মিলনমেলা থেকে সরানো হচ্ছে পচা আলু।
চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে! আলু পচলে লাগে এসি!
মিলনমেলায় খোলা হাওয়ায় পড়ে থেকে থেকে অধিকাংশ আলুর বস্তায় যখন পচন ধরেছে, তখন তা সংরক্ষণ করতে বাতানুকূল যন্ত্র (এসি) বসাতে উঠেপড়ে লেগেছে রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতর। অথচ দু’দিন আগে তারাই বলেছিল, খোলা হাওয়ায় আলু ভাল থাকবে। তেমন পরিস্থিতি হলে তখন এসি লাগানোর কথা ভাবা যাবে। হ্যাঙারে এমনিতেই বড় বড় এগ্জস্ট পাখা লাগানোর ব্যবস্থা আছে। খুব জরুরি হলে সেগুলো চালু করা যাবে। সরকারি অফিসারদের এই যুক্তিতে যে প্রভূত খাদ ছিল, বুধবার রাত থেকে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে প্রশাসন। তাই বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হ্যাঙারে এসি লাগানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কিন্তু তাতেও আলু কতটা সুরক্ষিত থাকবে, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন কৃষি বিপণন দফতরের অফিসারদের একাংশ।
কেন? তাঁদের বক্তব্য, হিমঘরে সাধারণ ভাবে ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আলু রাখা হয়। দিন-রাত একই তাপমাত্রা থাকে। মিলনমেলায় হ্যাঙারগুলির যা অবস্থা, তাতে কত এসি লাগালে ওই তাপমাত্রা পাওয়া যাবে, প্রশাসন সেই হিসেবনিকেশই করছিল দু’দিন ধরে। কারণ, একাধিক ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে কৃষি বিপণন দফতরের অফিসারেরা জানতে পারেন, প্রতিটি হ্যাঙারে কমপক্ষে ৩০টি এসি লাগালে ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ঠান্ডা পাওয়া যেতে পারে। এবং তার জন্য চারটি হ্যাঙারে এসি বাবদ খরচ পড়বে দৈনিক এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা। ঠিকাদারেরা প্রশাসনকে জানান, ৩০টি এসি লাগালেও সব একসঙ্গে টানা চালানো যাবে না। ফলে আদৌ ওই ব্যবস্থা ফলপ্রসূ হবে কি না, তা নিয়ে অফিসারদের সন্দেহ থেকে গিয়েছিল। কিন্তু আর কোনও ভাবে পচন রুখতে না-পেরে শেষ পর্যন্ত এসি লাগাতেই হল কৃষি বিপণন দফতরকে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মিলনমেলায় গিয়ে দেখা যায়, এক-একটি হ্যাঙারে ২৪-২৫টি এসি লাগানো হচ্ছে। বৃষ্টির মধ্যেই কাজ চলছে জোর কদমে। এসি বসানোর কাজে ব্যস্ত এক কর্মী জানান, বুধবার রাতে তাঁদের সংস্থাকে এই বরাত দেওয়া হয়। বলা হয়েছে, যে-করেই হোক, আজ, শুক্রবারের মধ্যে সব লাগিয়ে ফেলতে হবে। তাই ঝড়জলের মধ্যেই এসি লাগাতে হচ্ছে।
কিন্তু এই ক’দিনে সেখানে আলুর যে-হাল হয়েছে, তাতে খুব একটা আশা দেখছেন না ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, এটা আলুর গুদাম না মর্গ? কী ভাবে এখানে আলু ভাল থাকবে, তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। এই দুশ্চিন্তা যে খুব একটা অমূলক নয়, তার প্রমাণও মিলেছে এ দিন। মিলনমেলায় গিয়ে দেখা যায়, আলু পচে রস গড়াচ্ছে। পচা গন্ধে ভরে গিয়েছে চার দিক। লোক লাগিয়ে আলু বাছাইয়ের কাজ চলছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কলকাতা এবং আশপাশের জেলায় সরকার দ্রুত আলু পাঠানোর ব্যবস্থা করলেও মিলনমেলায় এখনও যে-পরিমাণ আলু মজুত রয়ে গিয়েছে, তার পচন রোধ করা বেশ কঠিন। মিলনমেলায় দাঁড়িয়ে এক কারবারি জানান, কোনও কোনও বস্তায় আলু পুরোপুরি পচে না-গেলেও তাতে ‘গ্যাস’ হয়ে গিয়েছে। ওই আলু কিনে দু’দিনও ঘরে রাখা যাবে না। তবু কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন বাজারে এ দিন ওই আলুই পাঠানো হয়েছে। পচা বলে ফিরেও এসেছে অনেক।
এ দিনও আলু কিনতে মিলনমেলায় এসেছিলেন বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যেরা। কিছু পুরসভার কর্মীরাও ছোট ট্রাক ভাড়া করে আলু কিনতে এসেছেন। কেউ ১০ বস্তা, কেউ বা ২০ বস্তা আলু কিনছেন। প্রতি বস্তা আলুর দাম ৬০০ টাকা। হাওড়ার এক ব্যবসায়ী বলেন, “সরকার বলেছে, ১৪ টাকায় আলু বিক্রি করতে হবে। তাই আমরা নিয়ে যাচ্ছি। বিক্রি হলে হবে, না-হলে ফেলে দেব। টাকা নষ্ট হলেও আমাদের কিছু করার নেই।”
সংরক্ষণের ঘরে বসছে এসি।
এ দিনও কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে জ্যোতি আলু ২০-২২ টাকা কিলোগ্রাম দরে বিকিয়েছে। সেটা মাথায় রেখে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের ৪৪ জন প্রতিনিধি কলকাতা পুর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত সদস্যেরা স্বীকার করে নিয়েছেন, অধিকাংশ বাজারেই আলুর দাম বেশ চড়া। কেন আলুর দাম কিছুতেই কমছে না, সেই বিষয়ে ওই সদস্যদের মতামত লিখিত ভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র-পারিষদ (বাজার) তারক সিংহ। এ দিন কলকাতার বিভিন্ন বাজারে সরকারি উদ্যোগে ১৪ টাকা কেজি দরে জ্যোতি আলু বিক্রি হলেও ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। আমজনতা ২০ টাকা দরে জ্যোতি এবং ২৪ টাকায় চন্দ্রমুখী আলু কিনে বাড়ি ফিরেছেন।
এই পরিস্থিতিতে এ দিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের সঙ্গে বৈঠক করে পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। মঙ্গলবার থেকে তাদের তিন দিনের ধর্মঘট করার কথা। কিন্তু সরকার ফের ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডে আলু রফতানির অনুমতি দেওয়ায় ওই ধর্মঘট হবে কি না, তা নিয়ে নতুন করে ভাবছেন ব্যবসায়ীরা। আগামী সোমবার এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনার পরে পরবর্তী কর্মসূচি জানানো হবে বলে জানিয়েছে সমিতি।
—নিজস্ব চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy