Advertisement
০৫ মে ২০২৪

রাতে বিছানায় অ্যাসিড, ঝলসে গেলেন মা-মেয়ে

কিশোরী মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে শুয়ে ছিলেন মা। রাতে টিনের চালের ফাঁক দিয়ে অ্যাসিড ছুড়ে দেয় কেউ।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস ও সুস্মিত হালদার
হাঁসখালি শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২৯
Share: Save:

কিশোরী মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে শুয়ে ছিলেন মা। রাতে টিনের চালের ফাঁক দিয়ে অ্যাসিড ছুড়ে দেয় কেউ।

জ্বলে-পুড়ে যায় একাদশ শ্রেণিতে পড়া মেয়েটির মুখ থেকে কোমর। মায়েরও মুখের বাঁ দিক ও বাঁ হাতের অনেকটা ঝলসে গিয়েছে। দু’জনেই এখন কলকাতায় এনআরএসে ভর্তি।

এ বারের ঘটনা নদিয়া জেলার হাঁসখালির। কিন্তু প্রেমে প্রত্যাখ্যান থেকে পুরনো রাগ, অ্যাসিড ছোড়ার ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিকার মেয়েরা। এর আগে শুধু নদিয়ারই করিমপুর এবং চাকদহে অ্যাসিডে আক্রান্ত হয়েছেন মহিলারা। কিন্তু প্রাণঘাতী অ্যাসিড কী করে আমজনতার হাতে আসছে, তার সদুত্তর মিলছে না।

এ বার যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, হাঁসখালির গাজনা বাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে দক্ষিণপাড়ায় রাস্তার পাশে তাঁদের টিনের ছাউনি ও টিনের বেড়া দেওয়া ঘর। সরকারি প্রকল্পে তাঁদের পাকা বাড়ি হচ্ছে। সে কারণে উল্টো দিকে খালপাড়ে তাঁদের এই অস্থায়ী আস্তানা। ছাত্রীটির বাবা দিনমজুরি করেন। বড় ছেলে বনগাঁয় মিষ্টির দোকানে কাজ করে, সেখানেই মামার বাড়িতে থাকে। মেজো ছেলে বগুলা কলেজে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। মেয়েটি পড়ে গাজনা হাইস্কুলে।

সোমবার সন্ধ্যায় মা-মেয়ে খানিক দূরে ছাতিয়ানতলা পুজো মণ্ডপে যান। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ সেখান থেকে ফিরে খাওয়া-দাওয়া সেরে তাঁরা শুয়ে পড়েন। দরজার দিকে একটি চৌকিতে মা-মেয়ে, অন্য চৌকিতে বাবা। দুই ছেলেই ছিল বনগাঁয় মামার বাড়িতে।

রাত প্রায় একটা নাগাদ মা-মেয়ের চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় বাবার। তাঁর কথায়, “রাত ১টা নাগাদ আর্তনাদ শুনে উঠে দেখি, মেয়ে আর বৌ দরজা খুলে বাইরে নলকূপের দিকে ছুটছে। ওদের চৌকির দিক থেকে পোড়া গন্ধ বেরোচ্ছে। ছটফট করছিল দু’জনেই। নলকূপের জল ঢেলে জ্বালা কমানোর চেষ্টা করছিল।’’ রাতেই তাঁদের বগুলা হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁদের এনআরএসে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

কে ছুড়ল অ্যাসিড? উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়। বুধবার হাঁসখালি থানার পুলিশ এনআরএসে গিয়ে মা-মেয়ের সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের ধারণা, ত্রিকোণ প্রেম এবং তা নিয়ে অশান্তির জেরে এই অ্যাসিড-হামলা হয়ে থাকতে পারে।

স্থানীয় সূত্রে পুলিশ জেনেছে, ছাত্রীটির সঙ্গে স্থানীয় এক যুবকের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। দাদার বাতিল মোবাইল মেরামত করে নিয়ে লুকিয়ে ফোন করত মেয়েটি। কিন্তু বাড়িতে ধরা পড়ে যায়। এই নিয়ে অশান্তিও হয়। মেয়েটির বাবা বলেন, “আমি সারা দিন মাঠে কাজ করি। মেয়ের খোঁজখবর রাখতে পারি না। তবে এলাকার এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্কের কথা শুনে মেজো ছেলে বাড়িতে এসে মেয়েকে খুব বকাঝকা করেছিল। ওর ফোনটাও আছড়ে ভেঙে দেয়।’’

এরই মধ্যে এসে পড়ছে আর একটি নামও। তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, সম্প্রতি স্কুলেরই এক ছাত্র মেয়েটিকে প্রেম নিবেদন করছিল। সে সাড়া না দেওয়ায় উত্ত্যক্তও করছিল ছেলেটি। প্রতিহিংসার বশে সে-ই কিছু ঘটিয়ে বসেছে কি না, পুলিশ সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছে। যদিও ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘‘এলাকার এক যুবক ছাড়া অন্য কোনও ছেলের কথা আমরা জানতে পারিনি।”

পুলিশের ধারণা, দরজার উপরে থাকা ফাঁক দিয়েই ছাত্রীটিকে তাক করে অ্যাসিড ছোড়া হয়েছে। ফলে যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে সে যে ওই ঘর ভাল ভাবে চিনত, এ ব্যাপারে পুলিশ প্রায় নিঃসন্দেহ। পরিবার সূত্রে খবর, সহপাঠীদের অনেকেরই ওই বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াতও ছিল। মেয়েটির বাবা জানান, রাতে ঘরে কমজোরি বাতি জ্বলছিল। ফলে কে কোথায় শুয়ে আছে তা দেখা কঠিন ছিল না।

প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, সালফিউরিক অ্যাসিড ছোড়া হয়েছে, যা মূলত সোনার দোকানে লাগে। গাজনা বাজার ও আশপাশে একাধিক সোনার দোকান আছে। কিন্তু অ্যাসিড এ ভাবে যার-তার হাতে গেল কী করে, কার কাছ থেকে গিয়েছে তা পুলিশ চিহ্নিত করতে পারল না কেন, তার সদুত্তর মেলেনি। নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া শুধু বলেন, “আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

acid mother
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE