Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রজতকে আজ তলব সিবিআইয়ের

সারদা তদন্তে নেমে এ বার তৃণমূল ঘনিষ্ঠ রজত মজুমদারকে তলব করল সিবিআই। রজতবাবু রাজ্যের প্রাক্তন ডিজি। তিনি তৃণমূলের বীরভূম জেলার পর্যবেক্ষকও ছিলেন। কলকাতার তৃণমূল ভবনেই তিনি বসতেন। আজ, শনিবারই রজতবাবুকে সিবিআই দফতরে যেতে বলা হয়েছে।

১৪ অগস্ট। তাঁর পদ্মপুকুর রোডের বাড়িতে তখন হানা দিয়েছে সিবিআই। তলব পেয়ে তড়িঘড়ি বোলপুর থেকে ফিরলেন রজত মজুমদার।— ফাইল চিত্র।

১৪ অগস্ট। তাঁর পদ্মপুকুর রোডের বাড়িতে তখন হানা দিয়েছে সিবিআই। তলব পেয়ে তড়িঘড়ি বোলপুর থেকে ফিরলেন রজত মজুমদার।— ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৫৫
Share: Save:

সারদা তদন্তে নেমে এ বার তৃণমূল ঘনিষ্ঠ রজত মজুমদারকে তলব করল সিবিআই। রজতবাবু রাজ্যের প্রাক্তন ডিজি। তিনি তৃণমূলের বীরভূম জেলার পর্যবেক্ষকও ছিলেন। কলকাতার তৃণমূল ভবনেই তিনি বসতেন। আজ, শনিবারই রজতবাবুকে সিবিআই দফতরে যেতে বলা হয়েছে।

গত ১৪ অগস্ট একযোগে বহু জায়গায় তল্লাশি চালায় সিবিআই। সেই তালিকায় ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকারের (নিতু) মতো ছিলেন রজতবাবুও। সিবিআই-এর তল্লাশির কথা জেনে তড়িঘড়ি বোলপুর থেকে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে। এর ছ’দিন পর, বুধবার নিতুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠান কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারীরা। কারণ, তাঁর সিঁথির ফ্ল্যাট থেকে আটক নথিপত্রের সঙ্গে নিতুর বয়ান মেলেনি। বুধবারই জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

১৪ তারিখ রজতবাবুর পদ্মপুকুর রোডের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করে সিবিআই। ওই সব নথি আর রজতবাবুর বয়ানের মধ্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি থেকে গিয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। তার জেরেই প্রাক্তন ডিজি রজত মজুমদারকে দফতরে ডেকে পাঠিয়ে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।

তাঁকে সিবিআই-এর তলব নিয়ে রজতবাবু অবশ্য এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি বলেন, “আমি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলব না।” তবে গত ১৪ অগস্ট তাঁর ফ্ল্যাটে তল্লাশি অভিযান শেষ হওয়ার পরে রজতবাবুর মন্তব্য ছিল, “সারদার সঙ্গে কী ভাবে জড়িত ছিলাম, সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। আমি জানিয়েছি, ২০১১ সালের জুন থেকে ২০১২ সালের জুলাই পর্যন্ত উপদেষ্টা হিসেবে ছিলাম। চুক্তির কাগজ, ব্যাঙ্কের নথি, আয়কর রিটার্ন সিবিআইকে দিয়েছি।”

এ দিন রজতবাবু কিছু না বলতে চাইলেও বিরোধীদের অনেকেই বলছেন, সিবিআই ধাপে ধাপে প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছতে চাইছে। নিতুর পরে রজতকে তলব করায় সেটাই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাঁদের কারও কারও বক্তব্য, এই ‘কানদের’ মাধ্যমেই ‘মাথাদের’ কাছে যেতে চাইছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এই জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সেই পথটাই তৈরি করতে চাইছে তারা। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র শুক্রবার পুরুলিয়ায় বলেছেন, “শুধু কান টানলে হবে না। আমরা চাই এ বার মাথা আসুক।”

শুক্রবার সিবিআইয়ের দফতরে সন্ধির অগ্রবাল।
ছবি: রণজিৎ নন্দী।

সিবিআই অফিসে
সুদীপ্ত সেন। শুক্রবার।
—নিজস্ব চিত্র

সিবিআই সূত্রে শুক্রবার বলা হয়েছে, ক’দিনের মধ্যে আরও কয়েক জনকে তাদের দফতরে তলব করবে সিবিআই। এর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের এক মন্ত্রী এবং এক সাংসদ থাকতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছে তারা।

গত ১৪ অগস্ট রজতকে যে সব প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন তদন্তকারীরা, তার মধ্যে রয়েছে মার্কিন প্রবাসী বাঙালিদের একটি অনুষ্ঠানও। সিবিআই সূত্রের খবর, শুক্রবার সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে ফের লাস ভেগাসের ওই অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ ওঠে। সিবিআই-এর দাবি, সারদা-কর্তা তাঁদের জানিয়েছেন, সেই অনুষ্ঠানে একটি বাংলা সিনেমার প্রিমিয়ারের জন্য তৃণমূলের এক রাজ্যসভার সাংসদ এবং রজতবাবু তাঁর কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা নেন।

সিবিআই-এর আরও দাবি, লাস ভেগাসে প্রিমিয়ারের জন্য যত টাকা প্রয়োজন, তার কয়েক গুণ বেশি টাকা সুদীপ্তর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল। সিবিআই-এর দাবি, ওই তৃণমূল সাংসদই ওই বাংলা ছবির প্রয়োজক ছিলেন। রজতবাবুকে তাঁদের দফতরে ডেকে পাঠিয়ে সুদীপ্তর বয়ান কতটা ঠিক তা তাঁরা যাচাই করে নিতে চান বলে সিবিআই-এর এক তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন। প্রয়োজনে সুদীপ্ত সেন এবং রজতবাবুকে মুখোমুখি বসিয়েও জেরা করবে সিবিআই।

শুক্রবারও দিনভর ইস্টবেঙ্গল কর্তা নিতুকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই-এর তদন্তকারী অফিসারেরা। সিবিআই-এর দাবি, নিতুর সঙ্গে সুদীপ্তর যোগাযোগের প্রাথমিক মাধ্যম ছিলেন তাঁর এক আত্মীয়। ওই ব্যক্তি কর্মসূত্রে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত। পরে সুদীপ্ত এবং নিতুর সম্পর্ক জোরালো করতে প্রভাব খাটিয়েছিলেন তৃণমূলের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা। সিবিআই সূত্রের খবর, সুদীপ্ত ময়দানের কয়েকটি ক্লাবে টাকা ঢেলেছিলেন। এ কথা জানতে পেরেই নিতু তাঁর ওই আত্মীয়ের মাধ্যমে সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

বৃহস্পতিবার রাতে নিতুকে বিধাননগর (উত্তর) থানা এবং সুদীপ্ত সেনকে ইলেকট্রনিক কমপ্লেক্স থানার লক-আপে এনে রাখা হয়েছিল। এ দিন সকালে তাঁদের সেখান থেকে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই-এর দফতরে নিয়ে আসা হয়। সিবিআই সূত্রের খবর, সকাল থেকেই দু’জনকে আলাদা বসিয়ে দফায় দফায় জেরা করা হয়েছে। তাতে তাঁরা কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তির নামও বলেছেন। জেরায় উঠে এসেছে একাধিক ফুটবলারের নামও।

সিবিআই সূত্রের খবর, ভিন রাজ্যে নিতুর ব্যবসায়িক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক গোয়ানিজ ফুটবলারের নাম উঠে এসেছে। আরও কয়েক জন ফুটবলার ও ইস্টবেঙ্গল কর্মকর্তাও সারদা ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে তদন্তকারীদের দাবি। সিবিআই কর্তারা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ওই ফুটবলার ও ময়দানের কয়েক জন কর্তার সঙ্গে তদন্তকারীরা কথা বলেছেন।

সুদীপ্ত যে টাকা নিতুকে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন, সেই টাকা কোথায়, তার খোঁজ চালিয়েছেন তদন্তকারীরা। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, নিতু ওই টাকা বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। সিবিআই-এর একটি সূত্রে বলা হচ্ছে, পশ্চিম ভারতের এক ফুটবলারের সঙ্গে যৌথ ভাবে ব্যবসায় লগ্নি করেন নিতু। সেই ব্যবসা নিয়েও খোঁজখবর করা হচ্ছে। ওড়িশায় ও মধ্য কলকাতাতেও নিতুর বিনিয়োগের খবর পেয়েছেন তদন্তকারীরা।

সারদার সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের চুক্তি রূপায়ণে নিতুর ভূমিকা খতিয়ে দেখতে চান তদন্তকারীরা। গোয়েন্দারা জানান, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সংস্কার ও পরিকাঠামো উন্নয়নের বিস্তারিত জানতে চাওয়া হবে। ক্লাবের অন্যান্য স্পনসরের কাছেও এ ব্যাপারে তথ্য চাওয়া হয়েছে।

এ দিনই সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সাধারণ সদস্য ব্যবসায়ী সন্ধির অগ্রবালকে। সিবিআই সূত্রের খবর, নির্মাণ ব্যবসায় নিতু কোথায় লগ্নি করেছিলেন, তা জানার চেষ্টা হয় ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। ২০১১ সালে নিতুর মাধ্যমেই সন্ধির এবং তাঁর বাবা সজ্জন অগ্রবালের যোগাযোগ হয় সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CBI IPS officer Rajat Majumdar saradha case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE