Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কুণালকে চলতি মাসেই ডাকছে সারদা কমিশন

বারবার নিজের বক্তব্য জানাতে চেয়েছেন জেলবন্দি তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগও তুলেছেন। অবশেষে তাঁকে ডেকে পাঠানো হচ্ছে সারদা কমিশনে। সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক তছরুপে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বিচারপতি শ্যামলকুমার সেনকে শীর্ষে রেখে কমিশন গড়েছে রাজ্য সরকার।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৪ ০৩:২২
Share: Save:

বারবার নিজের বক্তব্য জানাতে চেয়েছেন জেলবন্দি তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগও তুলেছেন। অবশেষে তাঁকে ডেকে পাঠানো হচ্ছে সারদা কমিশনে।

সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক তছরুপে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বিচারপতি শ্যামলকুমার সেনকে শীর্ষে রেখে কমিশন গড়েছে রাজ্য সরকার। সেখানে নিজের কথা বলতে দেওয়ার জন্য দফায় দফায় আর্জি জানিয়েছেন সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত কুণাল। সম্প্রতি কমিশনের এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ওই অভিযুক্ত সাংসদকে তলব করা হবে। চলতি মাসেরই শেষ দিকে কুণালকে কমিশনে হাজির করানো হবে বলে শুক্রবার নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।

মাস চারেক আগেই কমিশনে হাজির হয়ে কিছু বলার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন কুণাল। এই নিয়ে কমিশনের কাছে দু’পাতার একটি চিঠিও পাঠান তিনি। সেই চিঠিতে অন্যান্য প্রসঙ্গের পাশাপাশি সাংসদ জানিয়েছিলেন, সারদা সংস্থার কাছে তিনি বেশ কয়েক লক্ষ টাকা পান। ওই টাকা আদায়ের ব্যাপারে কমিশনের হস্তক্ষেপ চান তিনি। গত ১ মে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর অফিসে পাঠানো গোপন চিঠিতেও কুণাল লিখেছেন, তিনি কমিশনের কাছে কিছু বলতে চান।

কমিশন সূত্রের খবর, গত ন’মাসে কমপক্ষে ৪০ বার কমিশনে ডাকা হয়েছে সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে। বার কয়েক এসেছেন সারদার অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়ও। অথচ এক দিনের জন্যও কুণালকে ডাকা হয়নি সারদা কমিশনে। সারদা-প্রধান সুদীপ্ত বারে বারেই কমিশনে জানিয়েছেন, সংবাদমাধ্যমের ব্যবসায় ঢোকার পর থেকেই তাঁর সংস্থার ভরাডুবি হয়েছে। সে-ক্ষেত্রে সুদীপ্ত সংবাদমাধ্যামের দায়িত্ব মূলত যাঁর হাতে দিয়েছিলেন, সেই কুণালকে কেন এত দিন কমিশনে ডাকা হয়নি, তা বুঝে উঠতে পারেননি অনেকেই। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছিলেন, “ডাকা হয়নি মানেই যে পরে ডাকা হবে না, তা তো নয়।”

এত দিন না-ডাকার পরে এখন কমিশন কুণালকে ডাকার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ফের বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত শুরু করার পরেই কি চাপে পড়ে কমিশন শাসক দলের ওই সাংসদকে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে?

রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘কুণালকে ডাকার ব্যাপারে কমিশন গড়িমসি করায় সিবিআইয়েরও সন্দেহ বাড়ছে।” সারদা কেলেঙ্কারি আদৌ কেন ঘটল, এর পিছনে কাদের হাত আছে এ-সব তথ্য জানার ক্ষেত্রে কুণালের বয়ান খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে মনে করেন ওই অফিসার।

তবে সিবিআইয়ের চাপেই যে কমিশন কুণালকে ডাকছে, তা মানতে চাননি চেয়ারম্যান। শ্যামলবাবু শুক্রবার বলেন, “কুণালকে ডাকার কথা আগেই ভাবা হয়েছিল। কমিশনের অনেক কাজ। এ বার কুণালকে ডাকা হবে।” কুণালকে কবে ডাকা হচ্ছে, তার দিনক্ষণ অবশ্য এখনও ঠিক হয়নি বলে কমিশনের কর্তারা জানিয়েছেন। “কমিশনের সব সদস্য হাজির থাকবেন, এমন একটা দিন দেখেই কুণালকে ডাকা হবে,” বলেছেন চেয়ারম্যান। কমিশন সূত্রের খবর, কমিশনের অন্যতম সদস্য অম্লান বসু ব্যক্তিগত কাজে বাইরে আছেন। এ মাসের শেষ সপ্তাহে তাঁর ফেরার কথা। তার পরেই কুণালকে কমিশনে হাজির করানো হবে।

কুণালকে ডাকার পাশাপাশি কমিশন আরও এক লক্ষ তিন হাজার আমানতকারীর টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সারদায় যাঁদের জমা টাকার পরিমাণ ১০ হাজার থেকে ২০ হাজারের মধ্যে, তাঁদের নামের তালিকা প্রায় প্রস্তুত। কমিশনের খবর, আগামী সপ্তাহ থেকেই ওই তালিকা ধরে ক্ষতিপূরণের চেক বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর কাজ শুরু হবে। এর জন্য রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কমিশন ইতিমধ্যেই প্রায় ১১০ কোটি টাকা পেয়েছে। এর আগে যে-সব লগ্নিকারীর জমা টাকার পরিমাণ ১০ হাজারের কম ছিল, তাঁরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। এই ধরনের চার লক্ষ আমানতকারীকে চেক দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

aup chattyopadhyay kunal ghosh saradha case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE