সচিন তেন্ডুলকর
এক হেডস্যারের আবেদনে সাড়া দিয়ে স্কুল ভবনের জন্য তিনি পাঠিয়েছেন ৭৬ লক্ষ টাকা।
আর এক হেডমাস্টারের আর্জিতে হস্টেলের জন্য বরাদ্দ করলেন ২০ লক্ষ টাকা।
তিনি— সচিন রমেশ তেন্ডুলকর। ফের পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি স্কুলের সঙ্গে জুড়ে গেল ‘লিটল মাস্টার’-এর নাম।
নারায়ণগড়ের গোবিন্দপুর-মকরামপুর স্বর্ণময়ী শাসমল শিক্ষানিকেতন গত বছর অগস্টে রাজ্যসভার সাংসদ সচিনের তহবিল থেকে স্কুলবাড়ির জন্য ৭৬ লক্ষ ২১ হাজার টাকা পেয়েছিল। বরাদ্দ অর্থে নতুন ভবনের কাজ শেষের পথে। সম্প্রতি সে খবর প্রকাশিতও হয়েছে।
এ বার জানা গেল, জেলারই গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকে আশুই পল্লিমঙ্গল বিদ্যাপীঠে আদিবাসী পড়ুয়াদের হস্টেল তৈরির জন্য টাকা দিয়েছেন সচিন। তাঁর বরাদ্দ করা ২০ লক্ষ টাকা এখনও স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে আসেনি। তবে গত ২৩ মার্চ জেলাশাসকের কাছে অর্থ বরাদ্দের খবর জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন মাস্টার ব্লাস্টার। তাঁর প্যাডে লেখা সেই চিঠির প্রতিলিপি পৌঁছেছে স্কুলেও। টেন্ডার ডেকে ঠিকাদার নিয়োগ করতে বলেছে জেলা প্রশাসন। অর্থাৎ হস্টেলের কাজ শুরু হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা।
নারায়ণগড়ের মতো এ ক্ষেত্রেও ‘মাস্টার স্ট্রোক’ হাঁকিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। ২০১৫-র ফেব্রুয়ারিতে গোপীবল্লভপুরের এই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়া তরুণকুমার চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘আমি বরাবর সচিনের ভক্ত। শিক্ষা সংক্রান্ত আর্জি হলে উনি কাউকে ফেরান না বলে শুনেছিলাম। বাস্তবেও তার প্রমাণ পেলাম।’’
গত নভেম্বরে তরুণবাবু যখন সচিনকে চিঠি লেখেন, তত দিনে নারায়ণগড়ের স্কুলটিতে লিটল মাস্টারের সাহায্য পৌঁছে গিয়েছে। তা অবশ্য জানা ছিল না তরুণবাবুর। তিনি শুধু জানতেন, রাজ্যসভার সাংসদরা চাইলে দেশের যে কোনও প্রান্তে উন্নয়নে টাকা দিতে পারেন। তাই শুধু সচিন নন, রাজ্যসভার সাংসদ অভিনেত্রী রেখাকেও চিঠি পাঠান তিনি। জানান, হস্টেল না থাকায় ক্লাসঘরে কষ্ট করে থাকতে হয় ৬০ জন আদিবাসী পড়ুয়াকে। চার মাসেই সাড়া দিয়েছেন সচিন। প্রধান শিক্ষক বলছেন, ‘‘অজ গাঁয়ের স্কুলে যে ওঁর মতো মানুষ এত দ্রুত সাহায্য করবেন ভাবিনি। ওঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। ’’
১,২৪০ জন পড়ুয়া নিয়ে চলা ১৯৭২ সালের এই উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলটি অবশ্য রাজ্য সরকারের সাহায্যও পেয়েছে। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি কৃষ্ণগোপাল সেনাপতি জানালেন, স্কুলভবনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। স্থানীয় বিধায়ক নয়াগ্রামের দুলাল মুর্মুও সাহায্য করেছেন। অভাব ছিল শুধু হস্টেলের। সচিনের সৌজন্যে তা-ও ঘুচতে চলেছে।
এই অর্থ বরাদ্দের কথা জেনে আনন্দে ডগমগ স্কুলের আবাসিক ছাত্র জগবন্ধু টুডু, মথ হেমব্রম, অবিনাশ হাঁসদা, সনাতন টুডুরা। তারা বলছে, ‘‘সচিনকে এত দিন টিভিতে দেখেছি। ওঁর টাকায় তৈরি হস্টেলে থাকব ভেবেই দারুণ লাগছে।’’
ইতিমধ্যে সচিনের ব্যক্তিগত সচিব স্কুলে ফোন করে জানতে চেয়েছেন, আর কোনও সমস্যা রয়েছে কিনা। এ বার গবেষণাগার, মেয়েদের শৌচাগার ও অতিরিক্ত স্কুল ভবন তৈরির জন্য আরও ৪৫ লক্ষ টাকা চেয়ে ফের সচিনকে চিঠি দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক তরুণবাবু। সচিনকে স্কুলে আমন্ত্রণও জানিয়েছেন তিনি।
তাঁর মতোই জেলার আর এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সচিনের কাছে পৌঁছেছেন জেনে বেজায় খুশি নারায়ণগড়ের স্কুলটির হেডস্যার উত্তমকুমার মহান্তি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘স্কুলের জন্য এই লড়াই সহজ নয়। তরুণবাবু সেটা পেরেছেন। গাঁয়ের এই সব অখ্যাত স্কুলের পাশে দাঁড়ানোয় সচিনকেও সেলাম।’’
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy