সারদা-কাণ্ডে বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণের মুখে এ বার ভিন্ন সুর ধরা পড়ল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শাসক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের গলায়। পুরনো উদাহরণ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যখন সিবিআই তদন্তের যুক্তি নিয়েই প্রশ্ন তুললেন, তখন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা মুকুলবাবু ঘোষণা করলেন সিবিআই কেন, যে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে তাঁরা প্রস্তুত!
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ইডি সারদা-কাণ্ডে নতুন করে সক্রিয় হওয়ার পর থেকেই বিষয়টিকে অস্ত্র করেছে বিরোধীরা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শুক্রবারও সিবিআই তদন্ত চেয়ে শাসক দলের উপরে চাপ বাড়ান। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন, আদালত চাইলে সিবিআই তদন্ত হবে। কিন্তু এ দিন তারকেশ্বরে পুরনো অবস্থানে ফিরে তিনি সিবিআই তদন্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। আর এ দিনই বর্ধমানে মুকুলবাবুর মন্তব্যে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে!
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সিবিআই তদন্ত প্রসঙ্গে বলেছেন, “নন্দীগ্রামে নিখোঁজ মানুষগুলো এখনও ফেরেনি। সিবিআই দায়িত্ব নিয়ে কী করল? নেতাই, ছোট আঙারিয়া, সিঙ্গুর এখানেও সিবিআই এসেছিল। কিন্তু কী হল? আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, তখন জ্ঞানেশ্বরী (ট্রেন দুর্ঘটনা) করিয়ে দেওয়া হল। সিবিআই করেছিলাম ওখানে। কিন্তু তারা কিছুই করেনি।” পুরনো অনেক ঘটনাতেই যে যথাযথ তদন্ত হয়নি, তার উদাহরণ দিতে মমতা বলেন, “যখন এনডিএ-তে ছিলাম, ছোট আঙারিয়া নিয়ে খুব চেঁচিয়েছিলাম। জর্জ ফার্নান্ডেজ এসেছিলেন। কিন্তু কিছু করেননি। এখন আমাকে গালাগাল দেওয়ার খেলায় নেমেছে!”
এর সঙ্গেই সারদা-কাণ্ডে নিজেদের নির্দোষ বোঝাতে তৃণমূল নেত্রীর মন্তব্য, “চুরি করল কে, আর দোষ পড়ল কার ঘাড়ে! আমাদের দল এতটাই স্বচ্ছ, ওদের (সারদা) টাকার দরকার নেই। তবে তৃণমূলের দোষ ধরছো তো, চোখে সর্ষে ফুল দেখতে হবে!” বিরোধীদের প্রতি তাঁর আরও কটাক্ষ, “আমি লুকিয়ে কিছু করি না। আমি করে খাওয়ার জন্য রাজনীতিতে আসিনি। মিথ্যাও বলি না! সব চোরেরা এক হয়েছে। সব চোরেদের দল!”
তৃণমূল নেত্রী যখন এই কথা বলছেন, বর্ধমানের শ্যামসুন্দরে তখন মুকুলবাবুর বক্তব্য, “শুধু সিবিআই তদন্ত নয়, তার চেয়ে আরও বড় কোনও তদন্তের জন্য প্রস্তুত। তদন্তে যদি প্রমাণ হয়, তৃণমূল সারদার টাকা নিয়েছে, তা হলে রাজনীতি ছেড়ে দেব আমরা সকলে!” বর্ধমানের পানাগড়েও একই চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন মুকুলবাবু। টু-জি কেলেঙ্কারির জন্য কংগ্রেস এবং কয়লা ব্লক বণ্টনে অনিয়মের জন্য বাম নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দাগার পাশাপাশিই তাঁর কটাক্ষ, “ইডি-টা কে? চিদম্বরমের একটি অংশ। তুমি বড় বড় কথা বলছো! ১৬ মে-র পরে তোমার সরকার থাকবে না, তুমিও থাকবে না। সারদাতে তোমার বউ তো তিন কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছে!” কয়লা ব্লক বণ্টনের টাকা তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবুর মেয়ের বেসরকারি সংস্থা না সিপিএমের দলীয় তহবিল, কোথায় গিয়েছে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন মুকুলবাবু।
বুদ্ধবাবু অবশ্য এ দিনই কলকাতায় রাজ্য সরকারকে নিশানা করে বলেছেন, “একটা হাস্যকর প্রহসন চলছে চিট ফান্ড নিয়ে! এত টাকা গেল কোথায়? কারা লাভবান হল? প্রশ্নগুলো ঘুরে-ফিরে আসছে।” এক দিকে ধার করে উৎসবের পিছনে খরচ আর অন্য দিকে চিট ফান্ডের বাড়বাড়ন্ত এই অবস্থার কিছু প্রতিক্রিয়া ভোটের বাক্সে পড়বে বলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন।
বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী আবার অভিযোগ করেছেন, “ওরা (সিপিএম) তো সারদার বড়দা! বামফ্রন্টের অর্থমন্ত্রীর ভোটের প্রচার কার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকায় হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখুন! বুদ্ধবাবু, সারদা তো আপনার আমলেই তৈরি। তখন কি চোখ বুজে ছিলেন?” দিল্লিকে বিঁধে তাঁর মন্তব্য, “তখন কে ছিল কেন্দ্রে? চিদুদা, চিদম্বরমবাবু শুনুন! নর্থ ব্লকের কাছে আপনার নাকের ডগায় একটা কোম্পানি ৪৫ হাজার কোটি টাকা তুলেছিল।”
বর্তমানের এই যুক্তি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন। বুদ্ধবাবুর কথায়, “আমাদের সময়ে শুরু হয়েছে বলেই আমরা অপরাধী হয়ে গেলাম? যদি সেটাই মেনে নিই, সিবিআই তদন্ত করান। তারা তদন্ত করে দেখুক, কোথাকার টাকা কোথায় গিয়েছে।”
অশোকনগরে এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও বলেছেন, “সিবিআই তদন্ত হলে দিদির পাশে কেউ থাকবে না। সব পালাবে! আপনারা সীমান্তটা নজরে রাখবেন, যাতে কেউ পালাতে না পারে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy