দক্ষিণবঙ্গের আকাশে মেঘ ঢুকেছিল তিন দিন আগেই। তার জেরে এ বার বৃষ্টির সম্ভাবনাও দেখছেন আবহবিদেরা! তাঁরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত একটি নিম্নচাপের প্রভাবেই কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ছে। শনিবার বিকেলে ও রাতে কিছু এলাকায় ছিটেফোঁটা বৃষ্টি মিলেছে। শনিবারের আবহাওয়া ও হাওয়া অফিসের এই আশ্বাসবাণীর পরে বৃষ্টি-ভাগ্য নিয়ে আশার আলো ছড়িয়েছে মহানগরের বাসিন্দাদের মনেও।
এ বছর গরমে বৃষ্টি-ভাগ্য মন্দই থেকেছে দক্ষিণবঙ্গের। এপ্রিল-মে মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টি মেলেনি। একটির বেশি কালবৈশাখী হয়নি শহরে। তার ফলেই গরমের দাপট বেড়েছে বলে আবহবিদেরা জানান। তিন দফায় মোট ১৩ দিন তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে কলকাতা। বৃষ্টির নিরিখে রাজস্থানের মরু এলাকার থেকেও অনেক পিছনে রয়েছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ।
আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, বৃষ্টি বা কালবৈশাখীর জন্য পরিমণ্ডলে পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় এ বছর বঙ্গোপসাগর থেকে সেই জলীয় বাষ্পের জোগান মেলেনি। উল্টে পশ্চিমাঞ্চল থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বয়ে এসেছে গরম হাওয়া বা লু। যার জেরেই এপ্রিল-মে মাসে জ্বালা ধরানো গরমে নাকাল হতে হয়েছিল কলকাতা ও লাগোয়া জেলার বাসিন্দাদের। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রতি বছরেই দু’-এক দিন মেলে। কিন্তু কলকাতায় এমন শুকনো গরমের দাপট শেষ কবে মিলেছে, তার কোনও নথি আবহাওয়া দফতরের কাছে নেই।
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, বুধবার রাতে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়। পরে তা শক্তি বাড়িয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়। তার জেরেই দক্ষিণবঙ্গে দুঃসহ গরমের পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। উপগ্রহ-চিত্র খতিয়ে দেখে আবহবিজ্ঞানীরা জানান, এ দিন বিকেল পর্যন্ত নিম্নচাপটি মধ্য বঙ্গোপসাগরে ছিল। রাত থেকে তা ওড়িশা-বাংলা উপকূলের দিকে এগোতে শুরু করেছে। তার ফলে রাতেও কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে বৃষ্টির খবর মিলেছে। এ দিন যাঁরা ইডেনে কলকাতা ও হায়দরাবাদের আইপিএল ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন, অল্পবিস্তর বৃষ্টির স্বাদ পেয়েছেন। মিলেছে দখিনা হাওয়াও।
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, মেঘলা আকাশের জন্য এ দিন কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ১ ডিগ্রি বেশি। রাতেও তাপমাত্রা অনেকটা নেমেছে। এ দিন রাত সাড়ে আটটায় শহরের তাপমাত্রা ছিল ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, আজ, রবিবার শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকবে।
আবহবিজ্ঞানীরা জানান, নিম্নচাপটি যত উপকূলের দিকে এগোবে, ততই দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ঢোকাবে সে। সেই জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়েই বৃষ্টির মেঘ তৈরি করবে। বস্তুত, দিন তিনেক ধরেই বাতাসে আর্দ্রতা মালুম হচ্ছে। এ দিন তার দাপট আরও কিছুটা বেড়েছে।
তবে কি এ বার বৃষ্টি-ভাগ্য খুলবে দক্ষিণবঙ্গের? আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানী গণেশকুমার দাস বলছেন, “রবিবার কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।” যদিও তার পরিমাণ নিয়ে সংশয় রয়েছে হাওয়া অফিসের অন্দরে। তাই বৃষ্টি-ভাগ্য নিয়ে এখনই কোনও সরাসরি মন্তব্যে নারাজ বিজ্ঞানীরা।
মৌসম ভবনের একটি সূত্র বলছে, সাগরে জলীয় বাষ্প কম থাকায় নিম্নচাপটির শক্তি বাড়বে না বলে মনে করা হচ্ছে। “সে ক্ষেত্রেও দক্ষিণবঙ্গের বৃষ্টি-ভাগ্য কতটা প্রসন্ন হবে, সংশয় রয়েছে।” মন্তব্য এক আবহবিদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy