সারদা-কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে দেওয়ার পাশাপাশি শ্যামল সেন কমিশনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু তার পরেও ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার বিষয়টি সিবিআইয়ের ঘাড়েই চাপিয়ে দেওয়ার কৌশল নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার মুর্শিদাবাদের কান্দিতে এক জনসভায় মমতা বলেন, “সিবিআইকেই টাকা ফেরত দিতে হবে। না হলে এ বার মানুষ কংগ্রেস, বিজেপি ও সিপিএমের ঘরে গিয়ে টাকা ফেরত চাইবে। আমি সে দিনটার দিকে তাকিয়ে থাকব। আমার আর কোনও দায় রইল না।” মুখ্যমন্ত্রীর সুরে নবান্নে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও এ দিন একই কথা শুনিয়েছেন। বলেছেন, “এ বার সারদা কাণ্ডের ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চলে গেল।”
অথচ, সুপ্রিম কোর্ট তাদের নির্দেশে বলেছে, সিবিআই সারদা-কাণ্ডের তদন্ত করলেও শ্যামল সেন কমিশন নিজের মতোই কাজ করবে। মানুষের অভিযোগ শুনে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেবে। এমনকী, আইনের মধ্যে থেকে সারদা গোষ্ঠীর বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তি বিক্রিও করতে পারবে কমিশন।
এই পরিস্থিতিতে কমিশন কী করবে? যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বলছেন, সিবিআইকেই টাকা ফেরানোর দায়িত্ব নিতে হবে, সেখানে কমিশন কি সর্বোচ্চ আদালতের রায় মেনে চলবে? কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামল সেন বলেছেন, “আদালতের রায় হাতে না পেলে মন্তব্য করব না।”
কান্দির মতো বহরমপুরের প্রচারসভাতেও এ দিন ক্ষতিপূরণের বিষয়টি টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “আমার তো ভালই হল। আমি বেঁচে গিয়েছি। গরিব মানুষের টাকা ফেরত দিচ্ছিলাম। ওদের সহ্য হল না।”
সারদা সংস্থায় লগ্নি করে সর্বস্বান্ত মানুষকে সুরাহা দিতে গত বছরের ২৪ এপ্রিল ওই কমিশন গঠন করেছিল রাজ্য সরকার। তার জন্য ৫০০ কোটি টাকার পৃথক তহবিল তৈরির কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার দু-চার দিনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তেরা কমিশনে আবেদনপত্র জমা দিতে শুরু করেন। কমিশনের হিসেবে, এ পর্যন্ত ১৭ লক্ষ ৩১ হাজার মানুষ টাকা চেয়ে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। তার মধ্যে তিন লক্ষ ৯৫ হাজার জনের হাতে ১৬৬ কোটি টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। এ দিন নবান্নে অমিতবাবু বলেন, “আরও আড়াই লক্ষ ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা তৈরি হয়েছে। নির্বাচন আচরণবিধি চালু হয়ে যাওয়ায় তাঁদের টাকা দেওয়া যায়নি।”
সাংবাদিক বৈঠকের প্রথম দিকে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী এ কথা বললেও পরে তিনি ক্ষতিপূরণের টাকা বিলির দায়িত্ব কেন্দ্রের কোর্টেই ঠেলে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। ফলে সারদা-কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চলে গিয়েছে। কারণ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পরে তা নিলাম করে টাকা আদায়ের ক্ষমতা শুধু ওদেরই রয়েছে। কেন্দ্র নিশ্চয় প্রতারিতদের আশা পূরণ করবে।”
ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এক রকম রায় দিয়েছে, আর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী অন্য কথা বলছেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের ভবিষ্যত কী, তা নিয়ে সংশয়ে সর্বস্বান্ত মানুষগুলো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy