Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রায় শুনে স্তম্ভিত সব মহলই

চার্জশিট দিতে দেরি, সাক্ষ্যগ্রহণ, বারবার দিন পিছোনো— সব মিলিয়ে পারদ চড়ছিলই। শুক্রবার দুপুরে কাটোয়া ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক কাজী আবুল হাসেমের রায় শোনার পরে কার্যত স্তম্ভিত হয়ে যায় সব মহলই। যদিও অন্য সুর শোনা গিয়েছে শাসক দলের কারও কারও গলায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ০১:৫৭
Share: Save:

চার্জশিট দিতে দেরি, সাক্ষ্যগ্রহণ, বারবার দিন পিছোনো— সব মিলিয়ে পারদ চড়ছিলই।

শুক্রবার দুপুরে কাটোয়া ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক কাজী আবুল হাসেমের রায় শোনার পরে কার্যত স্তম্ভিত হয়ে যায় সব মহলই। যদিও অন্য সুর শোনা গিয়েছে শাসক দলের কারও কারও গলায়।

বিরোধী দলের নেতারা স্তম্ভিত। কেউ কেউ ওই মহিলার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কিত। কেউ কেউ হাইকোর্টে যাওয়ারও কথা বলছেন। জেলার বিশিষ্টজনেরাও রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। শাসক দলের কিছু নেতা-মন্ত্রী শুধু গাইছেন অন্য সুর। জেলার এক মন্ত্রী তো বলেই দিলেন, ‘‘আদালতের রায় এখনও আমি জানি না। এ নিয়ে মন্তব্য করতে পারব না।’’

২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কাটোয়া-আমোদপুর ন্যারোগেজ লাইনে ডাকাতি করতে এসে পাচুন্দি ও অম্বলগ্রাম স্টেশনের মাঝে মেয়ের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ট্রেন থেকে নামিয়ে নিয়ে এক বিধবা মহিলাকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছিল। ওই রাতেই ট্রেনে ডাকাতি ও ধর্ষণের দায়ের হয়েছিল। তারপর দুই মামলার আলাদা হওয়া, রাজ্য পুলিশের হাতে ধর্ষণের মামলার তদন্তের দায়িত্ব হস্তান্তর হয়। আট অভিযুক্তের মধ্যে মূল অভিযুক্ত রেজাউল মির্জা-সহ তিন জনকে পুলিশ গ্রেফতারও করে।

কিন্তু এ দিন সবটাই উল্টে গেল।

এই সংক্রান্ত আরও খবর...

• প্রমাণ নেই, কাটোয়া ধর্ষণে খালাস সকলেই

• আতঙ্কে আর ঘুম হবে না

সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, “রায়ের বিরুদ্ধে আমি ব্যক্তিগত ভাবে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হব। হাইকোর্ট ও কাটোয়া আদালতের আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ওই মহিলার সঙ্গে দেখা করে খুব তাড়াতাড়ি অনুমতি নেব।’’

তাঁর কথায়, ‘‘এক মহিলা টিআই প্যারেডে ও বিচারকের সামনে অভিযুক্তদের চিনিয়ে দেওয়ার পরেও কারও শাস্তি হল না দেখে আমি তো অবাক।”

ঘটনার তিন দিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৎকালীন ডিজি নপরাজিৎ মুখোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘সাজানো ঘটনা’। ওই মহিলার স্বামী সিপিএম করে বলেও কটাক্ষ করেছিলেন। যদিও তার বহু বছর আগেই মারা গিয়েছিলেন অভিযোগকারিণীর স্বামী।

সেই কথা তুলে এ দিন অঞ্জনবাবুর দাবি, “মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য পুলিশ তদন্ত ঠিক মতো না-ও করতে পারে। তৃণমূলের শাসন কালে সবই সম্ভব।”

অভিযুক্তদের শাস্তির চেয়ে আদালতে বিক্ষোভ দেখায় সিপিআই (এম-এল)। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য অশোক চৌধুরীও মনে করেন, “মুখ্যমন্ত্রীকে বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্যই একটি মহিলার লড়াইকে হারিয়ে দেওয়া হল। এর ফলে, আরও অনেক মহিলা হতাশায় ভুগবেন।”

‘অসিহুষ্ণুতা’র প্রশ্নে বিজেপি ও কংগ্রেস বিপরীত মেরুতে অবস্থান করলেও কাটোয়া-ধর্ষণ রায়ের প্রশ্নে তারা সহমত। এআইসিসি সদস্য সেলিম মোল্লা বলেন, “আমি এক কথায় বলতে পারি, এটা আমাদের সমাজের লজ্জাজনক ঘটনা হয়ে থাকল।” বিজেপির বর্ধমান পূর্বের সভাপতি রাজীব ভৌমিক বলেন, “সন্ত্রাসের রাজত্বে এর চেয়ে আমরা আর কী বা আশা করতে পারি।”

রায় শুনে মুখ খুলেছেন জেলার বিশিষ্টজনেরাও। বর্ধমান শহরের নাট্যকার দেবেশ ঠাকুর থেকে কলেজ শিক্ষক অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেন, “উচ্চ আদালতে যাওয়াটা সঠিক পথ। সদিচ্ছা থাকলে সরকারের সেটাই করা উচিত।”

রায় শোনার পরে সরকারি আইনজীবী যেখানে ক্ষুব্ধ হয়ে পদ থেকে সড়ে দাঁড়ানোর জন্য চিঠি দিয়েছেন, সেখানে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে বলে জেলা আইনজীবী মহলের একাংশও মনে করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE