তদন্তের এই প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই জোড়া খুন নিয়ে অন্য খাতে বইছে পুলিশের অনুমান। তদন্তে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ জেনেছে, জমির দালালি নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদ চলছিল। আরাবুলের গোষ্ঠীর ‘পথের কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রমেশ ও পাঁচু। অনাস্থা-প্রস্তাব এনে পাঁচুকে পঞ্চায়েত প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও এলাকায় তাঁর প্রভাব অটুট ছিল। রমেশ এলাকায় পাঁচুর খুব ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। সব মিলিয়ে আরাবুল-অনুগামীরা দু’জনকেই একই দিনে খুনের ছক কষে বলে পুলিশ এখন মনে করছে। কিন্তু পাঁচু পালিয়ে যাওয়ায় বদলায় ‘ছক’। বছর কুড়ির তৃণমূল কর্মী বাপনই আততায়ীদের ‘ঘুঁটি’ হয়ে উঠেন।

জেলা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, “রমেশকে খুনের পরে বাপনকে খুনের ঘটনায় পাঁচুকে ফাঁসিয়ে দিতে পারলেই রাস্তা সাফ হবে বলে ধরে নেয় আততায়ীরা। সে জন্যই বাপনকে খুন করা হয়।” ওই পুলিশ-কর্তার দাবি, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট জেনে পুলিশ মনে করছে, আততায়ীদের পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপ ছিল রমেশের পরিবারকে ভয় দেখিয়ে থানায় নিদিষ্ট কারও নামে অভিযোগ দায়ের করতে না দেওয়া। তাতে আরাবুল-অনুগামীরাই যে ঘটনায় জড়িত, তা জানতে সময় লাগত পুলিশের। তা ছাড়া, পাঁচুর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করার জন্য বাপনের পরিবারকে আরাবুল শাসানি দেন বলে অভিযোগ। দু’টি পরিবারই শাসানিতে নতিস্বীকার করে সাদা কাগজে সই করে দিতে বাধ্য হয় বলে পরে পুলিশকে জানিয়েছে।

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ঘটনার দিন পাঁচু মণ্ডল যাতে থানায় অভিযোগ জানাতে না পারেন, সে দিকেও কড়া নজর রাখছিল আরাবুল-অনুগামীরা। কারণ, পাঁচু যদি বিশদে অভিযোগ করতেন, তা হলে গুলি চলার সময়ে এলাকার পরিস্থিতি ঠিক কেমন ছিল, তার আঁচও কিছুটা মিলত। সে ক্ষেত্রে তদন্ত আগেই অন্য দিকে মোড় নিত।

বাপনের ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অবশ্য সেই নতুন মোড়-এরই হদিস দিচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE