প্রতারিত-ই এ বার প্রতারণায় অভিযুক্ত!
বছর কয়েক আগে চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন দুই যুবক। প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পড়ে চাকরি তো জোটেইনি, উল্টে খোয়া যায় কয়েক লক্ষ টাকা। পুলিশ বলছে, সেই অভিজ্ঞতাই তাঁদের ঠেলে দেয় অপরাধের দিকে। শহরে ওই দুই যুবকের নেতৃত্বেই গজিয়ে ওঠে চাকরির নামে প্রতারণার নতুন এক চক্র।
পুলিশ জানিয়েছে, চাকরি সংক্রান্ত একটি প্রতারণার অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে অলোক কুণ্ডু ও শেখ রাজু নামে ওই দুই ছাত্রের খোঁজ মেলে। রবিবার রাতে শ্রীরামপুরের একটি বহুতল থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তার আগেই অলোক ও রাজুর চার শাগরেদকে গ্রেফতার করেছিল বেহালা থানা। তদন্তকারীরা জানান, অলোক শহরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতের এমএ। রাজু শহরের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এমবিএ পাশ করেছে। পুলিশের সন্দেহ, প্রতারিত হওয়ার রাগ মেটাতে গিয়েই অপরাধ চক্রে জড়িয়েছিলেন ওই দু’জন। তবে পুলিশের জেরায় অলোকের দাবি, প্রতারকদের পাল্লায় পড়ে প্রচুর দেনা হয়েছিল তাঁদের। টাকা শোধ করার জন্যই এই প্রতারণা চক্র ফেঁদেছিলেন।
অপরাধের শিকার হওয়া নায়কের অপরাধী হয়ে ওঠা সিনেমায় আকছারই দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে তার এমন উদাহরণ বিরল বলেই মনে করছে পুলিশ। তবে সিনেমার মতো বাস্তবে ওই দুই ছাত্র অবশ্য পালাতে পারেননি। বেহালা থানার পুলিশের হাতে পড়ে আপাতত শ্রীঘরেই ঠাঁই হয়েছে তাঁদের।
পুলিশ জানিয়েছে, নদিয়ার বাসিন্দা অলোকের বয়স ২৬ বছর। বছর সাতাশের রাজু বর্ধমানের পূর্বস্থলীর বাসিন্দা। জেরায় অলোক পুলিশকে জানান, বছর কয়েক আগে রেলের চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়ে কয়েক জনের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। চাকরির প্রতিশ্রুতি পেয়ে তাদের কয়েক লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু চাকরি জোটেনি। এর পরেই তাঁর আলাপ হয় রাজুর সঙ্গে। অলোক জানতে পারেন, রাজুও একই ভাবে প্রতারিত হয়েছেন।
তদন্তকারীরা জানান, বছরখানেক ধরে অলোক ও রাজু এই চক্র চালাচ্ছিলেন। এ কাজে আরও কয়েক জনকে নিয়োগও করেছিলেন তাঁরা। চাকরি দেওয়ার নামে বিভিন্ন যুবক-যুবতীর থেকে মোটা টাকা নেওয়া হত। প্রাথমিক তদন্তে এখনও এই চক্রের সঙ্গে সরকারি অফিসারদের কোনও যোগসাজশ পায়নি পুলিশ।
কী ভাবে ধরা পড়ল এই চক্র? পুলিশ জানিয়েছে, আশিস ঘোড়ুই নামে বেহালার এক যুবককে স্বাস্থ্য দফতরে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় এক লক্ষ টাকা নিয়েছিল এই চক্রটি। এমনকী, চাকরিতে যোগ দেওয়ার নিয়োগপত্রও দেওয়া হয়। সেই কাগজ নিয়ে আশিস স্বাস্থ্য ভবনে যোগাযোগ করলে প্রতারণার কথা জানতে পারেন। এর পরেই বেহালা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, সন্দেশখালির বাসিন্দা সুদীপ দুয়ারি নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বইমেলায় আশিসের পরিচয় হয়েছিল। তার সূত্রেই এই চক্রের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ। সুদীপই আশিসের থেকে টাকা নিয়েছিলেন। পুলিশ সূত্রের খবর, সুদীপের সূত্র ধরে রহমান মণ্ডল, প্রসেনজিৎ ঘোষ এবং সুনীল দে নামে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। রহমান প্রাক্তন সেনাকর্মী বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। সুনীলের কাছ থেকেই অলোক ও রাজুর খোঁজ মেলে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রবিবার রাতে শ্রীরামপুরের ওই ফ্ল্যাটে হানা দেওয়া হয়। পাকড়াও করা হয় অলোক ও রাজুকে। উদ্ধার হয়েছে প্রচুর জাল নিয়োগপত্র, জাল রবার স্ট্যাম্প এবং চারটি ল্যাপটপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy