আলিপুর আদালতে। —নিজস্ব চিত্র।
সিগারেট ছেড়েছেন অনেক দিন। তাই বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই টেনশন কাটাতে মদন মিত্রের সঙ্গী ছিল খয়ের ছাড়া মিঠেপাতার সাদা পান। বিকেল বেলা যখন আদালতের উদ্দেশে রওনা দিলেন, তখনও পকেটে সেই সাদা পান।
আদালতের রায় কী হতে চলেছে, তা নিয়ে এ দিন সকাল থেকেই উত্তেজনা মদনের বাড়িতে। টিভির সামনে আদালতের রায় শোনার জন্য বাড়ির সবাই উদ্গ্রীব হয়ে বসেছিলেন। আর ঘন ঘন পান খাচ্ছিলেন মদন। টিভিতেই জানতে পারেন, মন্ত্রিত্ব থেকে সরে গিয়েও শেষরক্ষা হয়নি!
জামিন খারিজের খবর শুনে গম্ভীর হয়ে যান মদন। চুপ করে বসে থাকেন বেশ কিছু ক্ষণ। টিভি দেখেই জানতে পারেন, সাত দিন সময় চেয়েও পাননি, এ দিনই আত্মসমর্পণ করতে হবে তাঁকে। বিকেল চারটে নাগাদ আলিপুর কোর্টের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। পরণে কালো কলার দেওয়া সবুজ পাঞ্জাবি আর সাদা পাজামা। তখনও হাইকোর্টের রায়ের কপি হাতে আসেনি। পরিবারের সদস্যদের কাছে এবং ঘনিষ্ঠ মহলে বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ আমি মানতে বাধ্য। এর আগেও তো আদালত আমাকে গৃহবন্দি থাকতে বলেছিল। সেই রায়ও আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি।’’
পড়ুন: মন্ত্রিত্ব ছেড়েও লাভ হল না, জেলেই যেতে হল মদন মিত্রকে
মদনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তাঁর স্ত্রী অর্চনা মিত্র। মদনও বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ। বুকে ব্যথা হচ্ছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশ মানতে বাধ্য।’’ অবশ্য আলিপুর আদালতের পথে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন মদন। রাজ্যের সদ্য-প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রীর দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের সব অভিযোগ মিথ্যা। তিনি বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের হাতে কিছু নেই। তাই মিথ্যে মামলা সাজানোর চেষ্টা করছে।’’ পাশাপাশি তিনি জানান, তাঁর ছেলের নামে
হুমকি দেওয়ার যে অভিযোগ উঠছে, তারও কোনও সারবত্তা নেই। তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে পাশ করে এখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পড়ছে। কাউকে হুমকি দেওয়া বা মারপিট করার ছেলে ও নয়। এ সব মিথ্যা অভিযোগ।’’
এ দিন জামিনের আবেদন খারিজ হতেই মদনের ভবানীপুরের বাড়ির সামনে ভিড় জমান বহু অনুগামী। তাঁদের অনেকেই আলিপুর আদালত পর্যন্ত তাঁর সঙ্গী হন। আদালত চত্বরে এ দিন কোনও বিশৃঙ্খলা না হলেও হতাশা ছিল মদনের অনুগামীদের মধ্যে। তাঁদের কেউ কেউ বলেন, ‘‘মানুষের আপদে-বিপদে সব সময় থেকেছেন মদনদা। তাঁর এই অবস্থা মন থেকে মেনে নিতে পারছি না।’’
হতাশ লাগছিল মদনকেও। তাঁর পদত্যাগপত্র এত দেরিতে গ্রহণ করা হল কেন— আগের রাতেই তা নিয়ে ঘনিষ্ঠদের কাছে কিছুটা আক্ষেপ করেছিলেন। কিন্তু প্রকাশ্যে যথেষ্ট সাবধানী। বললেন, ‘‘মন্ত্রী থাকাকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে এত স্নেহ ও আশীর্বাদ পেয়েছি, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। তবে শারীরিক কারণেই আমি অনেক দিন ধরে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে চাইছিলাম। উনি গত কাল সেটা গ্রহণ করেছেন।’’
পড়ুন: খাঁচায় ফিরল টাইগার, তৃণমূল নিস্পৃহই
এ দিন বিকেলে আলিপুর কোর্টে পৌঁছনোর পরে মদন মিত্রের আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় এবং নীলাদ্রি ভট্টাচার্য জানান, আদালতের নির্দেশ মেনে তাঁদের মক্কেল আত্মসমর্পণ করতে এসেছেন। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ের কপি তখনও পৌঁছয়নি। আলিপুর আদালতের এসিজেএম সৌগত রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘হাইকোর্টের রায় হাতে না পেলে আত্মসমর্পণ করাতে পারব না।’’
শুরু হল অপেক্ষা। মদনকে বসানো হল আলিপুর আদালতের বার লাইব্রেরিতে। আবার অপেক্ষা। আবার জেলে যাওয়ার জন্য। প্রায় সাড়ে ছ’ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরে এজলাসে মদনের ডাক প়ড়ল রাত সওয়া ১১টা নাগাদ। আদালত ১৪ দিনের জেল হেফাজতের সাজা শোনার পরে মদন মিত্রকে নিয়ে যাওয়া হয় আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। জেলে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলেন চিকিৎসক। তিনি পরীক্ষা করার পরে সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হল তাঁর পুরনো মন্দির ওয়ার্ডে। আপাতত সেখানেই থাকবেন মদন মিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy