Advertisement
০৪ মে ২০২৪
West Bengal News

ফার্স্ট বয় কেষ্ট! মনোনয়ন শেষের আগেই জেলা পরিষদ তৃণমূলের

৪২ আসনের জেলা পরিষদ। বিজেপি প্রার্থী দিতে পেরেছে ১টি আসনে। বাম-কংগ্রেস তা-ও পারেনি।

গ্রাফিক: অর্ঘ্য মান্না।

গ্রাফিক: অর্ঘ্য মান্না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ১৬:০৫
Share: Save:

মনোনয়ন পর্ব শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয়ে গেল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিপুল জয় পাওয়ার খেল। প্রথম পুরস্কার অবশ্যই পাচ্ছেন অনুব্রত মণ্ডল ওরফে ‘কেষ্টদা’। কেষ্টর জেলা বীরভূমে জেলা পরিষদ দখল নিয়ে কোনও লড়াই-ই নেই আর। জেলা পরিষদের একটি মাত্র আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে বিজেপি। বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস তা-ও পারেনি। সোমবার যে ভাবে ঘিরে ফেলা হয়েছে গোটা জেলার প্রায় সব ব্লক এবং এসডিও অফিস, তাতে বিরোধী শিবির থেকে আর মনোনয়ন জমা পড়ার সম্ভাবনাও নেই।

বীরভূম জেলা পরিষদে আসন সংখ্যা ৪২টি। সব আসনেই তৃণমূলের প্রার্থীরা রয়েছেন। বিজেপি ১টি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে। বাকি ৪১টি-তে পদ্মফুল অনুপস্থিত। জানালেন বীরভূমের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি পর্যবেক্ষক সায়ন্তন বসু। কংগ্রেস এবং বামেরা কোনও আসনেই প্রার্থী দিতে পারেনি বলেও সায়ন্তনবাবু জানালেন।

জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মিও একই কথা বললেন। বিজেপি কোন আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে, জানা নেই জিম্মির। তবে তাঁর নিজের দল যে শেষ পর্যন্ত জেলা পরিষদের ১টি আসনেও মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি, সে কথা জিম্মি জানেন। বললেন, ‘‘বিডিও এবং এসডিও অফিসগুলো সকাল থেকে যে ভাবে ঘিরে রাখা হল, ভারত-পাকিস্তান বর্ডারেও ততটা নিরাপত্তা থাকে না।’’

আরও পড়ুন: গুলি-বোমা, পুলিশকেও মার! শেষ দিনেও তাণ্ডব জেলায় জেলায়

রাজ্য নির্বাচন কমিশন যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, সেই অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় সোমবার দুপুর ৩টেয় শেষ হয়ে গিয়েছে। আগামী কয়েক দিন শুধু মনোনয়ন প্রত্যাহার করা যাবে, জমা আর দেওয়া যাবে না। অতএব ৪২ আসনের বীরভূম জেলা পরিষদের ৪১টিতে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর কেউ নেই। ১টি আসনে বিজেপি প্রার্থী রয়েছেন। প্রত্যাহার করানো না হলে, ওই আসনে তিনি লড়বেন। তবে মনোনয়নই যখন দিতে দেওয়া হয়নি, তখন ভোটের দিনে বিজেপি প্রার্থীকে ওই ১টি আসনে ভোট পেতে দেওয়া হবে, এমন আশা বিজেপির কট্টর সমর্থকরাও করছেন না।

২২টি আসন পেলেই বীরভূম জেলা পরিষদ দখল করা যায়। তৃণমূল মনোনয়ন পর্বেই ৪১টি আসন পাওয়া নিশ্চিত করে ফেলেছে। অবশিষ্টটিও পেয়ে যাবে, সমস্যা হবে না, বলছে বিরোধী দলগুলি।

মনোনয়ন পর্বে গোটা বীরভূম জুড়ে এই রকম তীব্র সন্ত্রাসের ছবি দেখা গেল। ফল? ভোটের অনেক আগেই জেলা পরিষদ তৃণমূলের। —ফাইল চিত্র।

আরও পড়ুন: কালি লাগছে কার মুখে, প্রশ্ন তৃণমূলেই

সায়ন্তন বসু বললেন, ‘‘কী ভাবে সন্ত্রাস চালানো হল, কী ভাবে বিডিও অফিস-এসডিও অফিস ঘিরে রেখে বিরোধীদের মনোনয়ন আটকে দেওয়া হল, তা সবাই দেখলেন। আমাদের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছে। কমিশনকে প্রার্থীদের পাশে দাঁড়াতে হবে, সুপ্রিম কোর্ট সে নির্দেশ দিয়েছে। আমরা অপেক্ষায় রয়েছি। কমিশন কী করে দেখি। তার পর পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ভাবব।’’

সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বললেন, ‘‘এই রক্তাক্ত বাংলায় দাঁড়িয়ে একটা কথাই বলব, বিনাশকাল এসে গিয়েছে। বুদ্ধিনাশ হওয়া স্বাভাবিক।’’

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোনও নতুন ঘটনা নয়। বোর্ড বিরোধীশূন্য হয়ে যাওয়ায় বেনজির নয়। কিন্তু মনোনয়ন পর্ব শেষ হওয়ার আগেই জানা গেল যে, জেলা পরিষদ শাসক দল দখল করে নিয়েছে, এমন ঘটনা কোনও দিন ঘটেনি বাংলায়। অর্থাৎ অনুব্রত মণ্ডল ‘রেকর্ড’ গড়ে ফেললেন। রাস্তায় ‘উন্নয়ন’ দাঁড়িয়ে থাকা বা ‘মশারি’ টাঙিয়ে রাখার আসল তাৎপর্য কী, মনোনয়ন জমা দেওয়া শেষ হতেই তা স্পষ্ট হয়ে গেল ‘কেষ্টদা’র জেলায়।

বিজেপি নেতা রহুল সিংহ তীব্র আক্রমণ করেছেন তৃণমূলকে। তিনি বলেছেন, ‘‘বীরভূমে কলঙ্কজনক ইতিহাস রচিত হল।’’ অনুব্রত মণ্ডলের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘না-না, উনি ইতিহাসের কিছুই জানেন না। যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে, তাতে বিরোধীদের সঙ্গে কেউ নেই। উন্নয়নই বিরোধীদের বাধা দিয়েছে। আমি কাউকে বাধা দিইনি। কাউকে, মারধর করিনি। কোনও ফুটেজ দেখাতে পারবেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE