মিনায় পূণ্যার্থীর ঢল।
দুপুরে খবরটা এসে পৌঁছনোর পর থেকেই পার্ক সার্কাসে রাজ্য হজ কমিটির দফতরের সব ক’টা ফোন কেবল বেজেই যাচ্ছে। ফোন আসছে মালদহ, বহরমপুর, দেগঙ্গা থেকে। অসমের শিলচর, ওড়িশার ভুবনেশ্বর থেকেও। রাজ্য হজ কমিটির সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় হজ কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান হাজি নুরুল ইসলাম প্রতিটি ফোন ধরে বিনীত ভাবে একটি কথাই জানাচ্ছেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের হজযাত্রীদের কেউই দুর্ঘটনার কবলে পড়েননি।’’ সৌদির ভারতীয় কনসুলেট সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, আহতদের মধ্যে অসমের দু’জন রয়েছেন।
হজযাত্রীদের পরিবারকে খবরাখবর দেওয়ার জন্য রাজ্য হজ কমিটির অফিসে বিশেষ কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। কন্ট্রোলরুমের টোল ফ্রি নম্বর ১৮০০৩৪৫৭১৫৫। হতাহতদের সবার পরিচয় না জানা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোলরুমটি খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন নুরুল সাহেব। রাজ্য হজ কমিটির এগজিকিউটিভ অফিসার মোতালেব আলি সর্দার বলেন, এ বার পশ্চিমবঙ্গ হজ কমিটির মাধ্যমে ১০ হাজার ৫৯০ জন হজে গিয়েছেন। তাঁদের কারও সম্পর্কেই কোনও খারাপ খবর আসেনি।
বোড়াল নতুনহাটের বাসিন্দা আব্দুল ওয়াহিদ মণ্ডল মক্কায় তাঁর দাদার সঙ্গে কথাও বলতে পেরেছেন। দাদা সৈয়দ মণ্ডল (৪৫) তাঁর মা সমিরন মণ্ডলকে (৬৫) নিয়ে হজে গিয়েছেন। ওয়াহিদ বলেন, ‘‘খবর পাওয়ার পর থেকেই যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিলাম। অবশেষে সন্ধ্যায় নম্বর লাগাতে পেরেছি। দাদা এবং মা দু’জনেই সুস্থ আছেন।’’ দেগঙ্গার আবদুল বারি বা মুর্শিদাবাদের খয়রুল শেখ অবশ্য রাত পর্যন্ত তাঁদের আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।
রাজ্য হজ কমিটির সদস্যেরা মনে করছেন, ওই দুর্ঘটনায় এখানকার কোনও হজযাত্রী থাকার সম্ভাবনা কমই। কেন? কমিটি কর্তাদের কথায়, রাজ্য থেকে যে সব হজযাত্রী গিয়েছেন তাঁদের মধ্যে তিন-চার জন করে এক-একটি দল করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি হজযাত্রীর মোবাইল নম্বর থাকে হজ কমিটির কাছে।
দুর্ঘটনার পর চলছে উদ্ধারকাজ। বৃহস্পতিবার।
কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সেই গ্রুপের কোনও না কোনও সদস্য সরাসরি দুর্ঘটনাগ্রস্তের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। দুর্ঘটনাগ্রস্ত পরিবার হজ কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। গ্রুপের কেউ রাজ্য হজ কমিটিকে ঘটনার কথা সরাসরি জানিয়েও দিতে পারেন। এ দিন তেমন কোনও ফোন দফতরে আসেনি।
তা ছাড়াও মোতালেব সাহেবের কথায়, ‘‘প্রতিটি দেশের হজযাত্রীদের কে কোন পথ দিয়ে যাবেন, তার একটি রূপরেখা আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে ভারতীয়দের থাকার কথা নয়। তবে কেউ কেউ নিজে থেকে ছিটকে সেখানে চলে যেতেও পারেন।’’ মৃতদের মধ্যে যে চার জন ভারতীয়কে এখনও অবধি শনাক্ত করা গিয়েছে, তাঁরা ওই ভাবেই দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে পড়েছিলেন কি না, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।
এখন কী ভাবে মক্কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে হজ কমিটি? কমিটির সদস্য ফারহাদ খান বলেন, ‘‘আমরা ফোন করে সব হজযাত্রীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’’ কমিটির অফিসে যে সব কর্মী রয়েছেন, তাঁদের কেউ কেউ ফোনে আর ই-মেলে যোগাযোগ করে চলেছেন সৌদি আরবে ভারতের কনসাল জেনারেলের অফিসের সঙ্গেও। কনসাল জেনারেল পি এস মোবারকই কমিটিকে জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই দুর্ঘটনার কবলে পশ্চিমবঙ্গের কেউ নেই। দুর্ঘটনার হালহকিকত জানিয়ে কনসালের অফিস কিছুক্ষণ অন্তর ফেসবুকে পোস্ট করছে। আর সেই বার্তা ডাউনলোড করে উদ্বিগ্ন আত্মীয়দের পাঠিয়ে দিচ্ছে কমিটি।
রাজ্য থেকে যত হজযাত্রী গিয়েছেন, তাঁদের খবরাখবর রাখার জন্য হজ কমিটির এক প্রতিনিধিও মক্কায় রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে যদিও সফল হয়নি কলকাতার দফতর। এক কর্মী সামনে কম্পিউটার খুলে বসে আছেন। সেখানে রাজ্যের হজযাত্রীরা যারা সৌদি আরবে গিয়ে ওখানকার ফোন নম্বর নিয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই নম্বর দেওয়া রয়েছে। সেখানেও ফোন করছেন কর্মীরা। কখনও রিং হয়ে যাচ্ছে। কখনও রিং হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার এঁদের কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করা যায়নি। বুধবার রাত পর্যন্ত হজ কমিটির কাছে যা খবর ছিল, সেই মোতাবেক অসুস্থ হয়ে বুধবারই এ রাজ্যের এক হজযাত্রীর মৃত্যু হয় মক্কায়। এ দিনের পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার সঙ্গে তার কোনও যোগ নেই বলে হজ কমিটি জানিয়েছে।
ছবি: পিটিআই।
এই সংক্রান্ত আরও :
পড়ুন: উল্টো পথে ঢুকে পদপিষ্ট, মৃত্যু ৪ ভারতীয়েরও
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy