Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

হাত ধরার বন্ধু এখন কে, বিতর্ক চড়ছে কংগ্রেসে

আগামী বিধানসভা ভোট মাথায় রেখে মিত্র-সন্ধানে নেমে বিতর্ক দানা বাঁধছে কংগ্রেসের অন্দরে! কয়েক মাস আগে লোকসভা ভোটে একা লড়ে তাদের হাতে-থাকা ৬টির মধ্যে চারটি আসন বাঁচাতে পেরেছে কংগ্রেস। কিন্তু সেই চার আসনই মালদহ এবং মুর্শিদাবাদে। এই দুই জেলার বাইরে বাকি রাজ্যে দলের ফল মোটেও আশাপ্রদ নয়। রাজ্য জুড়ে কংগ্রেস ৯.৬% ভোট পেয়েছে ঠিকই।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫২
Share: Save:

আগামী বিধানসভা ভোট মাথায় রেখে মিত্র-সন্ধানে নেমে বিতর্ক দানা বাঁধছে কংগ্রেসের অন্দরে!

কয়েক মাস আগে লোকসভা ভোটে একা লড়ে তাদের হাতে-থাকা ৬টির মধ্যে চারটি আসন বাঁচাতে পেরেছে কংগ্রেস। কিন্তু সেই চার আসনই মালদহ এবং মুর্শিদাবাদে। এই দুই জেলার বাইরে বাকি রাজ্যে দলের ফল মোটেও আশাপ্রদ নয়। রাজ্য জুড়ে কংগ্রেস ৯.৬% ভোট পেয়েছে ঠিকই। কিন্তু মালদহ-মুর্শিদাবাদের হিসাব বাইরে রাখলে অন্যান্য জায়গায় তাদের ভোটপ্রাপ্তির হার গড়ে ৬% ছাড়াচ্ছে না! এর উপরে আবার দলে শুরু হয়েছে ভাঙন। এই অবস্থায় দু’বছর পরের বিধানসভা ভোটে একা লড়াই করে বিরাট কিছু আশা করা যাবে না, বুঝতে পারছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাই এখন থেকেই শুরু হয়েছে সম্ভাব্য বন্ধুর খোঁজ। এবং সেখানেই বিতর্ক প্রবল!

প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ চান, পরিস্থিতির প্রয়োজনে বামেদের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথা ভেবে দেখা হোক। প্রতিষ্ঠান-বিরোধী যে ভোট এখন বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে ভাগ হচ্ছে, সেটাকে খানিকটা হলেও একজোট করা যাবে তা হলে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে শক্ত চ্যালেঞ্জও খাড়া করা যাবে অনেক ক্ষেত্রে। কিন্তু কংগ্রেসের রাজ্য নেতাদের অপর এক অংশের বক্তব্য, ২০০৪-এ কেন্দ্রে ইউপিএ-১ সরকারের আমলে বামেদের সমর্থন নিয়ে বাংলায় দলের বিশ্বাসযোগ্যতা ধাক্কা খেয়েছিল। এখন আবার সেই পথে হাঁটতে গেলে আরও ভরাডুবি হবে। তার চেয়ে সাম্প্রতিক অতীতের দৃষ্টান্ত মেনে তৃণমূলের হাতই আবার ধরার চেষ্টা হোক! বিজেপির মোকাবিলায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন বন্ধু খুঁজছেন। নানা রকম বার্তা পাঠাচ্ছেন। সেই সুযোগ কাজে লাগানো হোক।

দুই মতের প্রবক্তা নেতারাই নিজেদের মতো করে দিল্লির এআইসিসি নেতৃত্বের কাছে দরবার শুরু করেছেন। দিল্লিও এখন নানা সম্ভাবনার অঙ্ক ভেবেচিন্তে দেখছে। আর প্রদেশ স্তরে তীব্র হচ্ছে দ্বন্দ্ব! প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “যাঁরা প্রবল বাম-বিরোধী, তাঁরা চাইছেন তৃণমূলের সঙ্গে যাওয়াই ভাল। আর যাঁরা কট্টর তৃণমূল-বিরোধী, তাঁরা মনে করছেন প্রয়োজনে বামেদের হাত ধরতেও আপত্তি থাকা উচিত নয়।” প্রকাশ্যে অবশ্য এই নিয়ে দলের শীর্ষ নেতারা মুখ খুলতে নারাজ।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর তৃণমূল-বিরোধিতার কথা সুবিদিত। ভোটের ফল যা-ই হোক না কেন, দায়িত্ব নেওয়ার পরে তিনি তৃণমূল বিরোধিতার সুর আরও চড়িয়েছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে বলা হচ্ছে, “অধীর চৌধুরী যত দিন সভাপতি আছেন, তৃণমূলের সঙ্গে কোনও সমঝোতার চেষ্টা মেনে নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। দলের মধ্যে যাঁরা এ সব করার চেষ্টা করছেন, তাঁদেরও সুবিধা হবে না! তবে শেষ পর্যন্ত দিল্লি কোনও সিদ্ধান্ত নিলে অন্য কথা।” কংগ্রেসের একটি সূত্রের খবর, প্রদেশ সভাপতি হিসাবে অধীর নিজে থেকে কখনও তৃণমূলের সঙ্গে দোস্তির প্রস্তাব দেবেন না বুঝেই দলের একাংশ দিল্লির নেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন। তাতেই অধীরের সঙ্গে দলের রাজ্য নেতাদের একাংশের দূরত্ব বাড়ছে। দলত্যাগের ঘটনা তাতে আরও ইন্ধন জোগাচ্ছে।

যাঁরা বাম-বন্ধুত্ব চান, তাঁদের যুক্তি: তৃণমূল যে পথে চলছে, তাতে গোটা রাজ্যের সর্বনাশ হবে। বিরোধী দল ভাঙানো বা তাদের উপরে আক্রমণও বন্ধ হবে না। তৃণমূল যখন প্রধান শক্তিশালী দল, তখন তাদের বিরুদ্ধে জোট বাঁধাই সঙ্গত। কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান বিধায়কের কথায়, “রাজনৈতিক ভাবে আমরা থাকলে বামেরা সুরক্ষিত। আবার বাম থাকলে আমরাও থাকব। কিন্তু তৃণমূল থাকা মানে সকলের বিপদ!” দরকারে বামেদের সঙ্গে গেলে ধর্মনিরপেক্ষ ভোট ভাগাভাগি অনেকটাই আটকানো যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন। ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের গাজা নিয়ে এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মিছিলের মতো কর্মসূচিতে বামপন্থী ছায়া দেখাও যাচ্ছে। এই অংশের নেতাদের আরও প্রশ্ন, “সারদা কেলেঙ্কারিতে আকণ্ঠ ডুবে আছে যে দলটা, তাদের সঙ্গে হাত মেলানোর কথা আসছে কোথা থেকে! তার চেয়ে একা লড়া ভাল!”

আবার যাঁরা তৃণমূলের আশ্রয়ে ফিরে যেতে চান, তাঁদের যুক্তি: মমতার দল একই ঘরানার। তাঁর সঙ্গে সমঝোতা হলে ভাবনাচিন্তা একই থাকবে, কর্মীদেরও বিশেষ বেগ পেতে হবে না। বামেদের দিকে ভিড়লে যেটা সম্পূর্ণ উল্টো হবে। দলের এক অভিজ্ঞ বিধায়কের বক্তব্য, “সিপিএমের হাতে আমরা বছরের পর বছর রক্তাক্ত হয়েছি। কত কর্মী খুন হয়েছেন। তাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করলে কর্মীরা মানবেন না, ভোট আরও কমে যাবে!” এই অংশের নেতাদের আশঙ্কা, বামেদের সঙ্গে সমঝোতা হলে কংগ্রেসের ভোট ২-৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে!

এখন দেখার বিষয় হল, বিজেপি-র ভয়ে তৃণমূল ফের কংগ্রেসের সঙ্গে আসতে রাজি হয়ে যেতেও পারে। কিন্তু বামেরা কংগ্রেসের হাত ধরতে আদৌ রাজি হবে কি? এখনও পর্যন্ত তার কোনও লক্ষণ নেই। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের মন্তব্য, “যে যার মতো অঙ্ক কষছে! দেখাই যাক না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

congress pradesh congress sandipan chakrabarty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE