গোলমাল সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাস অস্ত্র পুলিশের। নলহাটিতে শুক্রবার। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
চল্লিশ বছর আগে প্রথম বার পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে কারও হাতে ছিল না কিছু। তার পরে এই প্রথম এমন পঞ্চায়েত নির্বাচন দেখছে বাংলা। যখন বিরোধীদের হাতে একটাও জেলা পরিষদ নেই!
একে তো আগেই দখল হয়ে গিয়েছে সব। তায় ভোটে শাসক দলের সরকারি আহ্বান ‘বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত’ গড়ার! দলনেত্রীর আহ্বান শুনে নিয়ে আরও এগিয়েছেন পারিষদেরা। মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, তাঁর পূর্ব মেদিনীপুরে বিরোধীশূন্য করতে পারলে সেই পঞ্চায়েতকে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ থেকে পাঁচ কোটি টাকা করে দেওয়া হবে উন্নয়নের জন্য! বীরভূমের অনুব্রত (কেষ্ট) মণ্ডল বলে দিয়েছেন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ‘উন্নয়ন’কে ফাঁকি দিয়ে মনোনয়নে একটা মশাও যেন গলতে না পারে!
বিরোধীহীন পঞ্চায়েতকে একেবারে বিরোধীশূন্য করার তাগিদ থেকেই মনোনয়ন-পর্বে বেনজির তাণ্ডব দেখছে রাজ্য। কিন্তু মারতে হচ্ছে কাদের?
এই প্রশ্নের উত্তর গত কয়েক বছরের ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেই লুকিয়ে। জেলায় জেলায় প্রভাব এবং সংগঠন ক্ষীণ হয়েছে বাম ও কংগ্রেসের। আর সেই সময়ে ওই দুই দলের হাত থেকে যাবতীয় পুরসভা ও পঞ্চায়েতের বোর্ড দখল নিয়েছে তৃণমূল। রাজনীতির ধর্ম মেনে বিরোধী পরিসর যে হেতু শূন্য থাকে না, তাই দ্রুত সেই জায়গায় উঠে এসেছে বিজেপি। বিশেষত, গত লোকসভা ভোটের পর থেকে। কেন্দ্রীয় শাসক দলের আশ্রয়ে গেলে অন্তত বাঁচার নিরাপত্তাটুকু পাওয়া যাবে, এই আশায় গেরুয়া শিবিরের ছাতার তলায় গিয়েছেন বাম ও কংগ্রেসের বহু কর্মী। সেই সঙ্গে মেরুকরণের হাওয়ায় আরও বেড়েছে বিজেপির প্রতাপ। লোকলস্কর এবং পকেটের জোরে এ বারের পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন-পর্বে বিরোধীদের মধ্যে এগিয়ে তারাই। এবং তাদের রুখতে মরিয়া তৃণমূলও। যেখানে যতটা বাম-কংগ্রেস আছে, তাদের জন্যও বরাদ্দ একই দাওয়াই। মার!
আরও পড়ুন: মনোনয়ন সুষ্ঠু করতে বলল কোর্ট
এর সঙ্গে ঘরের ভিতরে তৃণমূলের কাঁটা আবার তৃণমূলই! পদ সীমিত, আসন নির্দিষ্ট কিন্তু টিকিটপ্রত্যাশী অজস্র। কোথাও আরাবুল ইসলাম, নানু হোসেন, সওকত মোল্লারা একে অপরের বিরুদ্ধে বাঁশ-বোমা নিয়ে লড়াই করছেন। কোথাও রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, পার্থপ্রতিম রায়ের অনুগামীদের মধ্যে গুলি-বোমার যুদ্ধ হচ্ছে। কোথাও আবার বিপ্লব মিত্রের প্রতিপক্ষ অর্পিতা ঘোষের লোকজন। প্রতি জেলাতেই কোনও না কোনও বিক্ষুব্ধ শিবির উদ্বেগে রাখছে শাসক দলকে। তার জেরেও বাড়ছে হিংসা।
সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র বা কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীরা কেউ দাবি করছেন না যে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাঁরা তৃণমূলকে সর্বত্র ভয়ঙ্কর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলে দিতেন! কিন্তু অধীরবাবুর ক্ষোভ, ‘‘আগে বিরোধীরা কিছু জেলা পরিষদ, কিছু আসন পেত। এখন মনোনয়নের অধিকারও বিরোধীদের নেই!’’ সূর্যবাবু বলছেন, ‘‘বিরোধীরা তো বটেই, তৃণমূলের সকলেও নিরাপদ নন!’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, ‘‘নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে! তবু ময়দানে আমরা আছি।’’
বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগকে ‘লোকদেখানো’ আখ্যা দিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, ‘‘উন্নয়নের সুফল পেয়ে মানুষ আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই।’’ বাংলা শুনছে এবং ভাবছে, তা হলে আর হিংসা কেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy