Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

স্ত্রীকে দেখে কাঠগড়ায় কান্না সুদীপ্তের

এক বছর ধরে কখনও থানার লক-আপে কখনও বা জেলে কাটাচ্ছেন তিনি। ঝকঝকে চেহারা শুকিয়ে কাঠি। নিজের এই অবস্থায় মাঝেমধ্যে প্রকাশ্যেই চোখের জল ফেলতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। বুধবারেও আদালত কক্ষে দ্বিতীয় স্ত্রী পিয়ালিকে দেখে চোখের জল সামলাতে পারলেন না সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দু’হাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন তিনি। তাঁকে চোখের জল ফেলতে দেখে কান্না সামলাতে পারলেন না পিয়ালিও। কাঠগড়ার সামনের একটি বেঞ্চে বসে মুখে ওড়না চেপে মাথা নিচু করে কাঁদতে থাকেন তিনি।

নগর দায়রা আদালতে সুদীপ্তের স্ত্রী পিয়ালি (বাঁ দিকে) ও পুত্রবধূ প্রিয়াঙ্কা সেন। বুধবার স্বাতী চক্রবর্তীর তোলা ছবি।

নগর দায়রা আদালতে সুদীপ্তের স্ত্রী পিয়ালি (বাঁ দিকে) ও পুত্রবধূ প্রিয়াঙ্কা সেন। বুধবার স্বাতী চক্রবর্তীর তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০৪:৪৫
Share: Save:

এক বছর ধরে কখনও থানার লক-আপে কখনও বা জেলে কাটাচ্ছেন তিনি। ঝকঝকে চেহারা শুকিয়ে কাঠি। নিজের এই অবস্থায় মাঝেমধ্যে প্রকাশ্যেই চোখের জল ফেলতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে।

বুধবারেও আদালত কক্ষে দ্বিতীয় স্ত্রী পিয়ালিকে দেখে চোখের জল সামলাতে পারলেন না সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দু’হাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন তিনি। তাঁকে চোখের জল ফেলতে দেখে কান্না সামলাতে পারলেন না পিয়ালিও। কাঠগড়ার সামনের একটি বেঞ্চে বসে মুখে ওড়না চেপে মাথা নিচু করে কাঁদতে থাকেন তিনি। পিয়ালিকে সামলানোর চেষ্টা করেন সুদীপ্তের প্রথম পক্ষের ছেলে শুভজিতের স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা। শুভজিৎও তখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে।

সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত মামলায় সুদীপ্ত, শুভজিৎ ও পিয়ালি সেনকে এ দিন নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারক মহম্মদ মুমতাজ খানের এজলাসে হাজির করানো হয়েছিল। এঁদের মধ্যে পিয়ালি জামিন আগেই পেয়েছেন। তাঁকে বসানো হয় এজলাসের সামনের একটি বেঞ্চে। কালো-সবুজ ছাপের সালোয়ার-কামিজ পরা পিয়ালি কালো ওড়নায় মুখ ঢেকে বেঞ্চে বসেন। সাদার উপরে নানান রঙের কাজ করা সালোয়ার-কামিজ, বেগুনি-কালোর ওড়না জড়িয়ে প্রিয়াঙ্কা বসে ছিলেন তাঁর পাশেই। বেলা পৌনে ১টা নাগাদ সুদীপ্তকে আদালতের লক-আপ থেকে বার করে তোলা হয় কাঠগড়ায়। তাঁর পরনে ছিল সাদা ফতুয়া আর পাজামা। কিছু ক্ষণ পরে খয়েরি টি-শার্ট এবং কালো ট্রাউজার পরা শুভজিৎকে কাঠগড়ায় তোলা হয়।

পিয়ালির মুখোমুখি হতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সুদীপ্ত। দু’হাতে মুখ চেপে কিছু ক্ষণ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদেন তিনি। শুভজিৎও ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকেন স্ত্রীর দিকে। এর মধ্যে শুরু হয়ে যায় আদালতের সওয়াল-জবাব। নিজেদের সামলে নিয়ে চুপ করে তা শুনতে থাকেন সুদীপ্ত-পিয়ালি। শুনানি চলাকালীন সুদীপ্তকে কয়েক বার তাঁর ছেলের সঙ্গে নিচু স্বরে কথা বলতেও দেখা যায়। শুভজিৎও বাবাকে কিছু বলেন। প্রায় আধ ঘণ্টা শুনানি চলার পরে শুভজিতের জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন বিচারক। আগামী ১৪ মে পর্যন্ত তাঁকে ফের জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন তিনি।

আদালতের কাজ শেষ হওয়ার পরে সুদীপ্ত ও শুভজিৎকে নিয়ে যাওয়া হয় আদালতের লক-আপে। পিয়ালি ও প্রিয়াঙ্কা অন্য একটি ঘরে গিয়ে বসেন। সাংবাদিকেরা সেখানে পিয়ালির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করতেই বাধা দেন প্রিয়াঙ্কা। তিনি বলেন, “আমাদের কোনও প্রশ্ন করবেন না। মানসিক ভাবে আমরা দু’জনেই বিপর্যস্ত। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই আমরা।” কিছু পরে তাঁরা বেরিয়ে যান।

সুদীপ্ত ও শুভজিৎকে অবশ্য আদালতের লক-আপে রাখা হয় প্রায় সাড়ে ৩টে পর্যন্ত। তার পরে পুলিশের কড়া প্রহরায় সুদীপ্তকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এই সময়ে সুদীপ্তকে সারাদা কাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও উত্তর দেননি। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার পরে প্রিজন ভ্যানে জেলে নিয়ে যাওয়া হয় শুভজিৎকে।

সারদা কাণ্ডে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর সক্রিয়তার পরিপ্রেক্ষিতে ফের নড়েচড়ে বসেছে সল্টলেক পুলিশও। সুদীপ্তের দ্বিতীয় স্ত্রী পিয়ালি দীর্ঘদিন সল্টলেকে বসবাস করা সত্ত্বেও তারা তাঁকে গ্রেফতার করছিল না। ইডি সম্প্রতি তাঁকে এবং সুদীপ্তের প্রথম পক্ষের ছেলে শুভজিৎকে গ্রেফতার করার পরে সল্টলেক পুলিশ বুধবার রাতে সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে বিশ্বজিৎ রায় নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।

পুলিশ জানায়, সারদা-প্রধান সুদীপ্তের সঙ্গে বিশ্বজিতের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। সুদীপ্ত যখন দক্ষিণ কলকাতায় প্রোমোটিং শুরু করেন, বিশ্বজিৎবাবুর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা তখন থেকেই। একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বজিৎ সারদার কোনও পদে ছিলেন না। কিন্তু তিনি মাঝেমধ্যেই সুদীপ্তের সঙ্গে তাঁর অফিসে দেখা করতে যেতেন এবং যখন যেতেন, তখন সেই ঘরে অন্য কেউ থাকার সুযোগ পেতেন না।

সারদা তদন্ত শুরুর এক বছর পরে বিশ্বজিৎকে গ্রেফতার করা হল কেন?

সল্টলেকের পুলিশকর্তারা জানান, সারদার তদন্ত চলাকালীন বিশ্বজিতের নাম উঠে এসেছে। সারদা কাণ্ডে তাঁর কিছু ভূমিকার কথাও জানা গিয়েছে। তাই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, ইডি তদন্তে নামার পরেই সল্টলেক পুলিশ তড়িঘড়ি করে ফের তদন্তে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ইডি এর আগে সল্টলেকে একটি রাষ্টায়ত্ত ব্যাঙ্কে সুদীপ্ত-পিয়ালির লকারের খোঁজ পেয়েছিল। কিন্তু তারা সেই লকার খোলার আগেই সল্টলেক পুলিশ তড়িঘড়ি গিয়ে রাতারাতি সেটি খুলে তার ভিতরের গয়নাগাঁটি ও অন্যান্য জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করে। তার পরেই বিরোধী শিবির অভিযোগ তোলে, লকারটি যাতে আগে ইডি-র অফিসারদের কব্জায় হাতে চলে না-যায়, সেই জন্যই সল্টলেক পুলিশ তড়িঘড়ি করে সেটি খুলে ফেলে। বিশ্বজিৎকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রেও তারা একই কারণে তৎপরতা দেখিয়েছে। যদিও একটি সূত্র জানাচ্ছে, সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেটিং অফিস (এসএফআইও) এবং ইডি ইতিমধ্যে বিশ্বজিতের কাছ থেকে সুদীপ্ত ও সারদা সম্পর্কে অনেক তথ্য নিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saradha group piyali sudipto sen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE