Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

নতুন নির্ঘণ্টের নির্দেশ, হাইকোর্টের রায় ঐতিহাসিক, বলল বিরোধীরা

বিচারপতি তালুকদারের এ দিনের রায়কে গণতন্ত্রের পক্ষে ঐতিহাসিক বলে আখ্যা দিয়েছে বিরোধীরা। যদিও রাজ্যের শাসক দল ও সরকারের দাবি, আসলে তাদেরই জয় হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:২৪
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটের নতুন নির্ঘণ্ট ঘোষণার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি সুব্রত তালুকদার শুক্রবার তাঁর রায়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে মনোনয়ন পেশের মেয়াদ বাড়িয়ে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে সরকার এবং বিরোধী দুই পক্ষই। রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরের সঙ্গে পরামর্শ করে কমিশন খুব শীঘ্রই ভোটের নতুন দিনক্ষণ ঘোষণা করবে বলে জানা গিয়েছে। তবে মে মাসের ১ তারিখ থেকে ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হওয়ার সম্ভাবনা আর কার্যত রইল না বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের মত।

মনোনয়ন পর্বে শাসক দলের সন্ত্রাস এবং পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনে হাইকোর্টে মূল মামলাটি দায়ের করেছিল বিজেপি। মনোনয়নের দিন বাড়ানো এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করাই ছিল তাদের মূল দাবি। পরে একই দাবি নিয়ে মামলায় যোগ দেয় অন্যান্য বিরোধী দল। গত ১১ এপ্রিল বিজেপি সুপ্রিম কোর্টে যায়। সুপ্রিম কোর্ট ভোট-প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে রাজি না হলেও বিরোধীদের অভাব-অভিযোগের সুরাহা করতে নির্দেশ দেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে।

সেই মতো ৯ এপ্রিল রাতে কমিশন মনোনয়ন পেশের সময়সীমা এক দিন বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু পরের দিন সকালেই সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেয় তারা। বিরোধীদের অভিযোগ, শাসক দল ও সরকারের চাপের মুখেই নতিস্বীকার করে কমিশন। এই বিষয়টি নিয়েও আদালতের দ্বারস্থ হয় তারা। ভোট-প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন বিচারপতি তালুকদার। সিঙ্গল বেঞ্চের সেই রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যায় তৃণমূল এবং নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ১৬ এপ্রিল ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার ও অরিন্দম মুখোপাধ্যায় মামলা বিচারপতি তালুকদারের এজলাসেই ফেরত পাঠান।

হাইকোর্টের নির্দেশ

• মনোনয়নের মেয়াদ বৃদ্ধি প্রত্যাহারের বিজ্ঞপ্তি খারিজ

• মনোনয়নের মেয়াদ বৃদ্ধিতে নয়া বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে

• ভোটের দিনক্ষণ ফের তৈরি করতে হবে কমিশনকে

• নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ উঠছে

পর্যবেক্ষণ

• ভোট প্রক্রিয়ায় রাজ্যের হস্তক্ষেপ বৈধ হলেও যে কারণ দেখানো হয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়

• নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারির ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের

গত মঙ্গলবার থেকে টানা তিন দিনের শুনানি শেষে এ দিন বিচারপতি তালুকদার তাঁর রায়ে, মনোনয়ন পেশের মেয়াদ বৃদ্ধি বাতিল করে কমিশনের জারি করা বিজ্ঞপ্তি খারিজ করে দিয়েছেন। রাজ্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রধান পক্ষগুলির সঙ্গে সঙ্গে আলোচনা করে মনোনয়ন পেশের দিন বৃদ্ধির বিজ্ঞপ্তি জারির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে বলেছেন, মনোনয়নের নতুন দিনক্ষণ স্থির করার পরে রীতি মেনে ভোট-প্রক্রিয়ায় অন্য দিনগুলি ঘোষণা করবে কমিশন। আদালতের নির্দেশ মেনে এ দিন রাত থেকেই কমিশন ও রাজ্য সরকারের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর।

বিচারপতি তালুকদারের এ দিনের রায়কে গণতন্ত্রের পক্ষে ঐতিহাসিক বলে আখ্যা দিয়েছে বিরোধীরা। যদিও রাজ্যের শাসক দল ও সরকারের দাবি, আসলে তাদেরই জয় হয়েছে। শাসক পক্ষের যুক্তি, বিরোধীরা ভোট বন্ধ করে দিয়ে চেয়েছিল, কিন্তু আদালত ভোটের পক্ষেই রায় দিয়েছে।

তবে বিরোধীদের দায়ের করা মামলা গ্রহণযোগ্য নয় বলে তৃণমূলের পক্ষ থেকে যে সওয়াল করা হয়েছিল, তা মানেননি বিচারপতি তালুকদার। তিনি তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছেন, মামলার যৌক্তিকতা ও সারবত্তা রয়েছে। বিচারপতি একই সঙ্গে বলেছেন, ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত আইনের ১৪১(১) ধারা অনুসারে অনুযায়ী রাজ্য সরকার ভোট প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতেই পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যে সব কারণ দর্শানো হয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। যে কোনও সময় নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করার ক্ষমতাও নির্বাচন কমিশনের আছে বলে মত দিয়েছে আদালত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE