সিঙ্গুরের কৃষক বাজারে বাজেয়াপ্ত আলু। —নিজস্ব চিত্র
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের হস্তক্ষেপে অবশেষে সুর নরম করলেন রাজ্যের আলু ব্যবসায়ীরা।
১৪ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি এবং ভিন রাজ্যে আলু রফতানি বন্ধের সরকারি নির্দেশে প্রতিবাদে সোমবার থেকে তিন দিন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। কিন্তু তার ৪৮ ঘণ্টা আগে, শুক্রবার নিজাম প্যালেসে ওই সংগঠনের কর্তাব্যক্তিদের ডেকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের আবেদন জানালেন মুকুলবাবু। আর তার পরেই খানিকটা সুর বদল করলেন ব্যবসায়ীরা।
প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বরেণ মণ্ডল বলেন, “মুকুলবাবু ডেকেছিলেন। আলু ব্যবসায়ীরা কেন ধর্মঘট ডাকতে বাধ্য হয়েছেন তা ওঁকে বিস্তারিত জানিয়েছি। উনি আমাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করার অনুরোধ করেছেন। আজ, রবিবার বাঁকুড়ার কোতুলপুরে আমরা নিজেরা বৈঠক করে ধর্মঘট নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।” এর আগেও রাজ্যের বিভিন্ন সমস্যা মেটাতে হস্তক্ষেপ করেছেন মুকুলবাবু। প্রতিবাদ-আবেদনে কাজ না হলেও প্রতিবারই মুকুলের মধ্যস্থতায় রফা সূত্র মিলেছে। প্রসঙ্গত, ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে বাস মালিকদের ডাকা ধর্মঘটের আগেও একই ভাবে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুকুলবাবু। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠকে বসেও যেখানে বাস মালিকদের দাবি পূরণ হয়নি, সেখানে মুকুলবাবুর সঙ্গে বৈঠকের পরেই বাস ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। এ বার আলু ব্যবসায়ীদের ডাকা ধর্মঘট ঠেকাতেও ফের হস্তক্ষেপ করলেন মুকুলবাবু।
শুক্রবার গভীর রাতে আলু ব্যবসায়ীদের নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠান তৃণমূলের এই শীর্ষ নেতা। বরেণবাবুর কথায়, “মুকুলবাবু বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী ১ সেপ্টেম্বর পাহাড়ে যাচ্ছেন। ফেরার কথা ৪ তারিখে। তারপরে আলু ব্যবসায়ীরা যাতে তাঁদের অভাব-অভিযোগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি আলোচনার সুযোগ পান সেটা তিনি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।”
দলের তরফে মুকুলবাবু আলু ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট তুলে নেওয়ার আর্জি জানালেও ধর্মঘট ঠেকাতে রীতিমতো কোমর বেঁধেছে রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতর। নবান্নের এক কর্তা জানান, গত দু’দিনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩০-৩৫টি আলুভর্তি লরি বাজেয়াপ্ত করে সিঙ্গুরের কৃষক বাজারে রাখা হয়েছে। কাল, সোমবার থেকে ওই আটক আলু নিলাম করবে সরকার। কলকাতা-সহ আশপাশের জেলার দোকানিদের গাঁটের কড়ি খরচ করে নিজেদেরই দায়িত্বেই সেই আলু নিয়ে যেতে হবে বাজারে। কিন্তু শর্ত একটাই, ১৪ টাকার বেশি দামে কোনও মতেই ওই আলু বিক্রি করা যাবে না। এ দিনই সস্তায় আলু বিক্রির দাবিতে সিঙ্গুরে বিক্ষোভ দেখায় জেলা বিজেপি।
যদিও কৃষি বিপণন দফতর জানিয়েছে, রাজ্যে আলুর ঘাটতি নেই। এখনও ২৫ লক্ষ মেট্রিক টন আলু হিমঘরে মজুত আছে। তবু খোলা বাজারে প্রতি কেজি আলু ২২ টাকা দরে কেন বিক্রি হচ্ছে, তার সদুত্তর যদিও দিতে পারছে না প্রশাসন। আজও সস্তায় আলু বিক্রির দাবিতে সিঙ্গুরে বিক্ষোভ দেখায় জেলা বিজেপি। যদিও ১৪ টাকায় আলু বিক্রির নয়া ব্যবস্থায় রাজ্যের সাধারণ মানুষ কতটা লাভবান হবেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy