বাম ২৫। তৃণমূল ১৪। বিজেপি ২। কংগ্রেস ১।
সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা ভোটে রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে কোন দল ক’টিতে বাজিমাত করল, তারই আর এক প্রস্ত হিসেব। নির্বাচন কমিশনই দিয়েছে এই তথ্য। তবে এ হল খণ্ডচিত্র পোস্টাল ব্যালট।
এক হিসেবে এই ফলাফলে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বেগের কারণ নেই। আবার আছেও। এমনিতে রাজ্যে শাসক দল ৩৪টি আসন দখল করেছে ঠিকই। কিন্তু পোস্টাল ব্যালটের ফলাফল বলছে, ভোট পরিচালনার কাজে যুক্ত ছিলেন যে সব সরকারি কর্মী, তাঁদের বড় অংশই মুখ ফিরিয়েছেন শাসক দলের থেকে।
সাধারণ ভাবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক এবং পুলিশ ভোট-প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন কাজে যুক্ত হন। তাঁদের নিয়োগ করে নির্বাচন কমিশন। ভোটের আগের দিনই তাঁদের সংশ্লিষ্ট কাজের জায়গায় চলে যেতে হয়।
তাই নির্বাচনের দিন তাঁরা নিজেদের বুথে ভোট দিতে পারেন না।
মূলত এঁরাই পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেন। কমিশন সূত্র জানাচ্ছে, গণনা শুরুর প্রথমে পোস্টাল ব্যালটই গোনা হয়। ইভিএমের ভোট গণনা শুরু হয় তার পরে।
সেই পোস্টাল ব্যালটের গণনাতেই দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের ২৫টি আসনে অন্য সব দলকে টেক্কা দিয়েছেন বাম প্রার্থীরা। কলকাতা দক্ষিণ, ঘাটাল, আরামবাগ, ব্যারাকপুরের মতো কয়েকটি আসনে বাম প্রার্থীরা শাসক দলের কাছে ধরাশায়ী হলেও পোস্টাল ব্যালটে কিন্তু তাঁরাই এগিয়ে। বিজেপি তাদের জেতা দু’টি আসন দার্জিলিং ও আসানসোলে পোস্টাল ব্যালটেও এগিয়ে। কংগ্রেস রাজ্যে চারটি আসন পেলেও পোস্টাল ব্যালটে তাদের আধিপত্য শুধুমাত্র বহরমপুরে (বাকি তিনটিতে এগিয়ে বাম প্রার্থীই)। বাকি ১৪টি আসনে এগিয়ে তৃণমূল।
পোস্টাল ব্যালটে এমন উলটপুরাণের নজির বাম আমলে দেখা যায়নি বলে প্রশাসনের একটি অংশের ব্যাখ্যা। তাঁদের মতে, গত তিন বছরের সরকারের কাজকর্ম যে কর্মীদেরই একটা অংশকে খুশি করতে পারেনি, পোস্টাল ব্যালটের ফল তারই প্রমাণ।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা মনে করেন, ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদল হলেও সরকারি কর্মীদের মধ্যে এখনও বামফ্রন্টের প্রভাব বেশি। তৃণমূলের কর্মী সংগঠনের এক নেতাও বলছেন, “সরকারি কর্মীদের মধ্যে আমাদের ছ’সাতটি সংগঠন রয়েছে। তারা এখনও ঐক্যবদ্ধ নয়। তাই প্রভাব বাড়ানো যাচ্ছে না।” তবে বিভিন্ন সরকারি কর্মী সংগঠনের নেতাদের একটা বড় অংশের মতে, এই ফলাফলের অন্যতম প্রধান কারণ হল, সরকারের প্রায় ৪২ শতাংশ বকেয়া মহার্ঘ ভাতা না দেওয়া।
কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি অনুমোদিত সরকারি কর্মী সংগঠন কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ-এর নেতা মলয় মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ক্ষমতায় আসার আগে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কর্মীদের যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পালন করেননি। তার ফলই মিলেছে পোস্টাল ব্যালটে। ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (নবপর্যায়)-এর নেতা সমীর মজুমদারের কথায়, “আমরাও রাজ্যে পরিবর্তনের পক্ষে ছিলাম। কিন্তু এই সরকারের কাজকর্মে আমরা হতাশ। এখন তো সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই অন্যায় ভাবে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে।”
পোস্টাল ব্যালটের ফল কী হতে পারে, আগে থেকে তা আন্দাজ করে কয়েক হাজার ভোটকর্মীকে পোস্টাল ব্যালট দেওয়াই হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন বাম প্রভাবিত কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা মনোজ গুহ। তাঁর দাবি, নির্বাচন কমিশনে বিষয়টি জানিয়েও লাভ হয়নি। মনোজবাবুর মতে, এই আমলে ‘অত্যাচারের’ সব চেয়ে ভুক্তভোগী সরকারি কর্মীরাই। তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে পোস্টাল ব্যালটে। তবে শাসক দলের কর্মী সংগঠনের নেতা মৃগেন মাইতির কথায়, “পোস্টাল ব্যালট মানে পুরোটাই রাজ্য সরকারি কর্মীদের ভোট নয়। তবু ফল কেন খারাপ হল, খোঁজ নিয়েই তা বিস্তারিত বলা যাবে।” এই ফলাফলের ব্যাখ্যা চাইতে আজ, বৃহস্পতিবার দলের কর্মী সংগঠনের কোর কমিটির নেতাদের বৈঠকে ডেকেছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy