Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মন্দিরে যেতেন মদন-সুদীপ্ত, কর্তৃপক্ষ বলছেন চিনি না

ডায়মন্ড হারবার রোডের পাশে বিরাট এক মন্দির। পেল্লাই গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকতেই চার ধারে বৈভবের ছবি। গ্রানাইটে মোড়া সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই চোখ ধাঁধিয়ে যায় বেলেপাথরের স্থাপত্যে! দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে ঝাঁ চকচকে এই স্বামীনারায়ণ মন্দিরের অদূরেই সারদা গার্ডেন্স। বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা চালিয়ে প্রতারণার অভিযোগে যার মালিক সুদীপ্ত সেন আপাতত হাজতে।

বিষ্ণুপুর ডায়মন্ড হারবার রোডের উপর স্বামী নারায়ণ মন্দির। - নিজস্ব চিত্র

বিষ্ণুপুর ডায়মন্ড হারবার রোডের উপর স্বামী নারায়ণ মন্দির। - নিজস্ব চিত্র

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৪
Share: Save:

ডায়মন্ড হারবার রোডের পাশে বিরাট এক মন্দির। পেল্লাই গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকতেই চার ধারে বৈভবের ছবি। গ্রানাইটে মোড়া সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই চোখ ধাঁধিয়ে যায় বেলেপাথরের স্থাপত্যে!

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে ঝাঁ চকচকে এই স্বামীনারায়ণ মন্দিরের অদূরেই সারদা গার্ডেন্স। বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা চালিয়ে প্রতারণার অভিযোগে যার মালিক সুদীপ্ত সেন আপাতত হাজতে। সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে সিবিআই জানতে পেরেছে, সারদা গার্ডেন্স লাগোয়া এই মন্দিরেই এক কোটি টাকা দিয়েছিলেন সুদীপ্ত। তার সঙ্গে উঠে এসেছে রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রের নামও। অভিযোগ, বিষ্ণুপুরের বিধায়ক থাকার সময় থেকেই সুদীপ্তের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল মদনবাবুর। সেই সূত্রেই এই মন্দিরে সারদার টাকা ঢুকেছিল।

তবে সুদীপ্ত সেন তাঁদের কোটি টাকা দিয়েছিলেন কি না, তা অবশ্য রবিবার জানাতে পারেননি স্বামীনারায়ণ মন্দিরের কর্তৃপক্ষ। মন্দিরের প্রশাসক সতীশভাই রাওয়ালের বক্তব্য, “সুদীপ্ত টাকা দিয়েছিলেন কি না, মনে পড়ছে না। মন্দিরের নথি ঘেঁটে দেখতে হবে।” মদনবাবুকেও তিনি ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন না বলে দাবি সতীশভাইয়ের।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন, ওই মন্দিরের সঙ্গে মদনবাবুর যোগাযোগ আছে। ২০০৮ সাল থেকে তিনি নিয়মিত ওই মন্দিরে আসতেন। সুদীপ্তকেও মন্দিরে যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে বলে বাসিন্দাদের একাংশ জানায়। মন্দির লাগোয়া জনবসতির এক বাসিন্দা বলেন, “মন্দিরে ১ কোটি টাকা দেওয়ার বিষয়টা সকলের সামনেই হয়েছিল। মন্ত্রী ছিলেন, সুদীপ্তও ছিলেন।” তাঁরা আরও জানান, শুধু সুদীপ্ত-মদনই নন, আরও অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিরই ওই মন্দিরে নিত্য যাতায়াত রয়েছে।

মন্দিরের সঙ্গে যে প্রভাবশালী ও ধনী ব্যক্তিদের যোগাযোগ রয়েছে, তা চত্বরে ঢুকলেই বোঝা যায়। এক দিকে বিশাল পার্কিং লট। চার দিকে বাগান। মাঝে বিরাট মন্দির। পিছনে অফিস, ভক্তদের থাকার জায়গা।

বিরাট মন্দিরের সিঁড়ির পুরোটাই ঝকঝকে গ্রানাইট পাথরে মোড়া। ধাপে ধাপে পেরিয়ে মূল মন্দিরে পৌঁছতেই শুরু মার্বেলের মেঝে আর বেলে পাথরের স্থাপত্য। বিরাট বিরাট থামের গায়ে নানা দেবদেবীর ছোট ছোট মূর্তি। মন্দিরে কর্মরত এক ব্যক্তি জানালেন, মন্দিরের পিছনের অংশে এখনও কাজ চলছে। মন্দির চত্বরের কোনায় কোনায় বসানো সিসিটিভি ক্যামেরা। মন্দিরের উপরে দাঁড়ালেই চোখে পড়বে এক দিকে বিরাট ফাঁকা জমি। মাঝে মাঝে কয়েকটি বাড়ি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সেটাই সুদীপ্ত সেনের সারদা গার্ডেন!

বাসিন্দারাই জানালেন, বছর কয়েক আগেও মন্দিরের এই জৌলুস ছিল না। আধা তৈরি অবস্থায় পড়েছিল সেটি। ২০১০ সালে ফের কাজ শুরু হয়। বছর দুয়েকের মধ্যে গড়ে ওঠে মন্দিরটি। এলাকার এক বাসিন্দার দাবি, মন্দির নির্মাণের সময়ে তো বটেই, পরেও মদনবাবু আসতেন সেখানে।

ঘটনাচক্রে, শনিবার একটি বেসরকারি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মদনবাবুও ওই মন্দিরের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়েছেন। সারদা কেলেঙ্কারিতে ওই মন্দিরের নাম জড়ানোর ফলে মন্দির কর্তৃপক্ষ বিব্রত বলেও দাবি করেছেন পরিবহণ মন্ত্রী। বলেছেন, এই ঘটনা নিয়ে মন্দির কর্তৃপক্ষ তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। তা হলে সতীশভাই কেন বলছেন, রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রকে তিনি চেনেন না?

সতীশভাইয়ের বক্তব্য, “মন্দির প্রশাসনের কারও সঙ্গে মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকতে পারে। আমি এখানে নতুন এসেছি। আমি তাঁকে চিনি না। আমি আসার আগে মন্ত্রী এখানে এসেছেন কি না, তা জানা নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE