হারের কারণ ব্যাখ্যা করতে বসে ঘুরিয়ে দলের বিরোধী গোষ্ঠীর দিকে আঙুল তুলেছিলেন আসানসোলের তৃণমূল নেতা মলয় ঘটক। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর দাবি নস্যাৎ করলেন দলের আর এক নেতা তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে, আসানসোল কেন্দ্রে দলের হার নিয়ে তৃণমূলের কোন্দল আরও প্রকট হল।
মন্ত্রিত্ব খোয়ানোর পরে আসানসোলে ফিরে বৃহস্পতিবার মলয়বাবু হারের পিছনে যে চারটি কারণ দর্শান, তার মধ্যে ছিল মোদী-হাওয়া এবং জলসঙ্কটের জন্য পুরসভা এলাকায় ক্ষোভ। শুক্রবার আসানসোলের মেয়র তথা বিধায়ক তাপসবাবু এই দু’টি ব্যাখ্যাই উড়িয়ে দেন। তাঁর দাবি, “প্রাক্তন মন্ত্রী তাঁর মতামত জানিয়েছেন। তবে যে ভাবে আসানসোল পুরসভায় জলের সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই।” মোদী-হাওয়া প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “নরেন্দ্র মোদী তো শুধু আসানসোলে আসেননি। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এসেছিলেন। বিভিন্ন প্রান্তেই হাওয়া বয়েছিল। শুধু আসানসোলে এই ফল কেন হল?”
তৃণমূল সূত্রে খবর, আসানসোলে মলয়বাবু ও তাপসবাবুর দু’টি আলাদা গোষ্ঠী রয়েছে। লোকসভা ভোটে দলের তরফে আসানসোলের দায়িত্বে ছিলেন মলয়বাবু। দলীয় প্রার্থী দোলা সেনের হারের পরে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে তাঁর উপরে। মন্ত্রিত্ব ও দলের জেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয় তাঁকে। এর পরে কলকাতা থেকে ফিরে তড়িঘড়ি অনুগামীদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। জেলা তৃণমূলের একাংশের দাবি, হারের দায় যে তাঁর একার নয়, সম্ভবত এ কথা বোঝাতেই মলয়বাবু বিকল্প ব্যাখ্যা দেন। এমন সব কারণ দেখান যার কয়েকটির দায় বর্তায় দলের অন্য গোষ্ঠীর উপরে।
আসানসোল ও কুলটির জলপ্রকল্প না হওয়ার কথা তুলে ঘুরিয়ে ওই দুই পুরসভার কর্তাদের দায়ী করেছিলেন মলয়বাবু। কেন্দ্র টাকা অনুমোদন করার পরে আসানসোলে ২০০৭ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কিন্তু এখনও তা শেষ করতে পারেনি পুরসভা। কুলটিতে সময়ে প্রকল্প শেষ না হওয়ায় তা বাতিল করেছে কেন্দ্র। শহরবাসী এ সবের জন্য ক্ষুব্ধ বলে মলয়বাবুর দাবি। এ ব্যাপারে কুলটির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য করতে না চাইলেও তাপসবাবুর দাবি, “গত এক বছরে কোনও এলাকায় জলের জন্য অবরোধ হয়নি। পুরসভায় স্মারকলিপিও জমা পড়েনি। শহরে অনেক ওয়ার্ড আছে, যেখানে জলের কোনও সমস্যা নেই। তাহলে সেই সব ওয়ার্ডে আমরা পিছিয়ে পড়লাম কেন?” তিনি আরও বলেন, “এর পরেও এ সব কথা কেন উঠছে, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।”
মোদী-হাওয়া এ ভাবে তাঁদের এলাকায় আছড়ে পড়বে, তা বুঝতে ভুল হয়েছিলপ্রাক্তন মন্ত্রীর এই ব্যাখ্যাকেও কাঠগড়ায় তুলেছেন তাপসবাবু। জেলা তৃণমূলের এক নেতার মতে, মোদী-হাওয়ায় রাজ্যে শুধু আসানসোলেই দল কেন হারল, সে প্রশ্ন তুলে আসলে মলয়বাবুর উপরেই ভরাডুবির দায় চাপাতে চাইলেন মেয়র। কারণ, দলের তরফে ভোটের দায়িত্বে ছিলেন মলয়বাবুই।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোলে দলের হারের পিছনে অন্তর্ঘাত ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে বলে শীর্ষ নেতৃত্বের সন্দেহ। ফল বেরোনোর পরে দলের স্থানীয় নেতারা এ নিয়ে মুখ খোলেননি। কিন্তু পরপর দু’দিন মলয়বাবু ও তাপসবাবুর এই বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্যে সেই কোন্দলের চেহারাটা বেরিয়ে পড়ল। তৃণমূল সূত্রে খবর, মলয়বাবু শুক্রবার ফের কলকাতা গিয়েছেন। বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও এ দিন তিনি ফোন ধরেননি।
হারের কারণ খুঁজতে গিয়ে দলীয় কোন্দলকে ঢাল করার সময়ে কাল মলয় বলেন যে, বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন কিংবা তাঁর বিরুদ্ধে মদ্যপানের অভিযোগ তুলে মামলা করা ঠিক হয়নি। সেই স্বীকারোক্তি প্রসঙ্গে আজ বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র মন্তব্য, “মলয়বাবুর মতো নেতা আত্মসমীক্ষা করে স্বীকার করে নিয়েছেন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা ভুল হয়েছে। তাই মমতা প্রশাসনের উচিত আমার বিরুদ্ধে থাকা ভূয়ো অভিযোগগুলি খারিজ করে দেওয়া। তবে মলয়বাবুর ওই বক্তব্যের মধ্যে আমার জয়কে খাটো করার দুরভিসন্ধি থাকলেও থাকতে পারে।”
তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনের হারের পিছনে শিল্পাঞ্চল আসানসোল ও কুলটিতে দু’টি জলপ্রকল্প রূপায়িত না হওয়াকে দায়ী করেছেন মলয় ঘটক। এই প্রসঙ্গে বাবুল সুপ্রিয়ের বক্তব্য, “কুলটিতে পুর নির্বাচন আসন্ন। ওই এলাকার সাতটি বিধানসভার মধ্যে পাঁচটিতেই এগিয়ে ছিলাম। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কে বলতে পারে, কুলটি পুরসভা বিজেপির দখলে আসবে না? সে ক্ষেত্রে কুলটির জলকষ্টের সমস্যা মেটাবে বিজেপি পুর বোর্ড।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy