নানা সমস্যায় সাধারণ মানুষ থানার দ্বারস্থ হলে পুলিশ গা ঘামায় না, এমন অভিযোগ ভূরি ভূরি। এ বার সল্টলেক পুলিশের কাছে নানান চাপ ও হুমকি-ফোনের অভিযোগ জানিয়ে একই ধরনের অভিজ্ঞতা হল কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র।
সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে নামা ইডি নানা ধরনের হুমকি-ফোন আসছে বলে সল্টলেক কমিশনারেটে অভিযোগ করেছিল। সেই সব হুমকির তদন্তে যাতে সুবিধা হয়, তার জন্য হুমকি-ফোনের নম্বর এবং তার ঠিকানা চিহ্নিত করে একটি তালিকাও তুলে দেওয়া হয়েছিল ওই কমিশনারেটের হাতে। তা সত্ত্বেও পুলিশের তদন্ত এক চুলও এগোয়নি বলে অভিযোগ। এমনকী যে-সব নম্বর থেকে হুমকি-ফোন করা হচ্ছিল, সেগুলির কল-লিস্ট পর্যন্ত খতিয়ে দেখা হয়নি। পুরো বিষয়টি নিয়ে আশ্চর্য রকম নীরব সল্টলেক কমিশনারেটের কর্তারা। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও নীরবতায় ইডি হতবাক।
রাজ্য প্রশাসন যে সারদার আর্থিক কারচুপির তদন্তে সাহায্য করছে না, এমন অভিযোগ একাধিক বার উঠেছে। অভিযোগ করা হয়েছে ইডি-র তরফেই। সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু হওয়ার পরে রাজ্য পুলিশ দীর্ঘদিন ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে কোনও তথ্যই দেয়নি। তা নিয়ে ইডি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। শেষে আদালতের হস্তক্ষেপে ইডি-কে তথ্য দিতে বাধ্য হয় রাজ্য পুলিশ। এর পরে সল্টলেকের ব্যাঙ্কে সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের দ্বিতীয় স্ত্রী পিয়ালি সেনের লকার খুলতে গিয়ে ব্যর্থ হয় ইডি। কেননা সেই লকার সল্টলেক পুলিশের হেফাজতেই ছিল। এক বছর বাদে আচমকা তৎপর হয়ে ইডি-র আগে রাতারাতি ওই লকার খুলে ফেলে পুলিশ। একটি সূত্রের খবর, জেরায় পিয়ালি বলেছিলেন, ওই লকারে সারদার বিভিন্ন সংস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নথি ছিল। কিন্তু সল্টলেক পুলিশের দাবি, লকারে গয়না ছাড়া কিছুই ছিল না। ইডি ওই লকারের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে জেনে পুলিশ তড়িঘড়ি সেটি খুলল কেন, সেই প্রশ্ন উঠেছিল।
প্রশ্ন উঠছে হুমকি-ফোনের তদন্তে পুলিশের উদাসীনতা নিয়েও। ইডি-র অভিযোগ, হুমকি-ফোনের তদন্তে পুলিশের অসহযোগিতার চিত্রটাই ফের উঠে আসছে। ইডি-র সল্টলেক অফিসে একাধিক বার হুমকি-ফোন এসেছে। প্রতি বারেই হুমকি দেওয়া হয়েছে, সারদা তদন্ত বন্ধ না-করলে ‘দেখে নেওয়া’ হবে। ইডি-র এক অফিসার বলেন, “হুমকি-ফোনে মহিলা অফিসারদেরও রেয়াত করা হচ্ছে না। তাঁদেরও হুমকি দিয়ে বলা হচ্ছে, তদন্ত বন্ধ না-করলে দেখে নেওয়া হবে।” ওই অফিসার জানান, বারবার এই ধরনের ফোন আসতে থাকায় ইডি-কর্তারা বিষয়টি সল্টলেক কমিশনারেটে জানান। কোন কোন নম্বর থেকে হুমকি-ফোন আসছে, সেগুলিও চিহ্নিত করেন তাঁরা। ইডি সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত যে-সব হুমকি-ফোন এসেছে, তার বেশির ভাগই ল্যান্ডলাইন থেকে। সেই নম্বরগুলি সল্টলেক কমিশনারেটকে দেওয়া হয়েছে।
শুধু হুমকি-ফোনে চাপ সৃষ্টিই নয়। তল্লাশি অভিযানে গিয়েও হেনস্থার মুখে পড়েছেন ইডি-র তদন্তকারীরা। ইডি সূত্রের খবর, পিয়ালির বাগুইআটির বাড়িতে তল্লাশিতে যাওয়ার সময় এক দল লোক ক্রমাগত বিরক্ত করেছে তদন্তকারীদের। ইডি-র এক তদন্তকারী অফিসার জানান, তল্লাশির সময় এক দল লোক পাশ থেকে নানা ধরনের কটূক্তি করছিল। সল্টলেকে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে পিয়ালিকে নিয়ে তল্লাশি চালানোর সময়েও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রমেই বাড়তে থাকে হুমকি-ফোনের সংখ্যাও।
তার পরেই দিল্লিতে ইডি-র সদর দফতরে বিষয়টি জানানো হয়। সেখান থেকে ইডি-কর্তারা সল্টলেকের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে একটি চিঠি দেন। সেই চিঠিতে হুমকি-ফোনের কথা এবং তার বয়ানও উল্লেখ করা হয়েছে। পরে যে-সব ফোন থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, সেগুলির তালিকা, ঠিকানাও সরকারি ভাবে পাঠানো হয়েছে কমিশনারেটের অফিসে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সল্টলেক কমিশনারেটের কোনও কর্তাই ওই চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেননি। এমনকী কমিশনার রাজীব কুমারও এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy