নিয়ম ভেঙে সুদীপ্ত সেনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা কিংবা সক্রিয় ভাবে সারদা-কর্তার ব্যবসা বাড়াতে সাহায্য করা এমন অভিযোগ ওঠায় এখন অসম পুলিশের কয়েক জন শীর্ষকর্তা সিবিআইয়ের নজরে রয়েছেন। সিবিআই গোয়েন্দাদের বক্তব্য, তদন্তে প্রাথমিক ভাবে সারদা-সহ বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে অসম পুলিশের একাংশের যোগসাজশের প্রমাণ মিলেছে। শুধু তাই নয়, সারদার বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে আগ্রহ দেখায়নি রাজ্য পুলিশের অর্থনৈতিক অপরাধ দমন শাখাও। সিবিআই জানতে পেরেছে, ব্যবসা শুরুর সময় থেকেই সুদীপ্তর নির্দেশে তাঁর সংস্থার ম্যানেজাররা অর্থনৈতিক দুর্নীতি দমন শাখার কয়েক জন কর্তাকে নিজেদের হাতে নিয়ে এসেছিলেন।
সিবিআই সূত্রের খবর, অসমে সুদীপ্ত সেনের বাড়বাড়ন্তের সময় রাজ্য পুলিশের ডিজি-র দায়িত্বে ছিলেন শঙ্কর বরুয়া ও জি এম শ্রীবাস্তব। এখন তাঁরা দু’জনই তদন্তকারীদের নজরে।
অসমের পাশাপাশি ত্রিপুরায় সারদার ব্যবসা ছড়ানোর ক্ষেত্রে শ্রীবাস্তবের সক্রিয় ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। অসমে তিনি বছর খানেক এবং ত্রিপুরায় সাড়ে চার বছর ডিজি পদে বহাল ছিলেন। বর্তমানে তিনি অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের নিরাপত্তা উপদেষ্টা। শ্রীবাস্তব অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। পাশাপাশি, শঙ্করবাবুর বাড়িতে ইতিমধ্যেই তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। শঙ্কর বরুয়া এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
সিবিআইয়ের সন্দেহের তির রাজ্যের আইজি (আইন শৃঙ্খলা) এস এন সিংহের দিকেও। অভিযোগ, সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পরও তাঁকে গ্রেফতার না-করে সব জেলার এসপিকে তাঁর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য লিখিত নোট পাঠিয়েছিলেন ওই আইজি। সিবিআই সূত্রের খবর, সারদার তরফে ২০১২ সালের ২৬ ডিসেম্বর এস এন সিংহের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়েছিল, অসমের সংবাদমাধ্যমে ভুয়ো খবর প্রকাশিত হওয়ায় সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠছে। লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত দিতে অসমে আসতে চান সুদীপ্ত। তাই পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা প্রয়োজন। তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি সব জেলার এসপিকে নোট পাঠান আইজি সিংহ। তাতে সারদার কর্ণধারকে নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে লেখেন, “বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।” এ নিয়ে এস এন সিংহের বক্তব্য জানার জন্য আনন্দবাজারের তরফে এসএমএস করা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, একমাত্র স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের এডিজির নির্দেশ পেলেই সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি কারও জন্য পুলিশি নিরাপত্তা বা ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর ব্যবস্থা করতে পারেন। রাজ্যে কাউকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র দফতরের সচিবের নেতৃত্বাধীন রাজ্য নিরাপত্তা কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন। এস এন সিংহের চিঠি প্রকাশ্যে আসার পর সুদীপ্তর ক্ষেত্রে কেন তার ব্যতিক্রম হল, তা দেখবে রাজ্য পুলিশ। কেন পুলিশের একাংশ সারদার প্রতি সদয় হয়েছিলেন, কেন বার বার অভিযোগ পেয়েও অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির কর্ণধারদের ধরা হয়নি তা-ও দেখছে সিবিআই।
সিবিআই সূত্রের খবর, ২০০৬ সাল থেকেই রাজ্যে অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। ২০১০-এ সারদার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হলেও অর্থনৈতিক অপরাধ দমন শাখা তৎপর হয়নি। সুদীপ্তকে জেরা করে সিবিআই জেনেছে, ২০০৯ থেকে তিন বছর ধরে ওই বিভাগের কয়েক জন কর্তাকে মোটা টাকা দেওয়া হয়। ২০১০ সালে ৮ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ অসমে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমতি না-থাকা অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু, তা মানা হয়নি। কেন? তা-ও খতিয়ে দেখছে সিবিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy